নির্বাচন বাতিলে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনাস্টাফ করেসপন্ডেন্ট,ঢাকা: বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী বলেন, এখনো সংসদ বহাল আছে তাই জরুরি সংসদ ডেকে তত্ত্বাবধায়ক বিল পাস করে সবার অংশগ্রহণের নির্বাচন নিশ্চিত করুন।

একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগও দাবি করেন এই সাংবাদিক নেতা।
তিনি বলেন,দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে শতাব্দীর প্রহসনমূলক নির্বাচন আখ্যায়িত করে তা বাতিল করতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তিনি।

রোববার দুপুর তিনটার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত ‘সংবাদ সম্মেলনে’ তিনি এ আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “একতরফা নির্বাচন না করার জন্য দেশী-বিদেশী সব আহ্বান-উদ্যোগ উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার সরকার জবরদস্তিমূলকভাবে আজকের নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে।”

তিনি বলেন, “দেশের পেশাজীবী সমাজ ইতিপূর্বেই এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচন হওয়ার আগেই ১৫৩টি আসনে ভোটহীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের ৫২ শতাংশেরও বেশি ভোটার ভোট দেয়ার সুযোগটুকুই পাননি। বাকি ১৪৭টি আসনে আজ যে নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে তা লজ্জা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

তিনি আরো বলেন, “ইতিমধ্যেই ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ গণমাধ্যমের কল্যাণে আজকের ভোটারবিহীন নির্বাচনী তামাশা লক্ষ্য করেছে দেশবাসী। এই নির্বাচনী তামাশা দেশবাসী অত্যন্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিভিন্ন জেলার ভোট কেন্দ্রে আজ নির্বাচনের যে নজির প্রত্যক্ষ করা গেছে তাতে এই বিতর্কিত নির্বাচনকে শতাব্দীর নিকৃষ্টতম তামাশা হিসেবে উল্লেখ করা ছাড়া উপায় নেই।”

গাজী বলেন, “শেখ হাসিনার একগুঁয়েমি, ক্ষমতার মোহ ও লোভের কারণেই বাংলাদেশের কপালে আজ এতবড় কলঙ্ক তিলক পড়েছে। এই নির্বাচন বিশ্বের নির্বাচন ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচে বড় কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”

রুহুল আমিন গাজী বলেন, “বন্দুকের নলের মুখে আজ নির্লজ্জ প্রহসনের কলঙ্কময় ও জালিয়াতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে কমপক্ষে ১৮ জন। বহু মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থারও বহু সদস্য হতাহত হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে ভোটার অনুপস্থিতির এই নির্বাচনে এর মধ্যে দেশের ৩২৬টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বেলা দুইটা পর্যন্ত খুবই নগণ্যসংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র ও বিরোধী জোটের প্রার্থীরাও গণহারে নির্বাচন প্রত্যাখান ও বর্জন করেছেন। কোনো কোনো কেন্দ্রে দুপুর একটা পর্যন্ত একজনও ভোটার উপস্থিত হননি।”

তিনি বলেন, “প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রত্যাখানের মধ্যে অনুষ্ঠিত আজকের নির্বাচনে জনগনের তেমন সাড়া মিলবে না বলে সবাই আশা করেছিলেন। কিন্তু জনগণ যে এভাবে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করবে তা সবার ধারণাই বাইরে ছিল।”

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে ২ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। বিকেল চারটা পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। যেমন বিশ্বনাথে রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো ভোটার ভোট দিতে আসেননি। সাতক্ষীরা-২ আসনে চার ভোটকেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় একটি মাত্র ভোট পড়েছে। উত্তরায় দেড় ঘণ্টায় পাঁচটি ভোট, ঢাকা-১৮ আসনের উত্তরা রাজউক মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে প্রথম দেড় ঘণ্টায় মাত্র পাঁচটি ভোট পড়েছে।”

বক্তব্যে বলা হয়, সকাল সোয়া ১১টায় ঢাকা-৬ আসনের সরকারি কবি নজরুল কলেজের চিত্র তুলে ধরে আরটিভি। কেন্দ্রের তিনটি ভোট কক্ষের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র সাতটি। এরমধ্যে এক নং কক্ষে ৩টি, ২ নং কক্ষে ২ টি ও তিন নং কক্ষে ২টি ভোট পড়েছে। চ্যানেল টুয়েন্টিফোর জানায় সকাল ৯টায় চট্টগ্রামের জামাল খান হাইস্কুল ভোট কেন্দ্রে মাত্র তিনজন ভোট দিয়েছে। ১১ টা ৫ মিনিটে ঢাকা-১৮ আসনে উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চিত্র দেখায় বাংলাভিশন। দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে একটি ভোট কক্ষেও ভোট সংখ্যা ২০ অতিক্রম করতে পারেনি। কাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯টায় ভোট পড়েছে মাত্র ২টি।

দুপুর ১১টায় বাংলাভিশন খুলনা-২ আসনের খুলনা সিটি কলেজ কেন্দ্রের অবস্থা জানিয়ে বলে কেন্দ্রে কোন ভোটারের উপস্থিতি দেখা যায়নি। চ্যানেল টুয়েন্টিফোর দুপুর পৌনে ১২টায় সরাসরি সম্প্রচারে জানায়, খুলনা-৩ আসনের ৩০ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যালয় কেন্দ্রের জানায় ৩নং বুথে ১৫ টি ভোট পড়েছে। দুপুর ১২টায় চ্যানেল টুয়েন্টিফোর জানায়, মোল্লারর টেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা জানিয়ে বলেন, চার ঘণ্টায় ৩৬ হাজার ভোটারের ৬টি কেন্দ্রের ওই ৩৭টি বুথে কোনো ভোটার ছিল না।

ঢাকা-১৬ আসনে মিরপুর বাংলা কলেজের চিত্র দেখায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন। বাংলা কলেজে ভোটার ১৫ হাজারের বেশি। ১২টা ৪০ পর্যন্ত পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র ৪০০। একুশে টেলিশিন দুপুর ১ টা ৪০ মিনিটে তাদের স্ক্রলে জানায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচির কল্যাণপুরে দুইটি ভোট কেন্দ্রে একটিও ভোট পড়েনি। এনটিভি জানায় পুরনো ঢাকার সরকারি মুসলিম হাইস্কুল কেন্দ্রের ভোট পড়েছে ২৫টি থেকে ৩৫টি পর্যন্ত ঢাকা-১৭ আসনের সরকারি তিতুমীল কলেজ থেকে দুপুর ১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ২৯২১ জনের মধ্যে ১০০ জনের মতো ভোট দিয়েছেন। এছাড়া মিরপুরের পল্লবীর একটি ভোট কেন্দ্রে দুপুর দুইটা পর্যন্ত মাত্র দুটি ভোট পড়েছে বলে বাংলা ভিশন জানায়।

গাজী বলেন, “টেলিভিশনগুলোর এসব সংবাদ থেকেই সারাদেশে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ ভোট বর্জনের চিত্র পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। এইসব সংবাদ থেকে আমাদের দৃঢ় ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে ভোটকেন্দ্রগুলোতে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি ভোট কাস্ট করা সম্ভব হবে না।”

তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে দুই শতাধিক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। আরো বেশ কিছু কেন্দ্র এরই মধ্যে বিক্ষুব্ধ জনতা অগ্নিসংযোগ ও ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়ায় ভোটগ্রহণ স্থগিতের প্রক্রিয়া চলছে। দিন শেষে যার সংখ্য দেড় হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা মনে করছি। যা ইতিপূর্বে দেশে ইতিহাসে কখনই দেখা যায়নি। এত বেশিসংখ্যক কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিতের কারণেও ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।” আন্তর্জাতিকভাবে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ,যুগ্ম সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।