দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারসহ অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ তদারকির জন্য এবার দৈনিক ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর লেনদেনের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিদিনের তথ্য বিকেল ৫টার মধ্যে পাঠাতে বলেছে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোর নিজস্ব ও সাবসিডিয়ারিসহ দৈনিক কোথায় কী পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে তা দৈনিক ভিত্তিতে জানাতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দিয়ে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা উদ্বৃত্ত তারল্য যেন পুঁজিবাজারসহ অনুৎপাদনশীল খাতে চলে না যায় সেজন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের প্রভাব মোকাবেলায় সরকারি প্রণোদনার আওতায় কম সুদের ঋণের একটি অংশ পুঁজিবাজার, জমি, ফ্ল্যাট কেনাসহ অনুৎপাদনশীল খাতে চলে যাওয়ার তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে গত ২৫ জুলাই সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়। এছাড়া প্রণোদনার আওতায় ঋণের ব্যবহারসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে পরবর্তীতে আরও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণের সঠিক ব্যবহার যাচাইয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ দৈনিক ভিত্তিতে মুদ্রাবাজারে লেনদেন ও বিনিয়োগের তথ্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, মুদ্রাবাজারে দৈনিক লেনদেনের তথ্য সংযুক্ত ছক অনুযায়ী পাঠাতে হবে। দৈনিক ভিত্তিতে বিকেল ৫টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগে এ তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের নিজস্ব বিনিয়োগের তথ্য পাঠাতে হবে। যেখানে নতুন বিনিয়োগ, মোট বিক্রয়মূল্য (সেল ভ্যালু) ও নেট এক্সপোজার পাঠাতে হবে। প্রতিদিনের মার্জিন ঋণের পরিমাণ, স্থিতি ও সমন্বয় জানাতে হবে। এছাড়া নিজস্ব ও সাবসিডিয়ারিতে প্রতিদিনের ঋণসীমা, তহবিল ছাড়, তহবিল সমন্বয় এবং নেট এক্সপোজারের তথ্য দিতে হবে।

বিভিন্ন কারণে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য থাকলেও আশানুরুপ ঋণ না বৃদ্ধির কারণে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য জমা হয়েছে। গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর অলস তারল্য দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে।

ডিএসই সূচকের উত্থানে ১০ কোম্পানির অবদান: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রড ইনডেক্সের বড় উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ১০ কোম্পানি। বৃহস্পতিবার ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স বেড়েছে ৭৬ পয়েন্ট। এর ভেতরে ৪৫ পয়েন্টই এই ১০ কোম্পানির অবদান। এই ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকো, বিকন ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ার, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, আইসিবি, আইপিডিসি, লাফার্জহোলসিম এবং রেনাটা লিমিটেড।

এই ১০ কোম্পানির মধ্যে সব চেয়ে বেশি অবদান রয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের। আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৪.৭৮ শতাংশ। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায়। শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্সে কোম্পানিটি অবদান রেখেছে ১০.২৯ পয়েন্ট।

বিকন ফার্মা: আজ সূচক বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির অবদান ছিলো ৮.০২ পয়েন্ট। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৭.২৭ শতাংশ। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১৩ টাকা ৯০ পয়সায়।

ইউনাইটেড পাওয়ার: আজ সূচক বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির অবদান ছিলো ৫.৪২ পয়েন্ট। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১.৩৫ শতাংশ। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯৩ টাকা।

লংকাবাংলা ফাইন্যান্স: আজ সূচক বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির অবদান ছিলো ৪.১৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৬৩ শতাংশ। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪০ টাকা ৩০ পয়সায়।

আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক: আজ সূচক বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির অবদান ছিলো ৩.৫৭ পয়েন্ট। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৬৭ শতাংশ। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬ টাকা ১০ পয়সায়।

বেক্সিমকো ফার্মা: আজ সূচক বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির অবদান ছিলো ৩.৩১ পয়েন্ট। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১.৬৩ শতাংশ। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯৩ টাকা ৭০ পয়সায়।

আইসিবি: আজ সূচক বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির অবদান ছিলো ৩.২৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১.৪২ শতাংশ। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২১ টাকা ৭০ পয়সায়।

আইপিডিসি: আজ সূচক বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির অবদান ছিলো ২.৪৯ পয়েন্ট। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৭৫ শতাংশ। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৪ টাকা ৮০ পয়সায়।

লাফার্জহোলসিম:আজ সূচক বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির অবদান ছিলো ২.২৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১.১৯ শতাংশ। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৭ টাকা ৯০ পয়সায়।

রেনাটা: আজ সূচক বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির অবদান ছিলো ২.২২ পয়েন্ট। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ০.৬৭ শতাংশ। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪২৭ টাকা ৮০ পয়সায়।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ভালো লভ্যাংশের প্রভাব নেই পুঁজিবাজারে: মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ভালো লভ্যাংশের প্রভাব নেই পুঁজিবাজারে। ফলে এ খাতের প্রতি দিন দিন আগ্রহ কমেছে বিনিয়োগকারীদের। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ব্যাপক দরপতনের কবলে পড়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ৩টির দর বেড়েছে।

অথচ বুধবারও এই খাতের ৮টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এই পর্যন্ত এখাতে ১৪টি ফান্ড ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার দুটি ফান্ড চমক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। এর মধ্যে একটি এশিয়ান টাইগার অনটি সিএপিএম ইউনিট ফান্ড।

তবে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। পাশাপাশি ফান্ডগুলোর মুনাফায়ও রয়েছে চমক। কিন্তু তারপরও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দরে ইতিবাচক প্রভাব না পড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। ভালো ডিভিডেন্ড ও মুনাফা ঘোষণার পরও চাঙ্গাবাজারে বড় ইনভেস্টরদের অনাগ্রহে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছেনা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে।

জানা যায়, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে সূচকে রেকর্ড করেছে। জুন ক্লোজিং হওয়া প্রায় সবগুলো খাতের দর বাড়লেও এদিন পিছিয়ে ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ড। আজ এ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৩৭টির মধ্যে দর কমেছে ১৬টি ফান্ডেরই দর কমেছে।

বিপরীতে দর বেড়েছে ৩টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৭টি এবং একটির লেনদেন হয়নি। আজ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৭ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৭৯১টি ইউনিট ১৩ হাজার ১৭২বার হাতবদল হয়, যার বাজারমূল্য ৭৪ কোটি ৫৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এদিকে, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থপানায় ৮ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটহোল্ডারদের জন্য গতকাল ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, জুন ক্লোজিংয়ের ২৯টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে প্রায় সবগুলো ফান্ডই সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) রেকর্ড পরিমাণ আয় দেখিয়েছে। ইতোমধ্যে আয়ের সাথে সামঞ্জস্য ডিভিডেন্ড দিলেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

এর প্রধান কারণ হলো বড় ইনভেস্টরদের অংশগ্রহন নেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডে। অথচ বর্তমানে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো যে পরিমাণ ডিভিডেন্ড দিচ্ছে তা সত্যিই ইতিবাচক। এখাতে বিনিয়োগ করে পুঁজি ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যদি বড় ইনভেস্টররা এখাতে লেনদেনে অংশগ্রহণ করে তবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে খাতটি।

কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন,২১) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ৩০ জুন ২০২১ সমাপ্ত ছয় মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে

জানা গেছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫৬ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ২৮ পয়সা। আর অর্ধ-বার্ষিকীতে (জানুয়ারি-জুন,২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ০১ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৬৩ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১৯ টাকা ৮৩ পয়সা।

সিএপিএম ইউনিট ফান্ডের লভ্যাংশে চমক: বে-মেয়াদী (ঙঢ়বহ-বহফ) মিউচুয়াল ফান্ড সিএপিএম ইউনিট ফান্ডের ইউনিটহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ফান্ডের ইউনিটহোল্ডাররা সর্বশেষ হিসাববছরের (জুলাই’২০-জুন’২১) জন্য ২৯.৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পাবেন। গত ৩০ জুন, ২০২১ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

ফান্ডটির সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। ক্রয় মূল্য অনুসারে গত ৩০ জুন তারিখে ফান্ডটির প্রতি ইউনিটের নিট সম্পদ মূল্য ছিল ১৩৪ টাকা ২ পয়সা। আর বাজার মূল্যে ইউনিট প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ১৪০ টাকা ৯৩ পয়সা। আলোচিত বছরে ফান্ডের ইউনিট প্রতি আয় (ইপিইউ) ছিল ৪৭ টাকা ৭১ পয়সা।

আলোচিত ফান্ডটির সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে আছে সিএপিএম (ক্যাপিটাল অ্যান্ড অ্যাসেট পোর্টফোলিও) লিমিটেড। আর এর ট্রাস্টির দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (বিজিআইসি) লিমিটেড।