আগুনস্টাফ করেসপন্ডেন্ট ঢাকা: রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, নেত্রকোনা ও নীলফামারী জেলাতে আ’লীগ সরকারের বাকশালী নীল নকশার একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে দুর্বৃত্তরা কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করেছে।

শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত এসব জেলার ভোটকেন্দ্রগুলোতে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে। দুর্বৃত্তরা এর আগে শুক্রবার চট্টগ্রাম, ফেনী ও দিনাজপুরে বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়েছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার বেলকুচি উপজেলার ২টি ভোটকেন্দ্রের ৪টি কক্ষ আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

শুক্রবার রাতে উপজেলার চরনবীপুর কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২টি কক্ষ এবং দেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২টি কক্ষ আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৫টিতে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকায় শুধুমাত্র নির্বাচনী এলাকা-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পপতি আব্দুল মজিদ ম-লসহ আওয়ামী লীগের ১ বিদ্রোহী প্রার্থীসহ জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ও জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) ১ জন করে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তিনি মহাজোট সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন।নির্বাচনী এলাকার ২ উপজেলার মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৩ হাজার ২৭৭ জন। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১২১টি। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৫৬টি।

আমাদের রাজশাহী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার চারঘাটে একটি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে সারদা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে ওই ভোটকেন্দ্রের দুটি কক্ষের দরজা-জানালাসহ বেশ কিছু আসবাবপত্র পুড়ে যায়। এ ছাড়া একই উপজেলায় পদ্মা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।এদিকে নগরীতে চেতনা ’৭১ এর কার্যালয় এবং একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

চারঘাট মডেল থানার ওসি গোলাম মর্ত্তুজা জানান, শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে দুর্বৃত্তরা সারদা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।খবর পেয়ে পুলিশ স্থানীয়দের সহায়তায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়টির দুটি কক্ষের দরজা-জানালা পুড়ে যায়। পেট্রল দিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে কে বা কারা ওই ঘটনায় জড়িত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ওসি বলেন, জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে রাজশাহী নগরীতে চেতনা ’৭১ কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। একই সময়ে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে একটি পণ্যবাহী ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে অবরোধকারীরা। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর মহিষবাথান উত্তরপাড়া এলাকায় এ দুটি ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি চেতনা ’৭১ কার্যালয়ের দরজা ভেঙ্গে চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এরপর সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। একই সময়ে ওই স্থান দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রাক রাজশাহীর দিকে আসছিল। অবরোধকারী ট্রাকটিতে ভাংচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।

রাজশাহী দমকল বাহিনীর স্টেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। রাজপাড়া থানার ওসি এ বি এম রেজাউল করিম জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, জেলার সদর উপজেলার দুটি ও শৈলকূপা উপজেলার দুটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জানালা, দরজা ও আসবাবপত্র ভস্মীভূত হয়। শৈলকূপা থানার উপ-পরিদর্শক আশিকুর রহমান জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত শৈলকূপা শহরের ললিত ভূঁইয়া ও একই উপজেলার ত্রিবেনী সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ভোটেকেন্দ্রে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

তবে শৈলকূপার ত্রিবেনী স্কুলের আগুনের বিষয়টি এখনো সেখানকার পুলিশ জানে না। আগুন দেয়ার সময় ভোটকেন্দ্রে কোনো নিরাপত্তা কর্মী ছিল না। বিষয়টি নিয়ে শৈলকূপা থানার ওসি আশফাকুল বারী জানান, কারা আগুন দিয়েছে তা তদন্ত করে ছাড়া বলা যাচ্ছে না। তবে ভোটবিরোধীরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।

এদিকে শনিবার ভোরে জেলার সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজার ও মহারাজপুর গ্রামের দুটি ভোটকেন্দ্র পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

স্থানীয় মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর মল্লিক জানান, শনিবার ভোর ৬টার দিকে একদল যুবক মোটরসাইকেলযোগে এসে প্রথমে বিষয়খালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়। এতে স্কুলের দরজা জানালা পুড়ে যায়। খবর পেয়ে গ্রামবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর পরই একই উপজেলার মহারাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয় কে বা কারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৬টি মোটরসাইকেলে ১০/১২ জন যুবক এসে দুটি ভোটকেন্দ্রে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়। এ সময় তাদের মুখ বাধা ছিল।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ডিউটি অফিসার খাদিজা খাতুন জানান, বিষয়খালী ও মহারাজপুর ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়ার কোনো খবর তাদের জানা নেই। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, জেলায় তিনটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার গভীর রাতে জেলার ডোমার উপজেলায় এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, জেলার ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের বারবিশা গোবাচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডোমার সদর ইউনিয়নের ভাদু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের বটতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুক্রবার গভীর রাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপরদিকে ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অফিসের সামনে রাস্তায় কে বা কারা চকলেট বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।

এ ব্যাপারে ডোমার থানার ওসি কফিল উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি তবে তা ককটেল নয় চকলেট বোমার বিস্ফোরণ। শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য টহল দিচ্ছে।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, জেলার মদনপুর উপজেলার মনাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুক্রবার রাত ২টার দিকে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই বিদ্যালয়টি রবিবার ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কথা।