দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনা মহামারির বিস্তার ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধ আরেক দফা বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল থেকে এ বিধিনিষেধ কয়েক দফায় ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। সোমবার (৩ মে) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ৬ মে থেকে আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলবে। তবে চলবে না দূরপাল্লার বাস। লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচলও বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ ঢাকার বাস ঢাকায় আর গাজীপুরের বাস গাজীপুরে, এভাবেই চলাচল করতে হবে। অন্য জেলায় যেতে পারবে না। গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে।

লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল বন্ধই থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ সিদ্ধান্ত আগামী ১৬ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আজ থেকে মার্কেটে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালাবে। মাস্ক না পরলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এবার ঈদে পোশাক শ্রমিকদের তিন দিনের বেশি ছুটি দেওয়া যাবে না।

সচিব বলেন, ‘গণপরিবহন মালিকরা আমাদের কথা দিয়েছেন, কোনভাবেই গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হবে না। লঙ্ঘন করা হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই নির্দেশনাও দেওয়া আছে। সেটা আমরা দেখব।’

ঈদুল ফিতর ১৪ মে (শুক্রবার) হতে পারে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো বন্ধ দেওয়া যাবে না। ঈদের ছুটি তিনদিনের মধ্যে দুটি পড়েছে শুক্র ও শনিবার। শিল্পকারখানাও এ সময়ে বন্ধ দিতে পারবে না।’ সরকারি অফিস বন্ধ সেগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা- জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যেগুলো যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।’

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এবং পরে ২ দিন বিধিনিষেধ বাড়িয়ে দেওয়া হলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। ফলে ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। এটি বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। যদিও শপিং মল খোলাসহ বেশকিছু বিষয়ে বিধিনিষেধের শর্ত শিথিল করে সরকার। সবশেষ ২৮ এপ্রিল বিধিনিষেধের সময় ৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৬৫ জন, শনাক্ত ১৭৩৯: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪২ জন ও নারী ২৩ জন। ৬৫ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪৫ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১৫ জন ও পাঁচজন বাসায় মারা যান। এ নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১ হাজার ৬৪৪ জনে।

একই সময়ে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৩৯ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল সাত লাখ ৬৩ হাজার ৬৮২ জন। সোমবার (৩ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারি ও বেসরকারি ৪২০টি ল্যাবরেটরিতে ১৯ হাজার ৪৫২টি নমুনা সংগ্রহ ও ১৯ হাজার ৪৩১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৮.৯৫ শতাংশ। গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন হাজার ৮৩৪ জন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ছয় লাখ ৯১ হাজার ১৬২ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৬৫ জনের মধ্যে শূন্য থেকে দশ বছর বয়সী একজন, বিশোর্ধ্ব দুইজন, ত্রিশোর্ধ্ব তিনজন, চল্লিশোর্ধ্ব আটজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৫ জন ও ষাটোর্র্ধ্ব ৩৬ জন রয়েছেন।

বিভাগওয়ারী দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ৩২ জন, চট্টগ্রামে ১৭ জন, রাজশাহীতে দুইজন, খুলনায় চারজন, বরিশালে দুইজন, সিলেটে ছয়জন ও রংপুর বিভাগে দুইজনের মৃত্যু হয়। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।