দেশ প্রতিক্ষণ, ভোলা: ভোলার চরফ্যাসনে ভারত থেকে জমি বিক্রির টাকা নিতে এসে প্রাণ হারান অমিত ও দুলাল নামের দুই ভাই। জমির ক্রেতারা পরিকল্পিতভাবে দুই ভাইকে হত্যার পর মস্তকবিহীন দেহ আগুনে পুড়িয়ে আলামত ধংস করে দেয়। দুই সপ্তাহ আগে চরফ্যাসনের আসলামপুর থেকে পুলিশ এই সহদরের পোড়া দেহ উদ্ধার করলেও নাম, পরিচয় না পেয়ে রহস্যের মধ্যে ছিল। কিন্তু তদন্তের অল্পদিনের মধ্যেই বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর জোড়াখুনের তথ্য। টয়লেটের সেফটিট্যাংক থেকে উদ্ধার হয় দুই জনের অর্ধগলিত মাথার খুলি ও হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র।

পুলিশ জানিয়েছে, খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মো. বেল্লাল, তার শ্বশুর আবু মাঝি ও ভাই কাশেমকে পুলিশ শুক্রবার গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে খুনের রহস্য বেড়িয়ে আসে। গত ৮ এপ্রিল আসলামপুরের জামাল ভুঁইয়ার পরিত্যক্ত বাগান থেকে মস্তকবিহীন দুটি পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে চরফ্যাসন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য চলে আসে পুলিশের হাতে।

এক সময়ের চরফ্যাসন পৌরসভার বাসিন্দা বর্তমানে ভারতে বসবাসকারীরা অমিত সরকার (তপন) ও দুলাল সরকার তাদের মালিকানা ৩৬ শতাংশ জমি ২৪ লাখ টাকায় বিক্রী করেন আসলামপুরের বাসিন্দা মো. বেল্লালগংদের কাছে। দরদাম চূড়ান্ত করার সময় ৩ লাখ টাকা অগ্রিম বায়না নেন তারা। বাকি ২১ লাখ টাকার জন্য আসলে গত ৮ এপ্রিল জমির ক্রেতা ও তার দুই সহযোগী পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করেন। হত্যার পর আলামত ধ্বংস করতে লাশগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয় তারা।

জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানিয়েছেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছেন লাশ দু’টি পৌরসভা ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত উপেন্দ্র সরকারের ছেলে অমিত সরকার (তপন) (৫৫) ও দুলাল সরকারের (৪০)। এঘটনায় পুলিশ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মো. বেল্লাল, বেলালের শ্বশুর আবু মাঝি ও ভাই কাশেমকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, জমি কেনাবেচার লেনদেনের জের ধরে ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টায় অভিযুক্তরা দুই সহোদরকে আসলামপুর ইউনিয়নের সুন্দরী খাল সংলগ্ন জামাল ভুইয়ার পরিত্যক্ত বাগানে নিয়ে প্রথমে শ্বাশরোধে হত্যা করে। পরে গভীর রাতে মাথা বিছিন্ন করে এবং দেহ আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে। হত্যার পর মাথা ২টি ঘটনাস্থলের উত্তর পাশের মহিবুল্লাহর টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়।

পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশ আসলামপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মহিবুল্লাহর বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে দু’টি অর্ধগলিত মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। ওই এলাকা থেকেই দুই সপ্তাহ আগে পোড়া দেহ ২টি উদ্ধার করা হয়েছিল। ঘটনাস্থলের পার্শবর্তী সুন্দরী খাল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র ( ছেনি) উদ্ধার করা হয়।

চরফ্যাসন থানার ওসি মো. মনির হোসেন মিয়া জানান, তিন আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত আসামিদের জবানবন্দী গ্রহণ শেষে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল দুপুরে আসলামপুরের সুন্দরী ব্রিজ সংলগ্ন জামাল ভুইয়ার বাগানে স্থানীয় কৃষক মোস্তাফিজ ছাগল চড়াতে গিয়ে পোড়া লাশ দেখে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ লাশ দু’টি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।