দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম: আড়াই বছরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছেন আদালত। একই সময়ে আদালতের নির্দেশে দুর্নীতিবাজদের ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দুদক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ৪৩৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩৪ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়। ২০২০ সালে ৩ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকার সম্পত্তি এবং চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩২ টাকার সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হয়।

এর মধ্যে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী এবং কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশের বাড়ি-ফ্ল্যাট-গাড়ি ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আফজাল হোসেন ও তার স্ত্রীর ২টি বাড়ি ও ১টি কমার্শিয়াল স্পেস উল্লেখযোগ্য।

ঘুষের টাকায় চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকায় স্ত্রী ও ভাইয়ের নামে ফ্ল্যাট কেনেন চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সাবেক ওসি মো. রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী। এর মধ্যে স্ত্রী নাসরিন আক্তারের মালিকানাধীন ফ্ল্যাটটি পাঁচলাইশের নাসিরাবাদ এলাকায় জুমাইরা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামের অ্যাপার্টমেন্টের পঞ্চম তলায়।

১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ২ হাজার ১৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি কেনা হয় ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর। অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরীর ওসি রেফায়েতের বড় ভাই আফতাব উল্লাহ চৌধুরীর নামে কেনা ১ হাজার ৪৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি চান্দগাঁওয়ের উদয়ন অ্যাপার্টমেন্টের পঞ্চম তলায়। এটি কেনা হয় ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি। ২০১৭ সালে স্ত্রী নাসরিন আক্তারের দায়ের করা নির্যাতনের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হয়ে ওসি রেফায়েতে বর্তমানে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত আছেন।

অন্যদিকে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণের নামে থাকা ছয়তলা বাড়ি, ফ্ল্যাট ও গাড়ি ক্রোক করা হয় আদালতের নির্দেশে। ক্রোকের আদেশ দেওয়া সম্পত্তির মধ্যে প্রদীপের স্ত্রী নামে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকার দুই ইউনিটবিশিষ্ট একটি ছয়তলা বাড়ি, নগরের মুরাদপুর এলাকার সেমিপাকা বাড়ি, কক্সবাজারে ফ্ল্যাট, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার ছাড়াও রয়েছে বেসিক ব্যাংক আছদগঞ্জ শাখায় ১৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকার একটি একাউন্ট।

ফ্রিজ ও ক্রোক হওয়া সম্পত্তি: চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ১২৭ দশমিক ৪৮৪ একর জমি, ৩০টি বাড়ি-ভবন, ১৪টি ফ্ল্যাট, ১টি প্লট ২৭টি গাড়ি ক্রোক করা হয়েছে। এসব স্থাবর সম্পদের মূল্য ৩২৪ কোটি ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯২ টাকা। একই সময়ে দেশে ৯১৬টি ব্যাংক হিসাব, ৫৬টি সঞ্চয়পত্র ও বন্ড-শেয়ার, ৩টি পিস্তল, ৭টি জাহাজ ফ্রিজ করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বাইরে কানাডায় ১১টি, অস্ট্রেলিয়ায় ২৩টি, সিঙ্গাপুরে ৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। এসব অস্থাবর সম্পদের মূল্য ১ হাজার ১৬৭ কোটি ৭ লাখ ১৫ হাজার ৬০৮ টাকা।

২০২০ সালে দেশে ২৫৬ দশমিক ৩৪৫ একর জমি, ৩৪টি বাড়ি/ভবন, ৩৫টি ফ্ল্যাট, ৭টি কমার্শিয়াল স্পেস, ১৭টি গাড়ি ক্রোক করা হয়েছে। এসব স্থাবর সম্পদের মূল্য ১৮০ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৬ টাকা। একই বছর এক হাজার ১১৮টি ব্যাংক হিসাব ও এফডিআর ফ্রিজ করা হয়। এসব অস্থাবর সম্পদের মূল্য বা ওইসব অ্যাকাউন্টে ১৫২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ টাকা।

২০১৯ সালে দেশে ১৪ দশমিক ৪৪ একর জমি, ১৭টি বাড়ি, ১৭টি ফ্ল্যাট, ৯টি প্লট, ৪টি কমার্শিয়াল স্পেস, ৯টি গাড়ি ও ৪টি স্থাপনা আদালতের আদেশে ক্রোক করা হয়। এ ছাড়া দুবাইয়ে দুটি কোম্পানির শেয়ারও ক্রোক করা হয়।

একই বছর দেশে ২৮৮টি ব্যাংক হিসাব, ৬টি বিও হিসাব ও ৩৬টি সঞ্চয়পত্র-বন্ড, জামানত, পলিসি-ইন্স্যুরেন্স ফ্রিজ করা হয়েছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার ৫টি ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে মোট ১১৫ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ২১১ টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। আর একই বছর ১১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে।