হোসাইন আলী, বরগুনা, দেশ প্রতিক্ষণ: সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে বরগুনার বিষখালী ও পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে চলছে পুরোদমে ইলিশ শিকার। স্থানীয় বাজারগুলো ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় বেশ জমজমাট। তবে প্রতিটি মা ইলিশের পেটেই ডিম রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। প্রজনন মৌসুমকে নিরাপদ রাখতে সরকারঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। সোমবার (২৫ অক্টোবর) দিনগত মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর বিষখালী ও বুড়িশ্বর নদীতে ফের মাছ শিকারে নেমেছেন জেলেরা।

জেলেরা বলছেন, আগের তুলনায় জালে অনেক বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে। বর্তমানে বাজারে ইলিশের দামও আগের তুলনায় বেশি থাকায় জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে।

তবে হাসান, রফিক, ইদ্রিস ও কালাম নামের কয়েকজন জেলে জানান, ধরা পড়া বেশিরভাগ মাছেই ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যথাসময়ে নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারেনি। তাই শিকার করা প্রতিটি ইলিশের পেটেই ডিম রয়ে গেছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রচুর ইলিশের সরবরাহ রয়েছে। ক্রেতাও অনেক বেশি। তবে বিক্রি কম হচ্ছে। এজন্য তারা জাটকা ও মাছের পেটে ডিম থাকাকে দায়ী করছেন। বর্তমানে বরগুনার বাজারে জাটকা প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা এবং এক কেজি থেকে তার বেশি ওজনের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছবিক্রেতা ছগির হোসেন টিটু বলেন, বাজারে প্রচুর পরিমাণে ইলিশের সরবরাহ রয়েছে। দামও আগের তুলনায় অনেক বেশি। তাই বিক্রি কম হচ্ছে। বিক্রেতা ইব্রাহিম রাজ বলেন, ইলিশে বাজার সয়লাব থাকলেও বেশিরভাগ জাটকা এবং পেটে ডিম রয়েছে। তাই ক্রেতাদের চাহিদাও কম।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বরগুনা বাজারে মাছ কিনতে এসেছিলেন সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতকাল এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ কিনেছি। বাসায় নিয়ে দেখি পেটভরা ডিম। তাই আজ আর ইলিশ কিনবো না। সাইফুল ইসলাম রাফিন নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, আগের তুলনায় ইলিশের দাম অনেক বেশি। আমি দর-দাম করে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের দুই কেজি ইলিশ কিনেছি ১৭০০ টাকায়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, সারাদেশের মতো বরগুনায়ও প্রশাসন, পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের যৌথ অভিযানে এবারের অভিযান সফল হয়েছে। খবর পেয়েছি জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। গতবছর শীতে নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী এবার আরো বেশি পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছি।

নিষেধাজ্ঞা মৌসুম শেষেও ইলিশের পেটে ডিম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান প্রজনন মৌসুমের পরেও প্রজনন মৌসুম থাকে। অনেক মা ইলিশ এরই মধ্যে প্রজনন করেছে। আবার অনেক ইলিশের পেটে এখনো ডিম রয়েছে। অনেক সময় ইলিশের প্রজননের জন্য প্রধান প্রজনন মৌসুমের পরেও দুই মাস বা তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। ‘নদীতে বেশিরভাগ মা ইলিশ এখনো প্রজনন করতে পারেনি। প্রজননের জন্য হয়তো আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তাই জেলেদের জালে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ছে।’