তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। ডিএসই বার বার রেড এলার্ট করার পর ধারাবাহিক বাড়ছে কোম্পানিটির শেয়ার দর। কোন কিছুতেই তোয়াক্কা করছে না কারসাজি চক্র। ফলে শেয়ার দরের উস্ফল্লনের রহস্য কি এ প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের। মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৬৫ টাকার বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। গত ২৯ নভেম্বর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সর শেয়ারদর ছিল ৫০ টাকা ১০ পয়সা। সর্বশেষ মঙ্গলবার শেয়ারটির দর ১১৪ টায় লেনদেন হয়।

এছাড়া ডিএসই বার বার সর্তক করার পরও সিন্ডিকেটের কারণে থামছে না ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর। কোম্পানিটির দর বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বেশ কিছুদিন ধরেই কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দর বাড়ছে এবং বিক্রেতা সঙ্কটে হল্টেড হয়ে যাচ্ছে। অথচ কোম্পানিটি গত ২০২০ অর্থবছরে কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি।

এমতাবস্থায় কোম্পানিটির এ অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি মেনে নেয়া যায় না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত শোকজ নোটিশ পাঠানোর পাশাপাশি সরাসরি মনিটরিং করা। শেয়ারটি নিয়ে কারসাজি হচ্ছে এটা স্পষ্ট। কিন্ত এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে এর দর অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সেসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে মেতে উঠেছে একটি কারসাজি চক্র। কোম্পানিগুলোর শেয়ারে কারসাজির যথেষ্ঠ আলামত দেখা গেলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিশ্চুপ রয়েছে। যে কারণে কারসাজি চক্রের দৌরাত্ব আরও লাগামহীন হয়ে পড়ছে। কোনো সংবেদনশীল তথ্য না থাকলেও কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে টানা হল্টেড হচ্ছে।

এতে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরণের ভীতি তৈরি হচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ে বিনিয়োগকারীরা নানা আলোচনা-সমালোচনায়ও মেতে উঠেছেন। তাদের আলোচনায় অভিযোগের তীর নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকেও তাক হচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে অনর্থক ও অস্বাভাবিক মাতামাতি দেখা দিলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। তা না হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিশ্বাসে ফাটল ধরতে পারে। যা দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের জন্য ক্ষতিই বয়ে আনবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে এটা স্পষ্ট। আবার অনেকে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে শেয়ার নিয়ে বিভিন্ন কথা লিখছে। এসব কারণে শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। যদি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি হয়ে থাকে, তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত করা প্রয়োজন। মানুষের চাহিদা পরিবর্তন হয়। কখনও টেক্সটাইল, কখনও ইন্স্যুরেন্স, আবার কখনও ব্যাংক খাতে বিনিয়োগ করে।

কোনো শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখকর নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারদর বেড়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, এমন বাজার আমরা চাই না। শেয়ারের দাম স্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাবে, এমনটাই চাই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কোনো কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হলে বিএসইসি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।