দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পদ্মা ও মেঘনায় রাতের আঁধারে চলছে ইলিশ শিকার। মুন্সীগঞ্জ থেকে শুরু করে মুলাদী উপজেলা পর্যন্ত বিভিন্ন নদীতে জাল দিয়ে ইলিশ ধরছে শতাধিক জেলে। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে আবার কখনও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে মাছ ধরছে জেলেরা। দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও রাতে প্রশাসনের কেউ নদীতে যান না। এই সুযোগেই শত শত জেলে ধরছে মা ইলিশ। ঢাকা থেকে নৌপথে বরিশাল যাওয়ার পথে দেখা গেছে এ দৃশ্য।

জানা গেছে, নৌকাতেই এসব ইলিশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা জেলেদের কাজটি করতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনার তীর লাগোয়া ১০টি স্থানে রাত গভীর হলেই জমে অবৈধ ইলিশের হাট। প্রতিবছরের মতো এবারও স্থানীয় প্রশাসন মা ইলিশ শিকারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু ঠেকানো যাচ্ছে না শিকারিদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে জানালেন, মাছ ব্যসায়ীরাই জেলেদের জাল ফেলতে বাধ্য করেন। দাম বেশি দেওয়ার লোভও দেখায় কেউ কেউ। জেলেদের যারা অগ্রিম টাকা নেয় তারা বাধ্য হয় মাছ ধরতে। প্রশাসনের কেউ কেউ অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন বলেও অভিযাগ পাওয়া গেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়ছে, আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মোট ১৫-১৭ দিন ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুম। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসে নদীতে। তাদের প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে বছরের তিন সপ্তাহ ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। এবার নিষিদ্ধ থাকছে ৪-২৫ অক্টোবর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো মুন্সীগঞ্জের পর থেকে নদীতে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারে না। রাতে জাল ফেলে জেলেরা নৌকায় বসে থাক। বড় নৌযানকে আসতে দেখলেই তারা আলো জ্বালিয়ে নৌযানগুলোকে দিক বদলানোর নির্দেশ দেয়। চালকরাও জাল এড়াতে জেলেদের দেখানো পথে লঞ্চ ঘোরাতে বাধ্য হন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সোমবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা থেকে হুলারহাটগামী এমভি ঈগল-৮ লঞ্চের চালক জানিয়ছেন, ‘এগুলো দেখে আমরা অভ্যস্ত। স্বাভাবিক সময়েও জেলেদের নির্দেশনায় আমাদের লঞ্চ চালাতে হয়। এখন তো নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ। তারপরও তাদের মাছ ধরতে দেখি।’

১৫ অক্টোবর শুক্রবার বরিশাল থেকে ঢাকাগামী এমভি অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের এক চালক জানালেন, ‘সরকার এই সময় মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে জাল ফেলা নিষিদ্ধ করেছে। এ সময় আমাদের স্বচ্ছন্দে নৌযান চালানোর কথা। কিন্তু সেটার জো নেই। রাতভর জেলেদের টর্চের আলো এসে পড়ছে আমাদের চোখে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই জানলাম। খোঁজ নিচ্ছি। কেউ যদি রাতে জাল ফেলে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’-এর অধীনে প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত ও বিপণন নিষিদ্ধ।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হলে কমপক্ষে এক থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। উল্লেখ্য, দেশের অভ্যন্তরীণ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকা এবং নদ-নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ করছে নৌবাহিনীর সাতটি জাহাজ।

অভিযানের অংশ হিসেবে সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার ও কুতুবদিয়া অঞ্চলে বানৌজা মধুমতি, বরিশালে বানৌজা বরকত, পিরোজপুরে বানৌজা তিস্তা, চাঁদপুরে বানৌজা অতন্দ্র, খুলনায় বানৌজা গোমতী, বাগেরহাটে বানৌজা তুরাগ এবং পটুয়াখালীতে এলসিভিপি-০১২ বিশেষ টহল দিচ্ছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজকে সংক্ষেপে বলা হয় ‘বানৌজা’।