দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ক্রম পুঞ্জীভূত মূলধন সংকট সামাল দিতে বিদেশি বিনিয়োগ আনার শর্ত হিসেবে পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী থেকে লোকসানের তথ্য গোপন করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এমন সুবিধাকে অনৈতিক ও প্রতারণামূলক আখ্যা দিয়ে টিআইবি বলছে, এটি আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতার সমস্যাকে প্রকটতর করার পাশাপাশি বিদেশে সুনামও ঝুঁকিতে ফেলবে।

এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এ আশঙ্কার কথা জানায়। টিআইবি বলেছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, পদ্মা ব্যাংকের জন্য ৭০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেলমর্গানের শর্তানুযায়ী ব্যাংকটির আর্থিক লোকসানের তথ্য গোপন রেখে পৃথক হিসাব তৈরির ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মতি দিয়েছে। পরবর্তী ১০ বছরে যা ব্যাংকটির মুনাফা থেকে সমন্বয় করার কথা রয়েছে।

দেশের ব্যাংকিং খাতে এমন অনৈতিক উদ্যোগ নজিরবিহীন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিবচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার কিছু সময়ের মধ্যেই উদ্যোক্তা পরিচালকদের ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতিতে খেলাপি ঋণে ডুবতে থাকা বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক বাঁচাতে নাম পরিবর্তন (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক), সরকারি চার ব্যাংক ও আইসিবির ৭শ কোটি টাকার বেশি মূলধন যোগান, বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআর সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড়সহ বেশকিছু নীতি সহায়তা দিয়ে আসছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসব ছাড়েও ব্যাংকটির ঘুরে দাঁড়াবার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে দিনকে দিন। এমন অবস্থায় লোকসানের তথ্য বাদ দিয়ে ব্যাংকটির আর্থিক বিবরণী পরিষ্কার দেখানোর চেষ্টা হিসাববিজ্ঞানের দিক থেকে শুধু অনৈতিকই নয় প্রতারণামূলকও।’

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত কেলেঙ্কারির দায়ে জর্জরিত ফারমার্স ব্যাংক অবসায়ন না করে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াসকে তার সময়ের একটি ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে যে মন্তব্য করেছেন সেটা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক প্রশ্ন রাখেন, ‘এমন ভুল সিদ্ধান্ত কার বা কাদের স্বার্থে বয়ে নিয়ে চলছে সরকার? আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও কেন ব্যাংকটিকে বাঁচাবার নামে নজিরবিহীন সব উদাহরণ তৈরির দায় নিচ্ছে তা পরিষ্কার নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারচেয়েও বড় প্রশ্ন—আর্থিক বিবরণী কৃত্রিমভাবে ভালো দেখালেই প্রতিশ্রুত বিদেশি বিনিয়োগ যোগাড় করা সম্ভব হবে তার গ্যারান্টি কী?’ বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত হলেও ব্যাংকটির ৬০ ভাগের বেশি মালিকানা বর্তমানে সরকারি চার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইসিবির হাতে থাকার কথা উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘যে বড় আকারে বিনিয়োগ সংগ্রহের কথা বলা হচ্ছে তাতে যদি প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া যায়, সেটার পরিণাম বিবেচনায় না নিয়ে এমন অনৈতিক পথে হাঁটা অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী।’

টিআইবি আশা করে, আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করবে এবং আইন ও নিয়মকানুন মেনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।