দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে প্রাণহানির সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে মঙ্গলবার। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ফের ভাইরাসটির প্রকোপ টিকাদান কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনায় প্রাণহানি আবার বাড়ছে।

বিশেষ করে ভারত ও ব্রাজিলে। ভারতে সোমবার প্রথমবারের মতো দৈনিক আক্রান্ত লাখ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এর জন্য যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া অতিসংক্রামক নতুন ধরনকে দায়ী করছেন। এছাড়া লকডাউন ও অন্যান্য বিধিনিষেধ মানতে মানুষের অনীহাকেও এর জন্য দায়ী করছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বছরের মধ্যে এই ভাইরাস এত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিলেও এর ভয়াবহতাকে অনেকে এখনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

রয়টার্সের ট্যালি অনুযায়ী, প্রাদুর্ভাব শুরুর পর করোনার সংক্রমণে প্রাণহানি বিশ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল এক বছরের বেশি। এর পরের দশ লাখ প্রাণহানি হয়েছে মাত্র তিন মাসে। ফলে দেখা যাচ্ছে, এ বছরের শুরু থেকে ভাইরাসটি আরও প্রাণঘাতী হয়েছে।

বর্তমানে দৈনিক করোনায় প্রাণহানির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। এখন প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে যত কোভিড রোগী প্রাণ হারাচ্ছেন তার চারজনের একজন হলেন ব্রাজিলের বাসিন্দা। দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।

মহামারি করোনার প্রকোপে ব্রাজিলের এহেন করুণ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, দেশটি এখন খুবই ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। ব্রাজিলের গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এই চাপ তারা সামলাতে পারছে না।

সোমবার ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় কোনো দেশ হিসেবে গতদিন ভারতে এক লাখের বেশে মানুষের দেহে শনাক্ত হয়েছে ভাইরাসটির সংক্রমণ। দেশটিতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও গড়ে এখন ৫ শতাধিক।

ভারতের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য মহারাষ্ট্র সোমবার থেকে শপিং মল, সিনেমা হল, পানশালা, রেস্তোরাঁ ও ধর্মীয় প্রার্থনালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে জারি হয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ এবং সপ্তাহান্তে লকডাউন। রাজধানী নয়াদিল্লিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

অঞ্চলভিত্তিক প্রাণহানির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ইউরোপ। মহামারি করোনার সংক্রমণে অঞ্চলটির মোট ৫১ দেশে প্রায় ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ইউরোপে করোনায় মোট প্রাণহানির মধ্যে যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি ও জার্মানি— এই পাঁচ দেশে মারা গেছে ৬০ শতাংশ। চীন থেকে ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে প্রাদুর্ভাব ছড়ানো এই ভাইরাসে অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউরোপ।

করোনায় প্রাণহানিতে বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মহামারি করোনা এ পর্যন্ত দেশটির ৫ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; যা বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ। গত তিন সপ্তাহ ধরে বিশ্বে সংক্রমণ বাড়ছে। তবে দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত গতিতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে টিকা দেওয়া গেলে কিছু প্রাণহানি ঠেকানো যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ মানুষ টিকার কমপক্ষে এক ডোজ নিয়েছেন।

রোববার পর্যন্ত ৩৭ কোটির বেশি মানুষ করোনা টিকা কমপক্ষে একটি ডোজ নিয়েছেন, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গবেষণা সথ্য্য্তে তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা ‌‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’র বরাতে এ হিসাব দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

তবে, টিকা পাচ্ছে না অনেক গরীব দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য টিকা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করার জন্য অনুমোদিত কোভিড-১৯ টিকা আরও বেশি পরিমাণে দান করার জন্য উন্নত দেশগুলোকে অনুরোধ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া শীর্ষ সংক্রমিত ১০ দেশের মধ্যে ব্রাজিলে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৭, মেক্সিকোতে ২ লাখ ৪ হাজার ৪০০, ভারতে এক লাখ ৬৫ হাজার ৫৪৭, যুক্তরাজ্যে ১ লাখ ২৭ হাজার ১০৬, ইতালিতে ১ লাখ ১১ হাজার ১২৬, রাশিয়ায় ৯৯ হাজার ৪৩১, ফ্রান্সে ৯৭ হাজার ৫, জার্মানিতে ৭৭ হাজার ১৩৬ এবং স্পেনে ৭৫ হাজার ৭৮৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে করোনায়।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।