সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের যে কারণে দরপতন
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি সিভিও পেট্রোক্যামিকেল রিফাইনারি লিমিটেড রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সঙ্গে ন্যাপথা ক্রয় এবং বিক্রয় সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিটি হয়েছে আগামী ৫ বছরের জন্য। কোম্পানির পক্ষ থেকে বিষয়টি ডিএসইর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। এতে করে বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ার পরিবর্তে কমে সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, কোম্পানিটির এত বড় চুক্তির খবরে যেখানে শেয়ারের দর বাড়ার কথা, সেখানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে এবং কমার শীর্ষ স্থান দখল করেছে। যা বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কোম্পানিটির চুক্তির খবর আগেই বাজারে ছড়িয়েছে এবং একটি গোষ্ঠি কোম্পানিটির শেয়ার দরও বাড়িয়েছে। এখন চুক্তির খবরটি প্রকাশ করে চড়া দরে শেয়ার বিক্রি করছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই মাস আগে গত জুন মাসের ২৮ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিলো ৮৩ টাকা ৭০ পয়সা। সেখান থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর গত ২২ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ ২৬১ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এতে করে কোম্পানিটির শেয়ার দর গত দুই মাসে ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির এত বড় চুক্তির খবরে শেয়ার দর না বেড়ে উল্টো কমেছে।
এর ফলে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছে কোম্পানিটি আগে থেকেই তাদের চুক্তির খবর ছড়িয়ে শেয়ার দর বাড়িয়েছে। এখন চুক্তির ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটিতে বিনিয়োগ করছে। আর যারা আগে থেকে শেয়ার দর বাড়িয়েছে তারা শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে। এতে সংবেদনশীল খবরেও বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির কর্মকর্তারা নিজেরাই এর শেয়ার দর বৃদ্ধির সংগে সম্পৃক্ত। না হলে চুক্তির খবরে শেয়ার দরে বিপরীত চিত্র হতে পারে না। কোম্পানিটি ইনস্ইাডার ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করেছে। নীতি বিবর্জিত এসব কোম্পানিগুলোর আচরণের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। তা না হলে শেয়ারবাজার কারসাজিকারিদের জন্য অভয় অরন্যে পরিণত হবে। এর আগে কোম্পানিটির শেয়ার দর কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা জানতে চেয়ে ডিএসই জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে তিন বার চিঠি দিয়েছে। কোম্পানিটি প্রতিউত্তরে জানিয়েছে, কোন সংবেধনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারটির দর বাড়ছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি বড় চুক্তির খবর দিয়েছে।
চুক্তিটিতো একদিনে বা রাতারাতি হয়ে যায়নি। অন্তত দুই-তিন মাস আগে থেকে শুরু হয়েছে। তাহলে কোন কারণ ছাড়া শেয়ার দর বাড়ছে বলে কোম্পনিটি যে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছে, তার খেসারত কে দেবে। মিথ্যা এ তথ্যের অভিযোগে কী কোম্পানিটির শাস্তি হওয়া উচিত নয়?
এ বিষয়ে জানতে কোম্পানি সচিব খাজা মহিউদ্দিন হোসাইনের সঙ্গে অনেক চেষ্টা করে দেশ প্রতিক্ষনের পক্ষে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রতিক্ষনের প্রশ্ন শুনে কোন উত্তর না দিয়ে ফোনটি কেটে দেন। এরপর বারবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের এ ধরণের আচরণই বলে দেয় এরা শেয়ার কারসাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা সব সময় গণমাধ্যমের প্রশ্ন এড়িয়ে যায়। কারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যে এরা প্রতারণা করে, সেজন্য তারা গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে চায় না। বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন, এসব অখ্যাত কোম্পানিগুলো এখন শেয়ারবাজার চাঙ্গা হওয়ার সুবাদে নিজেদের জাত ব্যবসা বাদ দিয়ে শেয়ার কারসাজির ব্যবসায় নেমে পড়ছেন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১১ টাকা বা ৪.২১ শতাংশ। আগেরদিন কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছিলো ২৬১ টাকা ২০ পয়সায়। বৃহস্পতিবার তা কমে অবস্থান করছে ২৫০ টাকা ২০ পয়সায়। লোকসানের কারণে কোম্পানিটির পিই রেশিও নেগেটিভ। গত বছর ২০২০ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোন ডিভিডেন্ড দেয়নি।
সর্বশেষ তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০- মার্চ’২১) নয় মাসে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান দেখিয়েছে ১ টাকা ৯৭ পয়সা। আগের বছর লোকসান ছিলো ৩৭ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানিটির সম্পদ মূল্য দেখিয়েছে ১১ টাকা ৯৯ পয়সা। বিপরীতে সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫০ টাকা ২০ পয়সায়। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আর শেয়ার সংখা ২ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।