দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২ মে) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গরিব ও অসহায় এবং করোনাকালে কর্মহীন নাগরিকদের জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা (আ.লীগ) কিন্তু জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। আমরা সব সময় চিন্তা করি কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াব। মানুষকে সহযোগিতা করব। আওয়ামী লীগ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই কিন্তু কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সব সময় দুর্গত মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ আছে। ধান কাটার সমস্যা। আমি বলার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ মানুষের ধান কেটে দিয়েছে।

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশা ও ভ্যানচালক, মোটরশ্রমিকসহ কর্মহীন বিভিন্ন পেশার ৩৬ লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে। আগামী তিন দিনের মধ্যে নগদ, বিকাশ, রকেট এবং শিউরক্যাশের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে জিটুপি (গর্ভনমেন্ট টু পার্সন) ভিত্তিতে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পৌঁছে যাবে এসব পরিবারের কাছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর করোনা মহামারির কারণে যেসব নিম্নআয়ের লোকজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন তাদের সহায়তার জন্য ‘নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ নিম্নআয়ের পরিবারকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ৮৮০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি এই অর্থ দেওয়া হয়েছিল।

দুপুর থেকে দেশের পশ্চিম অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে কালবৈশাখী ঝড়। সন্ধ্যার দিকে ঢাকায় আঘাত হানতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কালবৈশাখী ঝড় দেখা যায়নি। রোববার (২ মে) দুপুর সোয়া ২টার দিকে সারাদেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি জানাতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহিন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বর্তমানে ময়মনসিংহ বিভাগসহ খাগড়াছড়ি, কিশোরগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ঝড়টি ঘণ্টাখানেক পর যশোর, কুষ্টিয়া অঞ্চলের দিকে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে এ ঝড় ঢাকায় আসতে পারে। এখন পর্যন্ত ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কি.মি. রয়েছে। বড় ধরনের ঝড়ের পূর্বাভাসের তথ্য তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে জানা যাবে।

এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী এবং ফেনী অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে তাপপ্রবাহ কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

সারাদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে, বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে ও তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ডিমলায় ৬৫ মি.লি.। সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

করোনায় ২৪ ঘণ্টায় ৬৯ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৩৫৯: দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৫৭৯ জনের। এ সময় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৫৯ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৩ জনে।

রোববার (২ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৫৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩২৮ জন।

২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৪২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ১৫৮টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৯টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৬৯ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগেরই ৩৮ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৪, রাজশাহীতে ১, খুলনায় ৫, বরিশালে ৭, সিলেটে ১, রংপুরে ২ এবং ময়মনসিংহে ১ জন মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ৪৪ জন পুরুষ এবং ২৫ জন নারী। এদের মধ্যে বাসায় মারা গেছেন ২ জন। বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মোট মারা যাওয়া ১১ হাজার ৫৭৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ৪৩৪ জন এবং নারী ৩ হাজার ১৪৫ জন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ৪৪ জনেরই বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১১, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৭, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৩ এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের ২, ১১ থেকে ২০ বছরের ১ জন এবং ১০ বছরের নিচে ১ জন রয়েছেন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

মমতার দখলেই পশ্চিমবঙ্গ: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে আজ। রোববার (২ মে) সকাল থেকে চলছে ভোট গণনা। গণনা শেষ হতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু দুপুর ১টার মধ্যেই জানা গেছে ২০০ আসনে এগিয়ে আছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস।

কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে এখন পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস ২০৮টি আসনে এবং বিজেপি ৮০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তৃণমূল ১৭৮ আসনে এবং বিজেপি ১০৮ আসনে এগিয়ে রয়েছে। তবে এনডিটিভি জানিয়েছে, তৃণমূল ২০৩ আসনে এবং বিজেপি ৮৬ আসনে এগিয়ে রয়েছে।

এই পরিসংখ্যানেই জয় সম্পর্কে নিশ্চিত তৃণমূল। তবে ভারতে করোনা যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তাতে এটা উচ্ছ্বাস দেখানোর সময় নয় বলে জানিয়েছেন মমতা সরকারের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তার মতে, ‘এই জয়ে কোনো বিজয় মিছিল হবে না। এটা আনন্দ করার সময় নয়। রাজ্যে কত মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমার নিজের অনেক আত্মীয় মারা গিয়েছেন। এমনকি যারা আমাকে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই নেই। এই অবস্থায় বিজয় মিছিল বা আনন্দ করার মতো মানসিক অবস্থা নেই আমার।’

বিধানসভা নির্বাচনে ফিরহাদ নিজে কলকাতা বন্দর থেকে প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে রোববার দুপুর পর্যন্ত বিজেপির আওয়ধ কিশোর গুপ্তর সঙ্গে তার প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ১৭ হাজার। তবে নিজের জয়ের ব্যাপারে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ।

তিনি বলেন, ‘কোনো দুশ্চিন্তা নেই আমার। মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমি নিজেকে ‘ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, টু দ্য পিপল’ বলে মনে করি। মানুষ বিবেচনা করে মতামত দিয়েছেন।’ তবে নিজের কেন্দ্রে ফিরহাদ প্রতিপক্ষের থেকে নিরাপদ ব্যবধান বজায় রাখতে সক্ষম হলেও, নন্দীগ্রাম ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে। সেখানে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পিছিয়ে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে ফিরহাদের বক্তব্য, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমরা কাজ করেছি। উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো ধর্ম, বর্ণ, জাতির ভিত্তিতে ভোট হয় না পশ্চিমবঙ্গে। দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে তৃণমূল। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যা