দেশ প্রতিক্ষণ, বরিশাল: দক্ষিণাঞ্চলে থামছে না ডায়রিয়ার প্রকোপ। প্রতিদিন নগরীসহ জেলা-উপজেলায় গড়ে দেড় হাজারের অধিক নারী পুরুষ হাসপাতালে ছুটে আসছেন চিকিৎসার জন্য। আক্রান্ত থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুও। ভর্তির তুলনায় রোগী রিলিজের হার কম। যে কারণে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল চত্বরে তাবু টানিয়ে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এমন পরিস্থিতিতেও থামছে না রোগীর চাপ।

মারণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অপেক্ষা পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। বরিশালসহ দক্ষিণের ৬ জেলায় এই রোগে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলো পর্যাপ্ত বেড় বা স্থান না থাকায় হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য প্রশাসন।

বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সম্মুখে অস্থায়ীভাবে সামিয়ানা টাঙিয়ে সেখানে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ অঞ্চলের গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু পেয়েছে রোগতত্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। পরিস্থিতি মহামারির দিকে ছড়িয়ে পড়ায় আইইডিসিআর’র একাধিক টিম বরিশালে অবস্থান করছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানবিদ এএসএম আহসান কবির শুক্রবার জানান, বুধবার পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৬৩৮ জন। এর পরে আরও যে তালিকা এসেছে তাতে আরও ২ হাজার আক্রান্তের তথ্য আছে। সব মিলিয়ে ৩৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। রোগতত্ত¡ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) গত সপ্তাহে বরগুনায় এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে সেখানকার ৭১ শতাংশ মানুষ গৃহস্থালির কাজে খাল কিংবা নদীর পানি ব্যবহার করছেন। যেমন ভাত রান্না, তরকারি ধোয়া। মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ নলক‚পের আওতায় রয়েছে।

এ অঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় আইইডিসিআর’র একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে। তাদের গবেষণা মতে, ডায়রিয়ার জীবাণু খালের পানিতে বিদ্যমান। বর্তমানে আইইডিসিআর’র টিম বাকেরগঞ্জে অবস্থান করছে। তিনি বলেন, বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি ব্যবহার করে যে সরবতসহ নানা কাজে লাগানো হয় তাও জীবাণুযুক্ত।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আক্রান্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্বীপ জেলা ভোলায় ৮ হাজার ৪৬০ মানুষ। পর্যায়ক্রমে বরিশাল জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৯১ জন, উপক‚লীয় এলাকা পটুয়াখালী ৭ হাজার ৬৪৬ জন, পিরোজপুরে ৪ হাজার ১৩৫ জন, বরগুনায় ৫ হাজার ১৭০ জন এবং ঝালকাঠী ৩ হাজার ৬৩৬ জন।

তবে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় তথ্যে বেশ গড়মিল রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্তে ৮ জনের তালিকা প্রকাশ করলেও শুধু মাত্র পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জে মারা গেছে ১৩ জন। এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী, ভোলাসহ বাকি জেলাগুলো থেকে মৃত্যুর খবর এসেছে এবং পত্র-পত্রিকার শিরোনাম হতে দেখা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. বাসুদেব মীর্জাগঞ্জ ও বাকেরগঞ্জে ডায়রিয়ায় মৃত্যুর বিষয়ে বলেন, যারা মারা এখন পর্যন্ত গেছেন তারা বাসায় থেকে মারা গেছেন। বিশেষ করে মির্জাগঞ্জের বিষয়টিও তাদের নজরে আছে। সবকিছু মিলিয়ে ডায়রিয়া পরিস্থিতি মহামারির দিকে ছড়িয়ে পড়ার আগেই জোর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে, জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।’