দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় (৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৮ জানুয়ারি সকাল ৮টা) নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ১১৬ জন। আর এ সময়ে রোগী শনাক্তের হার পাঁচ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অধিদফতর জানাচ্ছে, শনাক্ত এক হাজার ১১৬ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ৯২১ জন। অর্থাৎ, শনাক্তদের মধ্যে শতকরা ৮২ দশমিক ৫২ শতাংশই ঢাকা জেলার। আর ঢাকা বিভাগে মোট শনাক্ত হয়েছেন ৯৪৩ জন।

শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) শনাক্ত হওয়া এক হাজার ১৪৬ জনের মধ্যে ঢাকা জেলারই ৯০২ জন। অর্থাৎ শনাক্তের ৭৮ দশমিক ৭১ শতাংশই ঢাকা জেলার। তার আগের দিন ( ৬ জানুয়ারি) এক হাজার ১৪০ জনের মধ্যে ঢাকা জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ৯৫০ জন, আর এ বিভাগে মোট শনাক্ত হয়েছেন ৯৭৮ জন। শতাংশের হিসাবে কেবল ঢাকা জেলাতেই শনাক্ত হয়েছেন ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

৫ জানুয়ারি ৮৯২ জনের মধ্যে ৭২৩ জন, ৪ জানুয়ারি ৭৭৫ জনের মধ্যে ৬৩৭ জন, ৩ জানুয়ারি ৬৭৪ জনের মধ্যে ৫৬৮ জন, ২ জানুয়ারি ৫৫৭ জনের মধ্যে ৪৭৭ জন আর ১ জানুয়ারি শনাক্ত হওয়া ৩৭০ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ৩২৭ জন।

এখন পর্যন্ত ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছেন ২১ জন। তারা সবাই ঢাকা জেলার বলে জানিয়েছে জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (জিআইএসএআইডি)।

দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ করোনায় তিন রোগী শনাক্ত হন। মাদারীপুরের শিবচরে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ওই বছরের ১৪ মার্চ। করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯ মার্চ দেশের প্রথম ‘কন্টেইনমেন্ট’ (নিয়ন্ত্রিত এলাকা) ঘোষণা করা হয় শিবচর উপজেলাকে। দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। মিরপুরের উত্তর টোলারবাগের দুই বাসিন্দা মারা যান ২১ ও ২২ মার্চ। এরপর ২৩ মার্চ রাজধানীর টোলারবাগকে সংক্রমণের হটস্পট (অতি ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়।

ওইবার ঢাকা এবং আশেপাশের জেলাগুলো ছিল করোনার হটস্পট। গতবছরের বিধ্বংসী ডেল্টা দেশে ঢোকে সীমান্তবর্তী জেলা দিয়ে। পরে সংক্রমণ ছড়িয়েছে পাশের জেলাগুলাতেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ওমিক্রনের হটস্পটে পরিণত হয়েছে ঢাকা জেলা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দৈনিক সংক্রমণের তথ্য সেই কথাই বলছে। এর সঙ্গে রয়েছে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো।

সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকায় ওমিক্রনের ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন ( গুচ্ছ সংক্রমণ) হয়েছে। সময়মতো প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে সেটা পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে না।’

‘এটা যখন স্থানীয়দের মধ্যে যাবে তখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে ঢাকার বাইরেও যাবে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে ছিল স্পোরাডিক ট্রান্সমিশন (বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন সংক্রমণ)। এখন সেটা ক্লাস্টারে গিয়েছে। এরপর যাবে কমিউনিটিতে।’

দেশে আইসোলেশন সবচেয়ে বেশি দরকার জানিয়ে মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আক্রান্তদের ঘরে রাখতে হবে। তাদের জন্য সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে রোগী বেড়ে যাবে।’

‘ডেল্টা, ওমিক্রন সব ভ্যারিয়েন্টেরই হটস্পট ঢাকা’— মন্তব্য করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওমিক্রনে ২১ জন শনাক্ত হয়েছেন। যাদের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে কেবল তাদের মধ্যে ২১ জন শনাক্ত হয়েছেন। কেবল সরকারি হিসাবে ঢাকা জেলায় যত মানুষ প্রতিদিন শনাক্ত হচ্ছে তাদের নমুনা নিয়ে যদি সিকোয়েন্সিং করা হতো তাহলে হয়তো তারাও ওমিক্রনে আক্রান্ত শনাক্ত হতেন।’

‘ওমিক্রনের কারণে দেশে শনাক্তের সংখ্যা ও হার বাড়ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এবার ঢাকা শহর ছাড়িয়ে ওমিক্রন পুরো দেশে ছড়াচ্ছে।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় যারা ওমিক্রনে শনাক্ত হলেন, তাদের কি সঠিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন হয়েছে? তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং হয়নি। এই মানুষগুলো কত মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন? এর সঠিক ব্যবস্থাপনা করা না গেলে ওমিক্রন সারাদেশে ছড়াতে সময় নেবে না।’

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওমিক্রনে আক্রান্ত ২১ জনই ঢাকার। ঢাকায় এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। গত একসপ্তাহে শনাক্তদের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশই ঢাকায়। এবার আবার ঢাকা হটস্পট।’