নুপূরস্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: তিন সন্তানের জননী সোনিয়া আক্তার নূপুর অভিযোগ করে বলেছেন তার সাবেক স্বামী মৃত রফিকুল ইসলাম কাজলের ছোট ভাই ও বর্তমান স্বামী আহমেদ আলী রানাসহ পরিবারের সদস্যরা তার দু’মেয়েকে অপহরণ করেছে। আমার এখন আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।

অপহৃত দুই কন্যাকে ফেরত না পেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছোট মেয়েকেসহ গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়েছেন সোনিয়া আক্তার নুপূর। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে পাগল প্রায় নুপূর এমন কথাই বললেন।

তিনি দাবী করেন, তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস (৯) ও মেজো মেয়ে দিয়া মনিকে (৬) অপহরণ করেছে তারা।

নূপুর জানান, তিনি জানতে পেরেছেন বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির ১১নম্বর বিল্ডিংয়ের একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখা হয়েছে। তবে মেজো মেয়ে দিয়া মনির কোনো খোঁজ জানেন না নূপুর।

ঘটনার বর্ণনায় নূপুর জানান, ২০০৮ সালে পুরান ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী রফিকুল ইসলাম কাজল তাদের গেন্ডারিয়ার বাড়িটি দখল করে নেয়। সে সময় ১৪ বছরের নূপুরের ওপর চোখ পড়ে কাজলের। পড়ে তাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করেন। এর কিছুদিন পরই গেন্ডারিয়ায় একটি মার্কেট দখলের পরিকল্পনা করেন কাজল ও তার পরিবার।

ওই কাজল নূপুরকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। ওই বাসাতেই সমঝোতার জন্য ডাকা হয় মার্কেট মালিক সামসুদ্দিনকে। বাসায় সামসুদ্দিনের সঙ্গে তার ছেলেও আসেন। পরে কাজল ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে মার্কেট মালিক সামসুদ্দিন ও তার ছেলেকে হত্যার পর ১১৯ টুকরা করে।

এ হত্যার দায়ে সন্ত্রাসী কাজলকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। আর সেই মামলার রাজসাক্ষী ছিলেন নূপুর। রায় কার্যকর হওয়ার আগেই স্ত্রীসহ তিন মেয়েকে রেখে মারা যান কাজল। পরে পরিবারের চাপে কাজলের ছোট ভাই আহমেদ আলী রানাকে বিয়ে করেন নূপুর। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পরই রানা তাকে তালাক দেন।

তখন নূপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ অভিযোগ দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রানা সমঝোতার মাধ্যমে পুনরায় তাকে বিয়ে করেন। কিন্তু আবারও প্রতারণা করে রানা নূপুরকে ছেড়ে তার দুই শিশুকন্যাকে অপহরণ করেন।

এ ঘটনায় নূপুর মামলা করতে চাইলে তা আমলে নেননি আদালত। এরপর যেখানেই বিচার চাইতে গেছেন সেখানেই রানার লোকজন উপস্থিত হয়ে তাকে বাধা দিয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ থেকেও কোনো সাড়া মেলেনি আর। নূপুরের অভিযোগ, রানাই তার দুই মেয়েকে অপহরণ করে লুকিয়ে রেখেছে।

এদিকে, অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে নূপুরের দেয়া রানার মুঠোফোন (০১৭৯১৯২৫৩৫০) নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। প্রশাসনের কাছে নূপুরের আকুতি, প্রশাসন যদি তার দুই সন্তানকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে না দেয় তাহলে তিনিও আর বেঁচে থাকতে চান না। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেই ছোট মেয়ে নুসরাত জাহান রশ্মিকে (৩) সঙ্গে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা কবরেন বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।