দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কঠোর লকডাউনেও ব্যাংকের সাথে সমন্বয় রেখে পুঁজিবাজার খোলা থাকবে বলে মন্তব্য করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত- উল- ইসলাম। তিনি দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের সাথে একান্ত আলোচনায় বলেন, ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে পুঁজিবাজার চালু রাখা হবে। ব্যাংকে লেনদেন সচল থাকলে বাজারেও লেনদেন অব্যাহত থাকবে। এ সিদ্ধান্ত আমরা আগেই নিয়ে রেখেছি।

তাই লকডাউনে পুঁজিবাজারের লেনদেন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত বা বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু থাকলে পুঁজিবাজারও চালু থাকবে। ব্যাংকি কার্যক্রম পরিচালনার সময় কমে আসলে পুঁজিবাজারের লেনদেন সময়ও কমে আসবে। করোনার কারণে আমরা পুঁজিবাজার বন্ধ করবো না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালীন মার্কেট বন্ধ করে দিলে কোন সমাধান হবে না। কারণ করোনা কখন যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এটা কয়েক বছরও চলতে পারে। এতো দিন অর্থনীতির চাকা বন্ধ থাকতে পারে না। এর আগে লকডাউন গুজবে পুঁজিবাজারের পতন থামাতে গত ২২ মার্চ জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিএসইসি।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, করোনাকালসহ যেকোনো সময় ব্যাংকের কার্যক্রম চালু থাকলে শেয়ারবাজারের লেনদেনও অব্যাহত থাকবে। তাই এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর আগে করোনার কারণে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে তখন পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় একটানা ৬৬ দিন লেনদেন বন্ধ ছিল শেয়ারবাজারে। দীর্ঘ ওই ছুটির পর ৩১ মে থেকে পুনরায় লেনদেন চালু হয়।

এদিকে আগামী সপ্তাহে থেকে এক সপ্তাহের জন্য জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান এমনকি সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রেখে কঠোর লকডাউন দেয়া হলেও ব্যাংক বন্ধ থাকবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে জরুরি সেবা হিসেবেই দেখার কথা জানিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে।

তবে প্রথম দিন থেকেই মোটামুটি শিথিল লকডাউন। তৃতীয় দিন থেকে দেশের সব মহানগরে চালু করে দেয়া হয় বাস। যদিও অন্যান্য যানবাহন চলছে প্রথম দিন থেকেই। এরপর খুলে দেয়া হয় দোকানপাট ও শপিং মল। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রতিদিন রেকর্ড করতে থাকায় সরকার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানানো হয়েছে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ব্যাংক হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয় সেবা। এ সেবা দিতে আমরা বাধ্য এবং এটা চলমান রাখতে হবে।” এ সংকটের মধ্যেও ব্যাংক খোলা রাখতে হবে। কারণ, মানুষ ব্যাংকিং লেনদেন না করতে পারলে অন্যান্য সংকটে পড়বে। চিকিৎসার জন্যও ব্যাংকের টাকা দরকার। সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে সমন্বয় করে কীভাবে, কোন কৌশলে ব্যাংকিং সেবা দেয়া যায় সেটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

চলমান লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকের লেনদেন চলছে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। অফিসের অন্যান্য কার্যক্রম চলছে দুপুর দুইটা পর্যন্ত। ব্যাংকের লেনদেন পরিবর্তন করায় পুঁজিবাজারের লেনদেনও পরিবর্তন করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের লেনদেন সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটার পরিবর্তে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের লেনদেন মোবাইল অ্যাপস, টেলিফোন ইত্যাদির মাধ্য সম্পন্ন করার জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিনিয়োগকারীদের বার বার অনুরোধ করা হয়েছে।

কঠোর লকডাউনেও একই সময়সীমা থাকবে কি না এমন প্রশ্নও ছিল সিরাজুল ইসলামের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, “রোববার সরকারের নির্দেশনা জারি হওয়ার পর কীভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাব।” তবে সীমিত আকারে হলেও ব্যাংকের লেনদেন চালু রাখা হবে এটি নিশ্চিত করেছেন এই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ বিষয়ে (শুক্রবার) বলেন, “এটা কমপ্লিট লকডাউন, কঠোর লকডাউন। কোনো অফিস আদালত খোলা থাকবে না। সেখানে শুধু জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকবে।”

রাষ্ট্রায়ত্ত ৩ কোম্পানির কাছেই অবণ্টিত ডিভিডেন্ড ৩৫ কোটি টাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়াত্ব তিন কোম্পানির কাছে ২০১৮-১৯ হিসাব বছর পর্যন্ত অবণ্টিত ডিভিডেন্ড পড়ে রয়েছে ৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। কোম্পানি ৩টি হলো-পদ্মা ওয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল লিমিটেড। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো সূত্রে এ জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, সাধারণত কোম্পানির শেয়ার পোর্টফোলিওতে থাকলে বছর শেষে পাওয়া যায় ক্যাশ ডিভিডেন্ড বা স্টক ডিভিডেন্ড। কিন্তু বিও হিসাব নবায়ন না করা, ব্যাংকের হিসাব অকার্যকরসহ নানা কারণে অবণ্টিত থেকে যায় কোম্পানির ডিভিডেন্ড, যা “সাসপেন্ডেড” হিসেবে জমা থাকে কোম্পানির কাছে। এ ধরনের অবণ্টিত ডিভিডেন্ড জ্বালানি বিপণনকারী তিন কোম্পানির কাছে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৩৫ কোটি ৯ লাখ ২৩ হাজার ৭৭৯ টাকা পড়ে আছে। আগের হিসাব বছর (২০১৭-১৮) পর্যন্ত ছিল ২৫ কোটি ৭০ লাখ ৬২ হাজার ৫৬২ টাকা।

এক বছরের ব্যবধানে অদাবিকৃত দায় বেড়েছে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৬১ হাজার ২১৭ টাকা। সবচেয়ে বেশি পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কাছে অবণ্টিত ডিভিডেন্ড জমা আছে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬৩ হাজার। আর মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডে ১১ কোটি ৩৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৫০ টাকা ও যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে ৭ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার ২২৯ টাকা। আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত ছিল পদ্মায় ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা, মেঘনায় ৭ কোটি ৬০ লাখ ২৩ হাজার ৭৮১ টাকা এবং তিন কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮১ টাকা অবণ্টিত ডিভিডেন্ড জমা ছিল।

এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক হিসাবে দেখা গেছে, ডিএসইর ২০৮টি ও সিএসইর ১২৭টি কোম্পানিসহ মোট ৩৩৫ কোম্পানির প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ডিভিডেন্ড অবণ্টিত অবস্থায় আছে। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত বোনাস ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকা ও ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ৬৩৪ কোটি টাকা।

একইভাবে সিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে অবণ্টিত বোনাস ডিভিডেন্ডের পরিমাণ আট হাজার ৮৮১ কোটি টাকা ও ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ৩২১ কোটি টাকা। আর এমন অবণ্টিত ডিভিডেন্ড নিয়ে বিনিয়োগ সুরক্ষা ফান্ড গঠনে কাজ করছে বিএসইসি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুঁজিবাজারের কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ বিতরণ-সংক্রান্ত এক নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয়, এখন থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠান ঘোষিত ডিভিডেন্ডের অবণ্টিত অর্থ ও শেয়ার তিন বছরের বেশি নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারবে না। ঘোষিত ডিভিডেন্ডের দাবিদার খুঁজে না পেলে তিন বছর পর সেই অর্থ ও শেয়ার স্থানান্তর করতে হবে পুঁজিবাজার উন্নয়নে গঠিত বিশেষ তহবিলে।

লিন্ডে বিডির এক বছরে রিজার্ভ তিন গুণ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত লিনডে বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯-২০ সমাপ্ত হিসাব বছরের ব্যবসায় অর্জিত মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের ৬০ কোটি টাকার ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৮ এপ্রিল কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা আগামি ২৭ মে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে লিনডে বিডির শেয়ার প্রতি ৭০ টাকা ৫৫ পয়সা মুনাফা হয়েছে। সে হিসেবে মোট মুনাফা হয়েছে ১০৭ কোটি ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫৪ টাকা। এরমধ্য থেকে ৪০০ শতাংশ বা শেয়ার প্রতি ৪০ টাকা হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে ৬০ কোটি ৮৭ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা বিতরণ করা হবে।

বাকি ৪৬ কোটি ৪৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৫৪ টাকা কোম্পানির রিজার্ভ ফান্ডে রেখে দেয়া হবে। অর্থাৎ ১৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের লিনডে বিডির রিজার্ভ এক বছরেই বাড়বে তিন গুণের বেশী। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভ রয়েছে ৪৯৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

ব্যাংক এশিয়া ও গোল্ডেন হারভেস্ট লেনদেনে ফিরছে: বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও অর্ন্তবতী ডিভিডেন্ড-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে একদিন বন্ধ থাকার পর আগামীকাল রোববার (১১ এপ্রিল) লেনদেনে ফিরছে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড ও গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড: ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়ার সুপারিশ করেছে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে ব্যাংকটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৭৪ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৬৮ পয়সা।

৩১ ডিসেম্বর সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা ৩৪ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২২ টাকা ৯৪ পয়সা। সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, ঘোষিত ডিভিডেন্ডসহ অন্যান্য এজেন্ডা পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য ২৯ এপ্রিল বেলা ১১টায় ব্যাংক এশিয়া টাওয়ারে ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে ব্যাংকের ২২তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করা হয়েছে।

২০১৯ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ব্যাংক এশিয়া। ২০১৮ হিসাব বছরে মোট ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয় ব্যাংকটি। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক। ২০০৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ব্যাংক এশিয়ার অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ১৬৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

মোট শেয়ার সংখ্যা ১১৬ কোটি ৫৯ লাখ ৬ হাজার ৮৬১। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে ৫১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৪ দশমিক শূন্য ৭, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হাতে দশমিক ২২ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে এ শেয়ারের মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত ১০.২৪, হালনাগাদ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যা ৯.৮৯।

গোল্ডেন হারভেস্ট লিমিটেড: সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২ শতাংশ অন্তর্র্বতী ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) গোল্ডেন হারভেস্টের সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬৩ পয়সা, যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৯৭ পয়সা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৯ পয়সা, যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ৩৯ পয়সা।

৩১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৩৭ পয়সা। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি গোল্ডেন হারভেস্ট। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৪ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৯৩ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। ৩০ জুন সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১৫ টাকা ২ পয়সা, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ২০ টাকা ১ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)।

২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের মোট ১২ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে গোল্ডেন হারভেস্ট। এর মধ্যে ৭ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রোর অনুমোদিত মূলধন ২৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১০৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

মোট শেয়ার সংখ্যা ২১ কোটি ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬২২। এর মধ্যে ৩২.৮৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে। এছাড়া ৩৯.৮৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ০.০৯ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও বাকি ২৭.২০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

ইনটেক লিমিটেড প্রতারনা করে মুনাফা বাড়িয়েছে: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইনটেক লিমিটেডের আর্থিক হিসাবে মুনাফা বাড়িয়ে দেখানোর জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। ইনটেক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) মির্জা আমিনুল ইসলাম বেগ এর কাছে কমিশনের পাঠানো এক চিঠিতে এই অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

জানা গেছে, ইনটেক লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে ডেফার্ড টেক্স ইনকাম হিসেবে ৩০ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬৪ টাকা দেখিয়েছে। কিন্তু হিসাব মান অনুযায়ি এর বিস্তারিত আর্থিক হিসাবে তুলে ধরা হয়নি।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ফিশারিজ ইউনিট ও সফটওয়্যার ইউনিট এর সব আয়কে করমুক্ত সুবিধার অন্তর্ভূক্ত বলে আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করেছে। এ হিসেবে আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-১২.৭ অনুযায়ি, ওই করমুক্ত আয়ের সংশ্লিষ্ট সম্পদের ক্ষেত্রে কোন ডেফার্ড টেক্স দেখানোর সুযোগ নেই।

তবে ইনটেক কর্তৃপক্ষ ফিশারিজ ইউনিট ও সফটওয়্যার সম্পদের উপর ভিত্তি করে আর্থিক হিসাবে ডেফার্ড টেক্স ইনকাম হিসেবে ৩০ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬৪ টাকা দেখিয়েছে। যা প্রকৃতপক্ষে কোম্পানির নিট মুনাফায় প্রভাব ফেলেছে। এর মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হিসেবে প্রায় ০.১১ টাকা বেশি দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আর্থিক হিসাবে অনিয়ম হয়েছে। যা শেয়ারহোল্ডারসহ আর্থিক হিসাব বিবরণী সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদেরকে ভুলভাবে প্রভাবিত করেছে।

এ বিষয়ে ইনটেক কর্তৃপক্ষ কমিশনে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি এবং কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা এই অভিযোগ থেকে নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণ ব্যর্থ হয়েছেন বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের অনিয়মের কারনে কোম্পানির সাধারন বিনিয়োগকারীসহ স্টেকহোল্ডাররা প্রকৃত আর্থিক অবস্থার তথ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

ইনটেক লিমিটেড একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ও পরিচালকেরা তার প্রতিনিধিত্বকারী। যারা সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিবিধান পরিপালনে ব্যর্থতার জন্য দায়ী। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ এর অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাদের ব্যর্থতার কারনে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে। যা শেয়ারবাজারের উন্নয়নের পরিপন্থী বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইনটেক লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৯.৮৬ শতাংশ।

বাংলাদেশের জিপি-রবি একীভূত হচ্ছে মালয়েশিয়ায়: বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের দুই জায়েন্ট গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটা জোট বাঁধছে মালয়েশিয়ায়। আজিয়াটার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সেলকম আজিয়াটা বারহাদ ও টেলিনর এশিয়ার মালিকানাধীন ডিজি ডট কম বারহাদ একীভূত হচ্ছে সেলকম ডিজি বারহাদ নামে। সেলকম ডিজি বারহাদের আজিয়াটা ও টেলিনরের মালিকানা থাকবে ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ হারে। মালয়েশিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ মিলে আজিয়াটার সর্বমোট মালিকানা দাঁড়াবে ৫১ শতাংশের কিছু বেশি।

এ সম্পর্কে আজিয়াটার ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, একীভূত প্রক্রিয়া সফল হলে মূল্য, রাজস্ব এবং মুনাফার দিক থেকে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় টেলিযোগাযোগ সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে সেলকম ডিজি বারহাদ। নতুন এই প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা হবে এক কোটি ৯০ লাখ।

টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে এই দুটি প্রতিষ্ঠান একীভূত হওয়ার ফলে গ্রাহকরাও বেশ লাভবান হবেন বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি বলছে একীভূত হওয়ার ফলে আগের চেয়ে বেশি বিনিয়োগের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে তাদের। ফলে তুলনামূলকভাবে সেবার মান অনেক বাড়বে।

একীভূত হওয়ার বিষয়ে আজিয়াটা বোর্ডের চেয়ারম্যান গাজ্জালি শেখ আব্দুল খালিদ বলেন, “মালয়েশিয়ায় সম্ভাব্য একীভূত হওয়ার আলোচনায় এতদূর আসতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর হবে এটি এবং এর মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে দেশটি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।”

প্রসঙ্গত, নরওয়েভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি টেলিনর ও মালয়েশিয়াভিত্তিক বহুজাতিক আজিয়াটা বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে শীর্ষ দুই প্রতিযোগী কোম্পানি। টেলিনরের মালিকানাধীন গ্রামীণফোন বাংলাদেশের বাজারে গ্রাহক ও রাজস্বের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে। অপরদিকে গ্রামীণফোনের পরই আছে আজিয়াটার মালিকানাধীন মোবাইলফোন অপারেটর রবি।