গ্রামীনফোনস্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্রগ্রাম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে কয়েক দফা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। টেলিযোগাযোগ পণ্য আমদানিতে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে কয়েক দফা রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। ফাঁকি দেয়া রাজস্ব পরিশোধে এরপর একাধিকবার দাবিনামা জারি করা হলেও তাতে সাড়া দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

এ অবস্থায় গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে দেশের শীর্ষস্থানীয় সেলফোন অপারেটরটির বিরুদ্ধে শুল্ক আইনের বিধানমতে, ২০২ ধারা জারির প্রস্তুতি চলছে।

এটি জারি হলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ দেশের কোনো শুল্ক স্টেশন থেকেই আমদানি পণ্য ছাড় করাতে পারবে না গ্রামীণফোন। আমদানি নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গ্রামীণফোন লিমিটেডের নামে আসা পণ্যের একটি চালান (সি-২৬৭৫৭) খালাসের উদ্দেশে গত বছরের ৯ মার্চ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দলিলাদি দাখিল করা হয়।

চালানটিতে পণ্য হিসেবে ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেম ফর মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ঘোষণা দিয়ে এইচএস কোড ৮৪১৪.৫৯.২০ (শুল্ক-৩ ও এটিভি ৪ শতাংশ)তে শ্রেণীবিন্যাস করে শুল্কায়ন করা হয় এবং বন্দর থেকে তা ছাড়িয়েও নেয়া হয়।

শুল্ক কর্তৃপক্ষ পরে চালানটিতে পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট (বিল অব এন্ট্রি খালাস-উত্তর নিরীক্ষা) করে। তাতে দেখা যায়, আমদানি পণ্য এইচএস কোড ৮৪১৪.৫৯.৯০ (শুল্কহার ২৫%+ ৫%+১৫%+ অন্যান্য করাদি)তে শ্রেণীবিন্যাসযোগ্য। পরে চালানটি পুনরায় শুল্কায়ন করে ফাঁকি দেয়া রাজস্ব নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৪০৭ টাকা। এর সঙ্গে জরিমানা নির্ধারণ করা হয় আরো ১০ লাখ টাকা।

এইচএস কোড বদলে চালানটি খালাস করিয়ে নেয়ায় কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯-এর ৩২ ধারায় গত মে মাস থেকে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে একাধিক কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় চট্টগ্রাম শুল্ক কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ৩০ দিনের মধ্যে ফাঁকি দেয়া রাজস্ব ও জরিমানা মিলে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ট্রেজারি শাখায় জমা দিতে দাবিনামা জারি করা হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ফাঁকি দেয়া রাজস্ব উদ্ধারে গ্রামীণফোনকে একাধিকবার দাবিনামা-সংবলিত চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ২০২ ধারা জারির প্রস্তুতি চলছে। ধারাটি জারি হলে দেশের কোনো শুল্ক স্টেশন দিয়েই পরে আমদানিকৃত পণ্য ছাড়িয়ে নিতে পারবে না প্রতিষ্ঠানটি।’

যোগাযোগ করা হলে গ্রামীণফোন লিমিটেডের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন তাহমিদ আজিজুল হক এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলেও গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, টেলিযোগাযোগ পণ্য আমদানিতে এর আগেও গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। উচ্চ শুল্কের এইচএস কোডের পণ্য নিম্ন শুল্কের এইচএস কোডে আমদানির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দাবিনামাও জারি করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই তারা দাবিনামার বিপরীতে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে।

এর মধ্যে ২০১২ সালের এপ্রিলে আমদানি করা হার্ডওয়্যার ফর বেইজ স্টেশন কন্ট্রোলার ৬৯০০ (টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি) চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড়িয়ে নেয় গ্রামীণফোন লিমিটেড। অথচ আমদানি দলিলাদিতে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল কম শুল্কের টেলিগ্রাফিক স্যুইচিং অ্যাপারেটাস। পরে চালানটির পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট করে দেখা যায়, প্রকৃত এইচএস কোডে শুল্কায়ন না করে তাতে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে।

একই বছর আমদানি করা আরেকটি চালানে (সি-৮৬৯২৮) ট্রান্সমিটিং অ্যান্ড রিসিভিং অ্যাপারেটাসকে প্রকৃত এইচএস কোডে শুল্কায়ন না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়। এইচএস কোড ৮৫১৭.৬২.১০-এর ঘোষণা দিয়ে মাত্র ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করেই সে সময় চালানটি ছাড় করিয়ে নেয় গ্রামীণফোন। যদিও আমদানি করা এ পণ্যের প্রকৃত এইচএস কোড ৮৫১৭.৬২.৯০।

একইভাবে ওই বছর টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতির অন্য একটি চালানে (সি-৫৯৬৩৫) ফাঁকি দেয়া হয় ৫ কোটি ৪২ লাখ ৭ হাজার টাকা। ওই রাজস্ব পরিশোধে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে দাবিনামাও জারি করে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। পণ্যের চালানটিতে মাত্র ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকার রাজস্ব পরিশোধ করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।