ban_anondho_bazar_picঢাকা: আগামী ৫ তারিখ বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের পর নিরাপত্তা এবং কূটনীতি দু’দিক থেকেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে ভারতের কাছে সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট এসেছে বলে দাবি করেছে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামীকে জঙ্গি দল উল্লেখ করে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার একে পুরোপুরি শেষ করে দিতে প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা জারি একটি উপযোগী পন্থা হিসেবে মনে করছে বলেও জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের দাবি সেক্ষেত্রে এক দিকে নির্বিঘ্নে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে। অন্য দিকে বিরোধীদের লাগাতার হরতাল-অবরোধ বন্ধ হওয়ায় জনজীবন স্বাভাবিক হবে। মানুষও স্বস্তি পাবেন। পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষেও বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান নেয়া সহজ হবে না।

কিন্তু ঢাকা এ কথা মনে করলেও এই পরিস্থিতি যে দীর্ঘদিন চলতে পারে না, সে কথাই বলা হচ্ছে দিল্লির রিপোর্টে।

নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় গোটা লড়াইটাই একপেশে হয়ে গিয়েছে। ১৫৩টি আসনে ইতোমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে বসে রয়েছেন এক জন করে প্রার্থী। এর মধ্যে ১৩২ জনই শাসক আওয়ামী লীগের।

বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া ‘কার্যত গৃহবন্দি’ বলে দাবি করেছে তার দল। বিএনপির অনেক নেতাই জেলে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে পশ্চিমা দুনিয়া। তাই এই দফায় সরকার গড়লেও খুব দ্রুত দেশে রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে আরও একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ ঢাকাকে দিয়েছে নয়াদিল্লি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গোটা পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার জন্য ৫ জানুয়ারির আগেই কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে ঢাকায় পাঠানোর কথা ভাবছে নয়াদিল্লি। সব মিলিয়ে তাই এক দিকে যেমন সীমান্ত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভারত কোমর বেঁধে নামছে তেমনি শরণার্থীদের প্রশ্নে কিছুটা মানবিকতার পথেই হাঁটার কথা ভাবছে দেশটি। অন্য দিকে কূটনৈতিক স্তরে হাসিনা সরকারকেও বোঝানো হচ্ছে, পরিস্থিতির রাশ টেনে ধরার জন্য সংবেদনশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কেন না বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘতম সীমান্তের ভাগীদার ভারতের পক্ষেও অবস্থাটা অনুকূল নয়।

বাংলাদেশের বিষয়টি নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক দুরকম দিকই রয়েছে বলে মনে করছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সীমান্ত সিল করে দেয়া অথবা শরণার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা আপৎকালীন তৎপরতা হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ভাবে এই চাপের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াটা নয়াদিল্লির কাছে যেমন সহজ নয়, তেমনি কাম্যও নয়।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, পূর্ব উপকূলকে কাজে লাগিয়ে ভারতে জঙ্গি পাচার করার জন্য মুখিয়ে রয়েছে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। সুতরাং বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদিভাবে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের দিকে হাঁটুক, এটা কিছুতেই চায় না সাউথ ব্লক। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামিকে কোনো ভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থেই জামায়াতকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা প্রয়োজন।

কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে দীর্ঘ দৌত্যের পরেও যে যুক্তরাষ্ট্র সুর নরম করেনি তা এখন স্পষ্ট। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা খোলাখুলিই জানিয়েছেন, নির্বাচন হওয়া উচিত অবাধ এবং নিরপেক্ষ। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের ভূমিকায় যে যুক্তরাষ্ট্র আদৌ সন্তুষ্ট নয়, সে কথাও বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। আর পশ্চিমা দুনিয়া বলছে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা।

এদিকে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে রিপোর্টটি সম্প্রতি দিল্লিতে পৌঁছেছে, তাতে বলা হচ্ছে, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে তার সঙ্গে চূড়ান্ত অসহযোগিতার পথে হাঁটবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।

কোনো কারণে এই সরকার পড়ে গিয়ে জামায়াত সমর্থিত বিএনপি সরকার যদি ক্ষমতায় আসে, তা হলে বিপুল সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী মোকাবিলার জন্য ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তখন শুধুমাত্র হিন্দুরাই নন, অসংখ্য ধর্মনিরপেক্ষ মুসলমানও বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হবেন। আর তাদের সহজ গন্তব্য হবে ভারত।’

চলতি পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসিনা সরকারকে জরুরি অবস্থা জারি করতে হতে পারে, এমন কথাই বলছে ওই রিপোর্ট। আইন শৃঙ্খলার অবনতি হলে বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে ৪ মাস পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে সরকার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ সহিংসতা মুক্ত আবহাওয়ায় একটু নিঃশ্বাস নেয়ার অবকাশ পাবেন। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন, জিনিসের অগ্নিমূল্যও কমবে।

অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের একের পর এক ফাঁসি হলে হয়তো আবার উন্মত্ত হতে পারে জামায়াত। কিন্তু সেক্ষেত্রে জরুরি অবস্থাকে আরও কিছু দিন বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ পাবে সরকার। আর পশ্চিমাদের পক্ষেও তখন এর বিরোধিতা করা কঠিন হবে।