দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের ৩ ব্যাংকের ১৯০ কোটি টাকা লাপাত্তার পথে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে প্রায় দেওলিয়া হয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন এক ব্যবসায়ী। কারণ পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় আগে থেকেই উচ্চ আদালত তার উপর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তার নাম শামসুল আলম।

তিনি চট্টগ্রাম শহরের প্রথম সারির গুঁড়ো কাঠের ব্যবসায়ীদের একজন। এক সময় ভালো ব্যবসা ও মুনাফা করেছেন। এখন প্রায় সব ব্যবসাই গুটিয়ে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও নিখোঁজের পথে।

জানা যায়, শামসুল আলম অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবসায় ভালো সুনাম অর্জন করেছিলেন। ব্যবসায় সম্প্রসারণও করেছিলেন। ব্যবসায়িক সুনাম ও সামাজিক পরিচিতি কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সময়ে ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ সুবিধা নেন। কিন্তু যোগ্যতা ও সক্ষমতা না থাকায় ঋণ করে বিপুল পরিমাণ টাকা নেয়ার পর এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

ফলে ছিটকে পড়েন ব্যবসা থেকে। পাশাপাশি বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। আর তিন ব্যাংকে খেলাপি হয়েছেন প্রায় ১৯০ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখায় শামসুল আলমের শামসু স’মিল ও এসএ এন্টারপ্রাইজের দুই প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ৫৯ কোটি ৪১ লাখ ৪৪ হাজার ২০১ টাকা।

আর ঋণের বিপরীতে শামসুল ইসলাম নগরের চান্দগাঁও এলাকার ৯৩ শতক ভূমি বন্ধক রাখেন। এ জমি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করে। একইভাবে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখা থেকে শামসুল আলমের মালিকানাধীন এমএম সিন্ডিকেট ব্যবসার প্রয়োজনে ঋণ সুবিধা নেয়। কাঠ ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য এ ঋণ সুবিধা নেয়া হলেও তিনি সময় মতো ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে একাধিকবার ব্যর্থ হন। আর এ ব্যর্থতার দায়ে গত ৩১ ডিসেম্বর তিনি ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখায় খেলাপি হয়ে পড়েন।

এ সময় শামসুল আলমের মালিকানাধীন এমএম সিন্ডিকেটের কাছে সুদাসলসহ মোট পাওনা হয়েছে ৮৬ কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার ১৯১ টাকা। এর বিপরীতে বন্ধকিতে রয়েছে চাদগাঁও ও মোহরা মৌজায় ১০৭ ডিসিমেল জমি। আর এ পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত ৩০ মার্চ নিলামে বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রয়ের চেষ্টাও করেছিল।

অন্যদিকে তার মালিকানাধীন এমএম ট্রেডিং ও শামসু স’মিলের নামে এবি ব্যাংক লিমিটেড চকবাজার শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়া হয়। চলতি বছর তিন ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যাংকটির চকবাজার শাখার সুদাসলে মোট পাওনা ৪২ কোটি ৭৯ লাখ ৬০ হাজার ৬৭৮ টাকা। এর বিপরীতে জমি বন্ধকিতে দেয়া হয় ৫৮ ডিসিমেল। আর এ পাওনা আদায়ে গত ৯ মার্চ নিলামের মাধ্যমে বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলেও বিক্রি হয়নি।

ইউসিবিএলের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৯ ও ২০১২ সালে নিজের দুই প্রতিষ্ঠানের নামে মো. শামসুল ইসলাম ঋণ নেন, যা খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে সুদাসলে ঋণের পরিমাণ ৫৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৬ সালে ব্যাংকে জামানত রাখা জমি দুটি হেবা দলিলমূলে ছেলে মো. মিজানুর রহমানকে দান করেন। পরে ভূমি অফিসে ছেলের নামে নামজারি করে খাজনাও পরিশোধ করেন।

ইউসিবিএলের কর্মকর্তারা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা একটি মামলা করেছিলাম। এ মামলায় ব্যবসায়ী বাবা ও ছেলের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসানের ভার্চুয়াল আদালত এ আদেশ দেন।’
এ বিষয়ে ব্যাংকের আইনজীবী মানস কুমার দাশ বলেন, মহানগর দায়রা আদালত ও সিএমএম আদালত শামসুল আলম ও তার ছেলের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন।

আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জুন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (প্রথম আদালত) এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে ব্যাংকের পক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদন করি। শুনানি শেষে উচ্চ আদালত গত মঙ্গলবার নিম্ন আদালতের আদেশ বাতিল করেন। আদালত বাবা ও ছেলের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। পাশাপাশি দুদিনের মধ্যে পাসপোর্ট আদালতে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় গিয়ে এমএম সিন্ডিকেট নামের প্রতিষ্ঠানটির হদিস নেই। স্থানীয় লোকজনরা প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। ৫৭ নাম্বর হোল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক ব্যক্তি বলেন, ৭৯ হোল্ডিং তো চিনি না। আর এমএম সিন্ডিকেট নামের কোনো প্রতিষ্ঠান নামও শুনিনি। এমন কি শামসুল আলমের নাম শুনিনি। আপনি ভালো করে খোঁজ নিন।

ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখার কর্মকর্তারা বলেন, ‘শামসুল আলমের মালিকানাধীন এমএম সিন্ডিকেট নামে নেয়া ঋণ এখন পুরোপুরি খেলাপি। আমরা পাওনা আদায়ে বহুবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাওনা আদায় হয়নি। আর এটি এখন মামলাধীন বিষয়।’

এবি ব্যাংক লিমিটেড চকবাজার শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, ‘শামসুল আলমের কাছ থেকে আমরা খেলাপি পাওনা আদায় করতে পারিনি। তার বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলাও চলমান আছে। আর খেলাপি পাওনা আদায়ে আমরা ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তিও নিলামে বিক্রয়ের চেষ্টা করেছি। শুনেছি ব্যবসা আছে। তবে একই সম্পত্তি দিয়ে তিনি আরও কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এখন সব ব্যাংকেই খেলাপি।’

অবশেষে ডিএসই-সিএসইতে নিয়োগ ও ছাঁটাই বন্ধ: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে অবশেষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) সার্ভিস রেগুলেশন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইতিমধ্যে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভিস রেগুলেশন (চাকরি বিধি) সংশোধনের জন্য বিএসইসির গঠিত কমিটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ডিএসই ও সিএসইর সার্ভিস রেগুলেশন একই রকম করতে চায় কমিশন। তাই সার্ভিস রেগুলেশন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিএসইসির অনুমতি ছাড়া ডিএসই ও সিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, ছাঁটাই এবং পদোন্নতি না দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, প্রস্তাবিত সার্ভিস রেগুলেশনে নিয়োগ, ছাঁটাই ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন সে বিষয়ে ডিএসই ও সিএসইর কাছে জানতে চেয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি ডিএসই ও সিএসইকে কমিটি গঠন করার নির্দেশও দিয়েছে বিএসইসি। আর গঠিত কমিটিকে এক মাসের মধ্যে সার্ভিস রেগুলেশন সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গত ৮ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ডিএসই ও সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে বিএসইসি।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ জুন বিএসইসিতে চিঠি পাঠিয়েছিল ডিএসই ও সিএসই। উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রেরিত চিঠিতে সার্ভিস রেগুলেশন সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়। ডিএসই ও সিএসইর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কমিশন প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও ৩০ কার্যদিবস সময় বাড়িয়েছে। বর্ধিত এ সময়ের মধ্যে ডিএসই ও সিএসইকে সার্ভিস রেগুলেশন প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে হবে।

এছাড়া, চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিদ্যমান চাকুরি প্রবিধানমালার অধীনে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ, ছাঁটাই ও পদোন্নতি সম্পর্কিত কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত বিএসইসির অনুমতি ছাড়া না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। এর আগে গত ১৫ জুন বিএসইসির পাঠানো চিঠিতে ডিএসই ও সিএসইর সার্ভিস রেগুলেশন সংশোধনের বিষয়ে জানায় বিএসইসি।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ৬(৩) ধারা অনুযায়ী একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়। গঠিত কমিটিকে বিএসইসির প্রস্তাবিত সার্ভিস রেগুলেশনে কোনো সংশোধনের প্রয়োজন কি-না সে বিষয়ে প্রতিদেন দাখিল করতে বলা হয়। বিশেষ করে বিদ্যমান সার্ভিস রেগুলেশনের সঙ্গে প্রস্তাবিত সার্ভিস রেগুলেশনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ, ছাঁটাই ও পদোন্নতি সম্পর্কিত বিষয়গুলো অধিক যাচাই-বাছাই করে দেখতে বলা হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের ডিএসই ও সিএসইর সার্ভিস রেগুলেশন প্রণয়নের জন্য এক্সচেঞ্জস ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট, ২০১৩ এবং এক্সচেঞ্জস ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম অনুযায়ী একটি কমিটি গঠন করে বিএসইসি। আর ডিএসই ও সিএসইর সার্ভিস রেগুলেশনের নিয়োগ, ছাঁটাই ও পদোন্নতির বিষয়ে পরিবর্তন আনার জন্য প্রস্তাব দেয় বিএসইসির ওই গঠিত কমিটি। এরই ধরাবাহিকতায় ডিএসই ও সিএসইর সার্ভিস রেগুলেশন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মীদের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য গত বছরের জুন মাসে ডিএসই একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনে, ডিএসইতে প্রয়োজনের তুলনায় ৭০-৮০ জন বেশি কর্মী রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা অনেক বেশি বলে প্রতিবেদনের উঠে আসে।

এছাড়া এক্সচেঞ্জের ‘সি’ লেভেলের কর্মকর্তাদের (শীর্ষ কর্মকর্তাদের) অত্যধিক বেতন-ভাতার বিষয়টিও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিএসইর পর্ষদ ব্যয় নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ জুন ১০ জন অধিক কর্মীকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ছাঁটাই করেছে ডিএসই। ফলে ছাঁটাই আতঙ্কে দিন পার করছে ডিএসইর কর্মীরা।

এদিকে, সিএসইতে এখন পর্যন্ত ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু না হলেও কর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি ছাঁটাই না করে বিনা করণে কর্মীদের অন্যত্র স্থানান্তর করছে। যাতে বাধ্য হয়ে কর্মীরা পদত্যাগ করেন। বিভিন্ন গ্রুপিংয়ের কারণে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. আব্দুল মতিন পাটোয়ারী বলেন, ‘ডিএসইর সার্ভিস রেগুলেশন প্রণয়নের বিষয়ে কাজ কাজ চলছে। এ জন্য ডিএসই একটি ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। গঠিত কমিটি সংশোধিত সার্ভিস রেগুলেশন কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিএসইসি আমাদেরকে এক মাস সময় দিয়েছে।’

এদিক, সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিএসইসির সার্ভিস রেগুলেশনের বিষয়ে চিঠি এসেছে। তবে বিষয়টি সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরাসরি দেখভালো করছেন। চিঠিতে সার্ভিস রেগুলেশন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিএসইসির অনুমতি ছাড়া নিয়োগ, ছাঁটাই ও পদোন্নতি দিতে বারণ করা হয়েছে।’

স্থিতিশীলতা ফান্ডে অর্থ স্থানান্তরে সময় চায় বিএপিএলসি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অবণ্টিত বা অদাবীকৃত ডিভিডেন্ডের অর্থ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে স্থিতিশীলতা তহবিলে স্থানান্তর চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অন্যদিকে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ফোরাম বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলী লিস্টেড কোম্পানীজ (বিএপিএলসি) স্থিতিশীলতা ফান্ডে ডিভিডেন্ডের অর্থ স্থানান্তরের জন্য সময় চায়।

গত বুধবার (৭ জুলাই) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই সময় চেয়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর এই সংগঠনটি। এর আগে গত ৬ জুলাই বিএসইসি এক নির্দেশনায় সব তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের কাছে থাকা (যদি থেকে থাকে) অদাবিকৃত ডিভিডেন্ড, অবণ্টিত ডিভিডেন্ড, আইপিওর রিফান্ড ইত্যাদি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয়।

বিএসইসির নির্দেশনায় টাকা জমা দেওয়ার জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। বিএপিএলসি এই টাকা জমা দেওয়ার জন্য বাড়তি সময় চেয়েছে। তবে কতদিন সময় প্রয়োজন তা তারা উল্লেখ করেনি।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠনটি বলছে, দুটি কারণে তাদেরকে বাড়তি সময় দেওয়া দরকার। প্রথমতঃ এই ধরনের টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডার/সিকিউরিটিহোল্ডার অথবা তাদের নমিনিকে ৩০ দিনের আগাম নোটিস দিতে হবে। দ্বিতীয়তঃ আইপিওর সাবস্ক্রিপশনের টাকা রিটার্নের ক্ষেত্রে বহু বছরের পুরনো নথিপত্র ঘাঁটতে হবে। কিন্তু করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে প্রায় সব অফিস সীমিত পরিসরে চলছে বলে এই কাজগুলো ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন করা বেশ দুরুহ। তাই তাদেরকে বাড়তি সময় দেওয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ, চলতি বছরের শুরুর দিকে বিএসইসি আলোচিত ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২১ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি নোটিশিকেশন জারি করে বিএসইসি। গত ৩ মে অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৭৭২তম নিয়মিত কমিশন সভায় ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (ঈধঢ়রঃধষ গধৎশবঃ ঝঃধনরষরুধঃরড়হ ঋঁহফ) নামে ওই ফান্ড গঠন ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিধিমালা অনুমোদন করা হয়।

গত ২৭ জুন এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়। তহবিল থেকে বাজারের মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানকে শেয়ার কেনাবেচা করা তথা বিনিয়োগের জন্য স্বল্প মেয়াদি ঋণ দেওয়া হবে।

শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে যাতে তহবিলের কোনো লোকসান না হয়, তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হবে, থাকবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অডিট কমিটি। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুমান, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অবণ্টিত ও অদাবিকৃত লভ্যাংশ ও রিফান্ডের পরিমাণ হতে পারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

সাউথ বাংলার আইপিও আবেদন সোমবার শেষ হচ্ছে: পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পাওয়া ব্যাংক খাতের কোম্পানি সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিওতে) আবেদন গ্রহণ শেষ হবে কাল সোমবার। এর আগে কোম্পানিটির আইপিও আবেদন গ্রহন শুরু হয় গেলো সোমবার (৫ জুলাই)। ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকটি পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করার অনুমোদন পেয়েছে। এর জন্য ব্যাংকটি ১০ টাকা ইস্যু মূল্যে ১০ কোটি শেয়ার চেড়েছে। পুঁজিবাজার থেকে ব্যাংকটি অর্থ উত্তোলন করে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে। এর আগে গত ৯ মে ব্যাংকটিকে আইপিওর অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী পুন:মূল্যায়ন ছাড়া নেট অ্যাসেটভ্যালু হয়েছে ১৩.১৮ টাকা। আর ওই বছরের ৯ মাসে ইপিএস হয়েছে ০.৯৪ টাকা। যা বিগত ৫ বছরের ভারিত গড় হারে হয়েছে ১.২৪ টাকা। আইপিওতে ব্যাংকটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

ডিএসইর লেনদেনে তিন খাতে ভর করে উল্লম্ফন: সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৬ হাজার ৪১০ কোটি ৭০ লাখ ৭৩ হাজার ৩৮৮ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫ হাজার ৬২৪ কোটি ৬৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৭৮৬ কোটি ৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বা ১৪ শতাংশ। তিন খাতে লেনদেন বৃদ্ধির কারণে ডিএসইর লেনদেনে উল্লম্ফন হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

যে তিন খাতের লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, সেগুলো হলো-বস্ত্র, বিবিধ ও প্রকৌশল খাত। বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনের নেতৃত্বে ছিল বস্ত্র খাত। খাতটিতে আগের সপ্তাহের তুলনায় বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ২৮৮ কোটি টাকা বা ৪.৫ শতাংশ। লেনদেন বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। এখাতে লেনদেন বেড়েছে ২৬৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বা ৪.১ শতাংশ।

লেনদেন বৃদ্ধির তৃতীয় থাকা প্রকৌশল খাতে লেনদেন বেড়েছে ২০৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা বা ৩.২ শতাংশ। এছাড়া, বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ট্যানারী খাতে ১.৮ শতাংশ, জ্বালানি খাতে ১.২ শতাংশ, আর্থিক খাতে ১.১ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ০.৫ শতাংশ, সিরামিক খাতে ০.৪ শতাংশ, সেবা খাতে ০.৩ শতাংশ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ০.২ শতাংশ, জীবন বিমা খাতে ০.২ শতাংশ, পেপার খাতে ০.১ শতাংশ, জুট খাতে ০.১ শতাংশ।

অন্যদিকে, বিদায়ী সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭ খাতে লেনদেন কমেছে। খাতগুলোর মধ্যে ব্যাংক খাতে লেনদেন কমেছে ৯.৭ শতাংশ, সাধারণ বিমা খাতে ৩.৫ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ১.৭ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১.৪ শতাংশ, ভ্রমণ ও আবাসিক খাতে ০.৮ শতাংশ, টেলিকম খাতে ০.৪ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ০.১ শতাংশ।

সজীব গ্রুপে পুঁজিবাজারে ৮ কোম্পানির বিনিয়োগ ১৮০০ কোটি টাকা: সজীব গ্রুপের ১১ প্রতিষ্ঠানে পুঁজিবাজারের ৭ ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়েছে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার উপরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৯৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে আগুনে ভস্মীভূত হাসেম ফুডসে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় উৎপাদন হতো ‘সেজান জুস’। যেখানে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ।

আগুনে পুড়ে যাওয়া হাসেম ফুডস লিমিটেডে ঋণ দিয়েছে পুঁজিবাজারের মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স। এছাড়া গ্রুপটির অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণ আছে প্রাইম ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের সঙ্গে পূবালী ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া। সজীব গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সজীব করপোরেশনের নামে ঋণ আছে ৩৬০ কোটি টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় রাজধানীর ফার্মগেট। আর হাসেম রাইস মিলস লিমিটেডের নামে ব্যাংকঋণ আছে ৩৩৮ কোটি টাকা। চাল উৎপাদনের এ মিলের অবস্থান রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। সজীব গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হাসেম ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেডের নামে ২০১ কোটি, সজীব লজিস্টিকস লিমিটেডের নামে ৩৮ কোটি, সজীব হোমস লিমিটেডের নামে ২৯ কোটি, হাসেম এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের নামে ২০ কোটি, হাসেম অটো রাইস মিলের নামে ৮ কোটি, স্যাভি ফুডস লিমিটেডের নামে ৩ কোটি ও মারস ইন্টারন্যাশনালের নামে ২১ লাখ টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হাসেম ফুডস লিমিটেডের পাশে গ্রুপটির বেশ কয়েকটি ভবন রয়েছে। বহুতল এসব ভবনে সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে হাসেম ফ্লাওয়ার মিলসের অবস্থানও একই এলাকায়। সজীব গ্রুপের আটা, ময়দাসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য ও ফ্রুটস ড্রিংকস উৎপাদিত হয় ভবনগুলোতে।

এর মধ্যে একটি ভবন ভস্মীভূত হওয়ায় গ্রুপটির অন্য ভবনগুলোতেও শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। ভয়াবহ এ ঘটনার পর এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে গিয়েছেন সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসেম, তার চার ছেলে হাসীব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম ও তানজীম ইব্রাহীম। এছাড়া গ্রুপটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহান শাহ আজাদ, উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ ও প্রকৌশলী মো. আলাউদ্দিনও গ্রেফতার হয়ে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন।

এ রকম একটি বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে সজীব গ্রুপকে ঋণ দেয়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। উদ্বেগে রয়েছেন গ্রুপটিকে ঋণ দেয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তারাও। ‘ব্র্যান্ড ইমেজ’ থাকায় গ্রুপটিকে দেয়া ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানতও নেই ব্যাংকগুলোর হাতে।

এ প্রসঙ্গে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে আবুল হাসেম এতদিন সফলই ছিলেন। সজীব গ্রুপের প্রতিটি পণ্যের বাজার চাহিদাও ভালো ছিল। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা পুরো শিল্প গ্রুপটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একজন ভালো উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও যদি ভঙ্গুর হয়, সেটি দুর্ভাগ্যের।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে কারখানাটির যে ভয়াবহ চিত্র দেখেছি, তা মেনে নেয়া যায় না। একটি শিল্পকারখানা নির্মাণ-অনুমোদন থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনুমোদন লাগে। লাইসেন্স নবায়নের সময়ও কারখানা পরিদর্শনের বিষয়টি অত্যাবশ্যকীয়। এত কিছুর পরও হাসেম ফুডসের যে পরিস্থিতি দেখছি, সেটি মেনে নেয়া যায় না। দেশের অন্যসব শিল্প-কারখানার পরিস্থিতিও ভিন্ন বলে মনে হয় না।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যানসহ আটজন গ্রেফতার হওয়ার পর শিল্প গ্রুপটি পরিচালনা করার মতো কেউ নেই। কারখানার ভবনসহ অন্যসব যন্ত্রপাতি হয়তো বীমার আওতায় আছে। কিন্তু প্রাণহানিসহ যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়ে গেল, সেটির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। এখন গ্রুপটি যদি দক্ষ হাতে পরিচালনা না হয়, তাহলে সব ক্ষতির প্রভাব এসে ব্যাংকের ওপর পড়বে।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে সফল একজন ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে এতটা পিছিয়ে থাকাটি আশ্চর্যের। সজীব গ্রুপের খাদ্যপণ্যগুলো বাজারে বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে যে ভয়ংকর চিত্র দেখলাম, তাতে গ্রুপটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। সজীব গ্রুপের ভাগ্যের সঙ্গে অনেক ব্যাংকের ভালোমন্দও যুক্ত হয়ে গেছে। উদ্যোক্তাদের কারখানার পরিবেশ ও শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে দেখতে হবে।

উদ্যোক্তা হিসেবে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের হাতেখড়ি মূলত পৈতৃক সূত্রে। লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বাজারে ‘আজিজ বিডি’ দিয়ে শুরু হয় তার পিতা ইব্রাহিম মিয়ার ব্যবসা। এরপর পাট, বস্ত্র, সুতা, অ্যালমিনিয়ামসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন ইব্রাহিম মিয়া। ব্যাংক-বীমাসহ আর্থিক খাতেও বিনিয়োগ ছিল তার। পিতার হাত ধরেই নব্বইয়ের দশকে ব্যবসায় হাতেখড়ি হয় আবুল হাসেমের। রাজনীতিতে সক্রিয় না হলেও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর ৩ (সদর) আসন থেকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন।

বানকো সিকিউরিটিজের মূল হোতা শফিউল আজম মুন্না: বানকো সিকিউরিটিজ এখন পুঁজিবাজারে এক আতঙ্কের নাম। কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মনে ভয় ধরানো মূর্ত প্রতীক। ত্রাস ছড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ৬৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গ্রেফতার হয়ে জেলবন্দী হলেও প্রতিষ্ঠানটির মূল হোতা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

মামলার প্রধান আসামি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিত গ্রেফতার হলেও গ্রাহকের ৬৬ কোটি টাকা আত্মসাতের নেপথ্যের কারিগর বলা হচ্ছে মুহিতের বড় বোনের ছেলে এজাহারভুক্ত অপর আসামি শফিউল আজম মুন্নাকে। তিনিই বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের প্রধান নায়ক। অথচ তিনি এখনো বহাল তহবিল ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

জানা যায়, আব্দুল মুহিত পদাধিকার বলে বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান হলেও শফিউল আজম মুন্নাই মূলত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার মূল দায়িত্ব পালন করেছেন। ভাগিনার ওপর আস্থা রেখে মুহিত অধিকাংশ সময় লন্ডনে থাকতেন।

অন্যদিকে মামার আস্থার সুযোগ নিয়ে শফিউল আজম ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এসব তথ্যের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।

বানকো সিকিউরিটিজ কোম্পানির মালিকানায় ছিলেন ছয় জন পরিচালক। যারা সবাই মুহিতের আত্মীয়। তবে কোম্পানির একক নেতৃত্বে ছিলেন তার বড় বোনের ছেলে শফিউল আজম মুন্না। আপন ভাগ্নে হওয়ায় মুন্নাকে বানকোর মূল দায়িত্ব দিয়েছিলেন মামা মুহিত। অন্যদিকে বেশ কয়েক বছর আগে অপর আসামি ও মুহিতের বড় ভাই মুনিম চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ছেলের কাছে চলে যাওয়ায় মুন্না সম্পূর্ণ নিজের খেয়াল খুশি মতো প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে দুর্নীতির অভিযোগে গত ৫ জুলাই বানকো সিকিউরিটিজ ও এর পরিচালকদের সংশ্লিষ্ট আরও ১০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: বানকো সিকিউরিটিজ, বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, সুব্রা সিস্টেমস, সুব্রা ফ্যাশনস, বানকো পাওয়ার, বানকো এনার্জি জেনারেশন, বানকো স্মার্ট সল্যুশন, ক্লাসিক ফুড ল্যাব, অ্যামুলেট ফার্মাসিউটিক্যালস ও সামিট প্রপার্টিজ লিমিটেড।

এর আগে গত ২৮ জুন পুঁজিবাজার থেকে ৬৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিত ও পাঁচ পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুর আলম সিদ্দিকী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

ওই দিন পালিয়ে লন্ডনে যাওয়ার সময় আসামি আব্দুল মুহিত বিমান বন্দরে গ্রেফতার হন। ব্রোকার হাউজ সূত্রে জানা যায়, অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ ও তার আত্মীয়স্বজনের বেশকিছু বিও অ্যাকাউন্ট ছিল হাউজটিতে। এক থেকে দেড় বছর ধরে শেয়ার বিক্রি করেও টাকা উত্তোলন করতে পারেননি তিনি। তখন তিনিসহ বিনিয়োগকারীরা ডিএসইর শরণাপন্ন হন।

বহুজাতিক পাঁচ কোম্পনির শেয়ারে ছন্দপতন: পুঁজিবাজারে সপ্তাহজুড়ে বড় উত্থান হলেও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার দরে ছন্দপতন ঘটছে। চাঙ্গা বাজারেও ১২টি বহুজাতিক কোম্পনির মধ্যে ৫টির দরে ছন্দপতন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। যে ৫ বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার দরে ছন্দপতন হয়েছে সে ৫ কোম্পানি হলো: বাটা সু, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, লিন্ডে বিডি, আরএকে সিরামিক এবং সিঙ্গার বিডি।

বাটা সু: আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাটা সু’র ক্লোজিং দর ছিল ৬৫০ টাকা ২০ পয়সা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস কোম্পানিটির ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ৬৪৮ টাকা ৩০ পয়সায়। সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর কমেছে ১ টাকা ৯০ পয়সা বা ০.৩ শতাংশ।

বাটা সু ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ৩১ মার্চ ২০২১ সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৫৮ পয়সা। গত বছর প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস ছিল ২ টাকা ৭ পয়সা।

হাইডেলবার্গ সিমেন্ট: আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের ক্লোজিং দর ছিল ৩১৮ টাকা ৩০ পয়সা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস কোম্পানিটির ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ৩১৫ টাকা ৭০ পয়সায়। সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর কমেছে ২ টাকা ৬০ পয়সা বা ০.৮ শতাংশ।

হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ৩১ মার্চ ২০২১ সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২১) ইপিএস হয়েছে ৮ টাকা ২৩ পয়সা। যা গত বছর প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৭৭ পয়সা।

লিন্ডে বিডি: আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লিন্ডে বিডির ক্লোজিং দর ছিল ১৩২৪ টাকা ৭০ পয়সা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস কোম্পানিটির ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ১৩১৫ টাকা ৮০ পয়সায়। সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর কমেছে ১১ টাকা ৯০ পয়সা বা ০.৭ শতাংশ।

লিন্ডে বিডি ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ৪০০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ৩১ মার্চ ২০২১ সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২১) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১৮ টাকা ৮৮ পয়সা। যা গত বছর প্রথম প্রান্তিকে ছিল ২০ টাকা ৩৬ পয়সা।

আরএকে সিরামিক: আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে আরএকে সিরামিকের ক্লোজিং দর ছিল ৩৫ টাকা ২০ পয়সা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস কোম্পানিটির ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ১০ পয়সায়। সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর কমেছে ১০ পয়সা বা ০.৩ শতাংশ।

আরএকে সিরামিক ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ৩১ মার্চ ২০২১ সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২১) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫০ পয়সা। যা গত বছর প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৩৫ পয়সা।

সিঙ্গার বিডি: আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিঙ্গার বিডির ক্লোজিং দর ছিল ১৭৯ টাকা ৭০ পয়সা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস কোম্পানিটির ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ১৭৮ টাকা ২০ পয়সায়। সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর কমেছে ১ টাকা ৫০ পয়সা বা ০.৮ শতাংশ।

সিঙ্গার বিডি ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত অর্থ বছরে বিনিয়োগকারীদের ৩০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ৩১ মার্চ ২০২১ সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২১) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৮১ পয়সা। যা গত বছর প্রথম প্রান্তিকে ছিল ১ টাকা ১৯ পয়সা।

২ কোম্পানির ১ কোটি ৮০ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড লিমিটেড এবং মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্স লিমিটেডের দুই উদ্যোক্তা পরিচালক ১ কোটি ৮০ লাখ শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পাওয়ার গ্রিড: রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিডের করপোরেট পরিচালক বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪১টি শেয়ার বিক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছিল।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই করপোরেট উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি। তাই বাকি ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫৬০টি শেয়ার বিক্রি করার জন্য গত ৮ জুলাই ২০২১ তারিখ ফের ঘোষণা দিয়েছে। পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে অবশিষ্ট শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করবে করপোরেট উদ্যোক্তাটি।

মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্স: মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক মো: আলি আসগার তার কাছে থাকা ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩০২টি শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঘোষণাকৃত শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করবেন এই উদ্যোক্তা।

ডিএসইতে লেনদেনের নেতৃত্বে বস্ত্র ও বিবিধ খাত: সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করছে বস্ত্র ও বিবিধ খাত। এই দুই খাতে সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ডিএসই মোট লেনদেনের ৩২.৮০ শতাংশের বেশি। সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে। খাত দুটির মধ্যে আলোচ্য সপ্তাহে বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে ডিএসই মোট লেনদেনের ১৮.৬০ শতাংশ। অন্যদিকে, বিবিধ খাতে লেনদেন হয়েছে ১২.৬০ শতাংশ।

এছাড়া, বিদায়ী সপ্তাহে সাধারণ বিমা খাতে লেনদেন হয়েছে ৯.৮ শতাংশ, জীবন বিমা খাতে ৬ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ১.৬ শতাংশ, বস্ত্র খাতে ২৪ শতাংশ, আর্থিক খাতে ৪.৮ শতাংশ, ট্যানারী খাতে ১.২ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ৮.৩ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ২.৪ শতাংশ,

বিবিধ খাতে ৮.৮ শতাংশ, সেবা খাতে ১.৪ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৮.৯ শতাংশ, টেলিকম খাতে ১.৫ শতাংশ, সিরামিক খাতে ০.৯ শতাংশ, পেপার খাতে ১ শতাংশ, জ্বালানি খাতে ৪ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ১০.৮ শতাংশ, ভ্রমণ ও আবাসিক খাতে ০.৬ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ২.৭ শতাংশ, জুট খাতে ০.১ শতাংশ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১.৪ শতাংশ।

প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের নাম পরিবর্তন হচ্ছে: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড নাম পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। এই জন্য প্রতিষ্ঠানটি বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে আবেদন করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পরিচালনা করার জন্য নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে কোম্পানিটি। গত ৬ জুন প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৩৪০তম বোর্ড সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন কোম্পানিটির পরিচালকরা।

সিদ্ধান্ত অনুসারে, ‘প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’কে ‘প্রাইম ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’এ পরিবর্তন করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে আবেদনের নির্দেশনা দেয়া হয় ওই বোর্ড সভায়।

গত ১৬ জুন আইডিআরএ’র কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স জানিয়েছে, বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার একটি দেশ। এখানে অনেকগুলো ইসলামী ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংক ও বিমা খাত দু’টি পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত। ইসলামী শরীয়ার ভিত্তিতে বীমা পরিচালনা করা গেলে ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাবসায়িকভাবে বিমা কোম্পানি লাভবান হবে।

এসব দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে গত ৬ জুন ২০২১ অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ৩৪০তম সভায় প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালনা জন্য কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে প্রাইম ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড নামকরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের সুদিন ফিরেছে সোনালী আঁশে: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার আরোপিত কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যেই সীমিত পরিসরে লেনদেনের মাধ্যমে আরও একটি সপ্তাহ পার করলো পুঁজিবাজার। গত সপ্তাহে সোনালী আঁশ খ্যাত পাট খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সুদিন ফিরেছে বিনিয়োগকারীদের। আলোচ্য সময়ে এ খাত থেকে সর্বোচ্চ রিটার্ন পেয়েছেন তারা। এ খাতে রিটার্নের হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

সাপ্তাহিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে ২০টি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা ১৬টি থেকে রিটার্ন পেয়েছেন। এর মধ্যে পাট খাতের বাজার মূলধন ২১০ কোটি টাকা।

এ খাতের মাত্র তিনটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। পাটের পর যে খাত থেকে বিনিয়োগকারীরা বেশি রিটার্ন পেয়েছেন, তা হলো মিউচুয়াল ফান্ড খাত। এ খাতে রিটার্নের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। যা আমানতের সুদের হারের চেয়ে বেশি। এ খাতের বাজার মূলধন ৪ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। রিটার্নের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে কাগজ ও প্রকাশনা। খাতটিতে রিটার্নের হার ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

এছাড়া, সিমেন্ট ও আইটি খাত থেকে বিনিয়োগকারীরা ৪ দশমিক ৭ শতাংশ রিটার্ন পেয়েছেন। বস্ত্র খাত থেকে বিনিয়োগকারীরা ৩ দশমিক ২ শতাংশ, বিবিধ খাত থেকে ৩ দশমিক ১ শতাংশ, ফার্মাসিউটিক্যাল খাত থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ, সেবা খাত থেকে ২ দশমিক ১ শতাংশ, সিরামিক খাত থেকে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, চামড়া খাত থেকে ১ দশমিক ২ শতাংশ, নন- ব্যাংকিং আর্থিক খাত থেকে ১ দশমিক ১ শতাংশ,

জ্বালানি খাত থেকে দশমিক ৮ শতাংশ, খাদ্য খাত থেকে দশমিক ৪ শতাংশ, প্রকৌশল খাত থেকে দশমিক ৩ শতাংশ এবং টেলিকমিউনিকেশন খাত থেকে দশমিক ২ শতাংশ রিটার্ন পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যেসব খাত থেকে বিনিয়োগকারীরা রিটার্ন পাননি সেগুলো হচ্ছে—ব্যাংকিং, জীবন বিমা, সাধারণ বিমা ও ভ্রমণ।