ঢাকা: নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং বাংভারতের বাংলাদেশ নীতিলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভারত সরকারের গৃহীত বাংলাদেশ নীতি। একই সঙ্গে দিল্লি সরকার সমতার ভিত্তিতে দেশটির সঙ্গে লেনদেন না করায় বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব বেড়েই চলেছে। বুধবার দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এমনই আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়।

‘আনসার্টেইনটি ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধের শুরুতে বলা হয়,  বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মধ্যে কোনো রকম বোঝাপড়া ছাড়াই আগামী ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

নির্বাচনের আগে বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন প্রতিহত করতে বছরের প্রথম দিন থেকেই গোটা দেশে অবরোধের ডাক দিয়েছে জাতীয়তাবাদী দল বা বিএন পি।

তারা কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের সহযোগী দল জামায়াতে ইসলামীও একই দাবিতে আন্দোলন করছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবিও বাতিল করে দেয় বিরোধী দল বিএনপি। বর্তমানে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশের সরকারি দলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার জাতীয় পার্টির প্রধান এবং সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে নিরাপত্তা কর্মীরা জোরপূর্বক সামরিক হাসপাতালে ভর্তি দেয়। নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেয়ার পর তার সঙ্গে এ আচরণ করে সরকার।

২০১৩ সালে জামায়েত ইসলামী দলটিকে নিষিদ্ধ করার ফলে তাদেরও নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর ফলে এখন আওয়ামী লীগই হলো একমাত্র বড় দল যারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।ক্ষমতাসীন দলটি ইতিমধ্যে ৩শ আসনের অর্ধেকের মতো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু এ ধরণের ‘পোকায় খাওয়া’ নির্বাচনে বিজয়ী হলেও এ নিয়ে ২০০৮ সালের মতো আনন্দিত হতে পারছে না ক্ষমতাসীনরা।

দ্য হিন্দুর মতে, এই নির্বাচনী সঙ্কটের ফলে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভারতের বাংলাদেশ নীতি। পত্রিকাটি বলছে,‘এটি গোপন করার কিছু নেই যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো থাকে। ভারতের বৈদেশিক নীতির দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে গেলে, হাসিনা সরকারের গত পাঁচ বছরে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল সর্বোকৃষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামি চরমপন্থীদের কঠোর হস্তে দমন করেন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর জঙ্গি যাদের জন্য বাংলাদেশ ছিল নিরাপদ স্বর্গ, তাদেরকেও শায়েস্তা করেন তিনি ‘

কিন্তু বিনিময়ে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে লেনদেন করেনি। বিশেষ করে ‘তিস্তা চুক্তি’ বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে দেশটিতে ভারত বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিবন্ধের শেষ পর্যায়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলা হয়, ‘নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশের পরিস্তিতি হবে আরো সহিংস। ফলে সংঘাতময় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসছে তার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক আরো জটিল হয়ে ওঠবে।’