পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন এক মাসে আড়াই হাজার নতুন বিনিয়োগকারীরা
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জুন-জুলাইয়ে বিপুল পরিমাণ বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়। সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় এ সময়ে বন্ধ হয়ে যায় প্রায় সাত লাখ বিও। মূলত নতুন নিয়মে আইপিও শেয়ার বণ্টন হওয়ার কারণেই এই বিও অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তবে পরের মাসে (আগস্টে) আবারও পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন নতুন বিনিয়োগকারীরা।
নতুন নিয়মে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) শেয়ার বরাদ্দ দেয়ায় আগে থেকেই অনুমান করা যাচ্ছিল চলতি বছরে বন্ধ হয়ে যাবে বিপুলসংখ্যক বিও অ্যাকাউন্ট। বাস্তবেও তাই হয়েছে। জুন শেষে বন্ধ হয়ে গেছে এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি বিও হিসাব। পরে জুলাই শেষে আরও পাঁচ লাখ বিও বন্ধ হয়ে যায়। সিডিবিএল সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
জানা যায়, জুলাই শেষে পুঁজিবাজারে বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ১৯ লাখ ৭০ লাখ ৩৩টি, আগস্ট শেষে যার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৫টি। অর্থাৎ এ সময়ে বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে দুই হাজার ৩৫২টি। নতুন নিয়মে বেনিফিসিয়ারি ওনার্স (আইপিও) শেয়ার পেতে সেকেন্ডারি মার্কেটে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে এমন শর্তের কারণে এবার বেশিরভাগ বিও বাতিল হয়েছে। কারণ যারা দুই এর অধিক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন তাদের সিংহভাগের প্রতিটি বিও’র বিপরীতে ২০ হাজার টাকা নেই। মূলত সে কারণেই তারা অ্যাকাউন্ট নবায়ন করেনিনি।
বিএসইসি মনে করছে, সবার জন্য আইপিওর শেয়ার এটা ভালো সিদ্ধান্ত। এতে সব বিনিয়োগকারী উপকৃত হচ্ছেন। যে বিওগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তা অপ্রয়োজনীয় অ্যাকাউন্ট। কিছু সুযোগসন্ধানী মানুষ ভিন্ন ভিন্ন নামে এসব বিও খুলেছেন। তাদের জন্য যারা প্রকৃত বিনিয়োগকারী, তারা আইপিওর শেয়ার পান না। তাই সবার জন্য আইপিও শেয়ার বরাদ্দ হয়েছে তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই উপকৃত হয়েছেন।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০ সাল শেষে পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৭টি, পরবর্তীতে যা ১৯ লাখ ৭০ হাজারে নেমে আসে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। অনেকেই শুধু আইপিওর শেয়ারের জন্য অ্যাকাউন্ট খুলে রাখেন। যার অধিকাংশই পরে আর নবায়ন করেন না। এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে আলাপ করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা বলেন, এখন যারা অ্যাকাউন্ট খুলছেন তারা প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা। এরা পুঁজিবাজারে ব্যবসা করার জন্য এসেছেন। অন্যদিকে আগে যারা ভিন্ন ভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট খুলে ব্যবসা করতেন তারা ছিল আইপিও শিকারি। ২০১০ সালের ধসের পর আর স্বরূপে ফিরতে পারেনি পুঁজিবাজার।
মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারও পতনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যার ধারাবাহিক ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে। আর চলতি বছর বাজার ভালো থাকলে সবার জন্য আইপিও শেয়ার ইস্যুতে অনেকে অ্যাকাউন্ট সচল রাখতে চাননি। এ নিয়ে গত সাত বছরে নবায়ন না করায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১০ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট।
নিয়মানুযায়ী, জুনে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেয়া হতো।
তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়।
এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।