দেশ প্রতিক্ষণ,বরিশাল: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে জনবল, চিকিৎসক সংকট থাকায় চলছে সেবা ‘কোনোরকমে’। তাই বর্তমানে চক্ষু বিভাগেই চলছে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা। আর পূর্বের বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটটির গেটে র্দীঘ দিন ধরে ঝুলছে তালা।

হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, আগের বার্ন ইউনিটে আইসিইউ স্থানান্তরের কাজ চলছে। বর্তমানে কোথায় বার্ন ইউনিট চালু হবে? আর চক্ষু বিভাগে বার্ন ইউনিট থাকলে কোথায় চক্ষু বিভাগ নেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই পরিচালকের দফতরে। একাধিক রোগীরা জানান, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার উপযোগিতা রয়েছে। কিন্তু গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্য নেই শেবাচিমের চালু হওয়া বান ইউনিটটির।

হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার এবং তার আশেপাশের অগ্নিদগ্ধ রোগীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ২০১৫ সালের ১২ মার্চ হাসপাতালের নিচতলায় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ চালু করা হয়। শুরুতে ৮ বেডের করা হলেও রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ত্রিশ বেডে উন্নীত করা হয়। ইউনিট চালুর সময়ে ৮ জন চিকিৎসক ও ১৬ জন নার্সের পদ নিয়ে চালু হয় বান ইউনিট।

তবে তখন একজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল বার্ন ইউনিট অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের একমাত্র চিকিৎসক এম এ আজাদের লাশ বরিশাল নগরীর মমতা স্পেশালাইজড হসপিটালের লিফটের নিচ থেকে উদ্ধার করার পর আর কোনো চিকিৎসক এই ইউনিটে যোগ দেননি।

হাসপাতালের পরিচালকের দফতর থেকে জানানো হয়েছে ডা. এমএ আজাদের রহস্যজনক মৃত্যুর পরে কয়েকবার নতুন ডাক্তারের পদায়ন চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও নতুন কোনো চিকিৎসক এই ইউনিটে যোগ দেননি। ফলে বাধ্য হয়ে ওই বছরের ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তবে ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে না পারার চিত্র দেখে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ২৪ ডিসেম্বর ঘোষণা দিয়ে যান সেদিন সন্ধ্যায় নয়তো পরদিন সকালের মধ্যে শেবাচিমে বার্ন ইউনিট চালু হবে। তার ঘোষণার সঠিক সময়ে ইউনিট চালু না হলেও ২৯ ডিসেম্বর থেকে বার্ন ইউনিট চালু হয়।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, সদ্য যোগদানকারী ডা. শরিফুল ইসলামের দায়িত্বে চক্ষু বিভাগে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা চলছে। আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে। কিন্তু বার্ন ইউনিটটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালাতে আরো চিকিৎসক ও নার্সের দরকার। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেছি।

চিকিৎসা নেওয়া অগ্নিদগ্ধ রোগীরা বলেন, এখানে আমাদের চিকিৎসা চলছে, খারাপ না। তবে বেশি একটা ভালোও না। একজন ডাক্তার একদিন পর পর এসে দেখে যান। কিন্তু ঢাকায় দেখেছি কত সুন্দরভাবে আগুনে পোড়া মানুষদের চিকিৎসা চলে। পোড়া মানুষদের চিকিৎসার জন্য জোড়াতালি দিলে তারা সেবার চেয়ে কষ্ট বেশি পায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধপত্র অধিকাংশই আনতে হয় বাইরে থেকে।

চিকিৎসার নামে এই হাসপাতালে আমাদের ফেলে রাখা হয়েছে। এখানে ডাক্তার পেলে নার্স পাওয়া যায় না, নার্স পেলে ডাক্তার পাওয়া যায় না। তার উপরে যে দু-চারজন ডিউটি করে তাদের আচরণ ভয়ংকর।

চক্ষু বিভাগে দায়িত্বরত বার্ন ইউনিটের নার্স ও ব্রাদার জানিয়েছেন, বার্ন ইউনিট অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ চালু থেকেই হাসপাতালে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে। এখনো তেমনি চলছে। তবে অনেক সংকটের মধ্যে তাও যা ন্যূনতম হলেও চিকিৎসা পাচ্ছে মানুষ।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, এই হাসপাতালে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত একনেকে পাস হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আলাদা একটি ইউনিট নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তবে কোন তলায় কিংবা আলাদা ভবনে বার্ন ইউনিটটি স্থাপন করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।