অর্থনীতিআলমগীর হোসেন, ঢাকা : বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। সরকারের একগুঁয়েমিকেই বর্তমান অচলাবস্থার জন্য দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। পরিবহন ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়ছে।

এছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি আমদানি ও রপ্তানি নির্ভর। সুতরাং রোববার অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হওয়া না হওয়ার ওপরই নির্ভর করছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিরোধী জোটের টানা অবরোধে দেশের অন্ত ও বহিঃবাণিজ্যের সব পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। এর সঙ্গে রুদ্ধ হয়ে গেছে অর্থনীতির চাকাও। হরতাল ও অবরোধসহ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণের কিস্তি ঠিকমতো পরিশোধ করতে না পারায় সংকটে পড়েছে ব্যাংকিং খাত।

পাশাপাশি বন্দর অকার্যকর হয়ে পড়ায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যও বন্ধ রয়েছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না রফতানিকারকরা। ক্রেতাদের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে অনেকেই ২০ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করে আকাশপথে পণ্য পাঠাচ্ছেন। পরিবহন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে নিত্যপণ্যের সরবরাহ।

এতে পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল অংকের লোকসান গুনছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের হাতেও পৌঁছাতে পারছে না প্রয়োজনীয় পণ্য। এতে একদিকে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। অন্যদিকে সময়মতো বিক্রি না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে পচনশীল অনেক পণ্য। সব মিলিয়ে অবরোধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।

বিভিন্ন সুত্রে থেকে জানা যানা যায় দেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্হা এ রকম চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতিতে বড় দরনের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় আসতে না পারলে  আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ চরম অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাবে  বলে মনে করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা।

শনিবার রাজধানীর গুলশানের হোটেল লোকশোরে  ‘সহিংস রাজনীতি, সংকটে দেশ- ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সভাপতি আবুল বারাকাতের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ, অর্থনীতিবিদ ড. খলিকুজ্জামান, সম্যসাচী লেখক সৈয়দ সামসুল হক, জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়য়েরর উপাচার্য হারুন-অর রশিদ. রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহমেদ আল কবির প্রমুখ।

ড. খলীকুজ্জমান বলেন, দেশের শ্রমিক-কৃষকরা চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তারা শ্রমের ফল ভোগ করতে পারছেন না। কৃষকরা ফসল তুললেও তা ভালোভাবে বিক্রি করতে পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে ঋণের বোঝা নিয়ে তারা পথে বসছে, আর এজন্য দায়ি থাকবে অস্থির রাজনীতি।

খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, হাসিনা-খালেদার সংলাপ হলেও তা ফলপ্রসূ হবে না। কারণ তাদের দুজনেরই উদ্দেশ্যই ভিন্ন। তারা সমঝোতা না আসা পর্যন্ত দেশে শান্তি আসবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে। যে অবস্থা চলছে এমন চলতে থাকলে দেশের ভেতরে বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং সমঝোতামূলক রাজনীতি ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।’

তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক গোষ্ঠীগুলো আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। রেমিট্যান্স কমে যাবে। প্রবৃদ্ধি অনেক নিচে নেমে যাবে।’