পুঁজিবাজারে গুজব ইস্যুতে হঠাৎ হার্ডলাইনে বিএসইসি
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে ইদানিং গুজব মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এতোদিন ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নিয়ে নানা গুজব ছড়ালেও সম্প্রতি তা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। ফলে এরই ধারাবাহিকতায় শেয়ার দর বাড়া কমা নিয়ে নানান ধরণের পোষ্ট দিয়ে বিনিয়োগকারীদেরকে হতাশায় ফেলছে চক্রগুলো।
আর এমন চক্রগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরও বেশি কঠোর হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই মধ্যে বিটিআরসির সাথে কথা বলে ৩১টি ফেসবুক আইডি বন্ধ করেছে বিএসইসি।
আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) বুধবার ‘সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে করে শেয়ারবাজারে গুজব সৃষ্টি প্রতিরোধ’সংক্রান্ত এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম, বিএসইসির পরিচালক রাজিব আহমেদ, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, বিটিআরসির মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক (সিএ অপারেশন ও নিরাপত্তা) তারেক এম বরকতউল্লাহ-সহ সংস্থাগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিএসইসি’র প্রতিনিধিরা শেয়ারবাজারে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যে কোন তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য বা অন্য কোন বিষয়ে পূর্বানুমান কিংবা বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ক্ষুন্ন করে এমন মন্তব্য বা পোস্ট প্রতিরোধে গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া সিকিউরিটিজ মার্কেট ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যে কোন ব্যক্তি, ব্যক্তিবর্গ বা কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সোস্যাল মিডিয়া বা অন্য কোন মাধ্যমে বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসই এর নাম বা লোগো ব্যবহার করে কোন তথ্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়ে সম্ভাব্য কৌশল প্রণয়ন ও অংশীজনদের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করার বিষয়টি আলোচিত হয়।
এর আগে গত ২৪ মে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পরিচালক রাজিব আহমেদ এর নেতৃত্বে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার বাজার নিয়ে গুজব রটনাকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ডিএসই ইনভেস্টরস ক্লাব, উই ওয়ান্ট টু বি গেইনার, দ্য থার্ড আই, শেয়ার বাজার- ডিএসই ইনভেস্টরস ক্লাব, পাবলিক বিজনেস ক্লাব, শেয়ার মার্কেট সুপারস্টার গ্রুপ, দ্য লয়াল ক্লাব, শেয়ার বাজারে আড্ডা, রাকিব প্রফিট অ্যান্ড জয়, শেয়ারবাজার জিন্দাবাদ, স্টক মার্কেট টুডে, বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জোট, রকস্টার ক্লাব, রয়্যাল কিং মানি মেকারস,
বাদশা জোন ইত্যাদি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন সিকিউরিটিজের বাজার মূল্যকে কৃত্রিমভাবে প্রভাবিত করছে বলে উঠে আসে। এর প্রেক্ষিতে বিটিআরসির প্রতিনিধিরা এই ধরণের বিভিন্ন গ্রুপ ও ব্যক্তিবর্গের আইডি নিষ্ক্রিয়করণ এর বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন এবং ভবিষ্যতে তা আরও কার্যকরী ও সমন্বিতভাবে করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রি. জে. মো. নাসিম পারভেজ জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ৮ ধারা এর (১ ও ২) উপধারা অনুযায়ী বিএসইসি ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালকের মাধ্যমে ডিজিটাল মাধ্যম থেকে কনটেন্ট অপসারণ বা ব্লক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করবে।
এছাড়া তিনি বিটিআরসি’র কনটেন্ট রিপোর্টিং সিস্টেমের (সিআরএস) মাধ্যমে কিভাবে শেয়ার বাজারে গুজব সৃষ্টিকারী পোস্ট সম্পর্কে অভিযোগ করা যায় তা নিয়ে বিএসইসি ও বিটিআরসি’র মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক (সিএ অপারেশন ও নিরাপত্তা) তারেক এম বরকতউল্লাহ তার সংস্থার পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে গুজব সৃষ্টি প্রতিরোধে সম্ভাব্য সব ধরণের সহযোগিতা প্রদানে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বেগবান করতে পুঁজিবাজারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার নিয়ে যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে করে গুজব সৃষ্টি করে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন তা নস্যাৎ করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন বিটিআরসি ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি-সহ অন্যান্য অংশীজনের সাথে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত/বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে আলোচনা, পরামর্শ ও সমন্বয় সংক্রান্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পরিপালন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ মোতাবেক শাস্তির বিধান সংক্রান্ত কমিশনের আদেশ পরিপালন ও সংশ্লিষ্ট সকলকে উক্ত সর্তকতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বক্তব্যে তিনি ‘ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি’কার্যক্রমকে আরও বেগবান ও সচেতনতা সৃষ্টির উপরও তাগিদ দেন। তিনি উল্লেখ করেন, তদন্ত কমিটির অনুরোধের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ৩১টি গুজব সৃষ্টিকারী আইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়। অন্যান্য আইডিগুলোও পর্যবেক্ষণাধীন রয়েছে; পর্যায়ক্রমে গুজব সৃষ্টিকারী আইডিসমূহের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় বিটিআরসি’র সাথে প্রতি তিন মাসে একটি করে সমন্বয় সভা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও বিএসইসি’র পরিচালক রাজিব আহমেদ ও বিটিআরসি’র জৈষ্ঠ্য সহকারী পরিচালক তৌসিফ শাহরিয়ার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।