দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা পূরণে পরিচালক পদে লোক খুঁজছে বিভিন্ন কোম্পানি। দুই শতাংশ শেয়ার কিনেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৯ কোম্পানির যে কোনো একটিতে পরিচালক হওয়ার সুযোগ থাকলেও কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

এর ফলে দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও নির্ধারিত পরিমাণের শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলো কোনো শেয়ারধারী পরিচালক পাচ্ছে না। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও কোম্পানিগুলোর জন্য শেয়ারধারী পরিচালক খুঁজে পাচ্ছে না। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শেয়ারধারী পরিচালক না পাওয়ার কারণ হিসেবে বিএসইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলোর দুর্বল মৌলভিত্তি, দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ ও লোকসানে থাকার কারণে কেউ আগ্রহী হচ্ছেন না। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন। আগের উদ্যোক্তা-পরিচালকরা প্রতি বছর বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে পরিশোধিত মূলধন অস্বাভাবিক বাড়িয়েছেন। তাই এখন কেউ দুই শতাংশ শেয়ার কিনতে চাইলে অনেক বেশি অর্থ দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। আবার বিনিয়োগের বিপরীতে কাক্সিক্ষত রিটার্ন অনিশ্চিত।

তাই এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে পরিচালক হতে চাইছেন না কোনো বিনিয়োগকারী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক না পেয়ে শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণে ব্যর্থ দুর্বল মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে এসইসি। এতে করে কয়েকটি কোম্পানির মৌলভিত্তিতে কিছুটা পরিবর্তন এলেও অধিকাংশ কোম্পানি আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে। কোম্পানিগুলো সচল করতে হলে নতুন বিনিয়োগ প্রয়োজন।

কিন্তু তা জোগাড় করতে পারছেন না স্বতন্ত্র পরিচালকরা। আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে এসব কোম্পানিতে ব্যাংকও ঋণ দেবে না। এমন পরিস্থিতিতে এসইসি চাইছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোতে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নিয়োগ দিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির মাধ্যমে গতি ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু শেয়ারহোল্ডার পরিচালক না পাওয়ায় কোম্পানিগুলোতে সুশাসন ফিরিয়ে আনা এসইসির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১১ সালে ড. খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বের কমিশন তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপর নয় বছর পার হলেও ৪৩টি কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক এসইসির নির্দেশনা পূরণে ব্যর্থ হয়। এমন পরিস্থিতিতে এসইসির নতুন কমিশন ২০২০ সালের ২৭ জুলাই ন্যূনতম শেয়ার ধারণে কোম্পানিগুলোকে ৬০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেয়।

কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কিনতে সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ আইন থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের সময়সীমা ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর শেষ হয়।

অবশ্য নির্ধারিত সময়সীমা পার হলেও বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, সাউথইস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এপেক্স ফুটওয়্যার, বারাকা পাওয়ারসহ ২২ কোম্পানি বিএসইসির শর্ত পূরণ করতে পেরেছে। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছে ১৯ কোম্পানি।

এর বাইরে পিপলস লিজিং অবসায়ন প্রক্রিয়ায় থাকলেও পুনরায় তা সচল করার উদ্যোগ চলছে। এমারেল্ড অয়েলের সাবেক পর্ষদ স্থগিত করে স্বতন্ত্র পরিচালকের মাধ্যমে কোম্পানির পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানিটির উৎপাদন চালু করতে নতুন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে মিনোরি বাংলাদেশের প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিএসইসির নানা উদ্যোগের পরও এখনো যেসব কোম্পানি উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ সম্পন্ন করতে পারেনি সেগুলো হলো: ফ্যামিলিটেক্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, ফাইন ফুডস, ফু-ওয়াং সিরামিকস, ফু-ওয়াং ফুড, অগ্নি সিস্টেমস, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল, আলহাজ টেক্সটাইল, এফএএস ফাইন্যান্স, জেনারেশন নেক্সট, মিথুন নিটিং, ডেল্টা স্পিনিং, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, নর্দান জুট, স্যালভো কেমিক্যাল, ফার্মা এইড ও সেন্ট্রাল ফার্মা।

এরমধ্যে ফু-ওয়াং সিরামিক ও অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজের উদ্যোক্তা-পরিচালকরা বিএসইসি শর্ত পূরণে চেষ্টা চালাচ্ছেন। ফু-ওয়াং সিরামিকসের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে ২১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আর অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ থেকে ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

আর নির্ধারিত পরিমাণের শেয়ার ধারণে এক বছর সময় নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে ফাইন ফুডস লিমিটেড। কোম্পানিটি এক বছরে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশে উন্নীত করতে পেরেছে। বিএসইসির নির্দেশনা সত্ত্বেও ১৪ কোম্পানি কোনো উদ্যোগ নেয়নি।