১৮ দলের লগমান্না আতোয়ার, ঢাকা: বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন এখন রাজপথ থেকে আদালতের দিকে গড়াচ্ছে। ১৮ দল ইতিমধ্যে আ’লীগের অধীনে সম্পন্ন হওয়া দশম সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করবে বলে দলীয় সুত্রে জানা গেছে। তাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যকার লড়াইটা এবার রাজপথ থেকে সুস্পষ্টভাবেই আদালত পর্যন্ত বিস্তৃত হতে যাচ্ছে।

এতোদিন নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আন্দোলন করেছে বিএনপি। এ আন্দোলনে সারা দেশে জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুর, সম্পদের ক্ষতি ও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। কিন্তু সেসব উপেক্ষা করে গত রোববার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেই ফেলল আওয়ামী লীগ।

তাই বিএনপি নির্বাচন বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন রাজপথের পাশাপাশি আদালতে আইনিভাবে চালিয়ে নেয়ার চিন্তা করছে বিএনপি। সোমবার অন্তত সেরকমই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। হরতাল অবরোধে প্রাণহানি ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় এবং এ কর্মসূচিগুলো মারাত্মক সহিংস রূপ পরিগ্রহ করায় তা ব্যাপক সমালোচিত হয়।

তাই সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর ঢাকামুখি অভিযাত্রা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে নতুন এক অহিংস আন্দোলনের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু সরকারের কঠোর ও নিবর্তনমূলক অবস্থানের কারণে তাও ভেস্তে গেল। সরকার নির্বাচন করেই ছাড়ল।

১৮ দলের আন্দোলনের এখন নতুন ইসু প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করো। এই ইস্যুটি নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচিতেও নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে বিএনপি। রাজপথের সাথে সাথে এবার আদালতেও সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে চায় তারা। তার প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে।

যে নির্বাচন একতরফা, ভোটের আগেই অর্ধেকেরও বেশি সংসদীয় আসনে প্রার্থীরা বিজয়ী হয় এবং নজিরবিহীন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে সে নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে আদালতের শরণাপন্ন হবে প্রধান বিরোধী দল। এমনটাই বলেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতারা।

সোমবার রাতে সুপ্রিমকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে কয়েকজন আইনজীবী খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় যান। সেখানে তারা ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আইনগত বিষয় নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেন।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের জানান, এই প্রহসনের নির্বাচনের ব্যাপারে আইনগতভাবে কিছু করা যায় কি না সে ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। তার মৌলিক অধিকার সাংবিধানিকভাবে রক্ষা করার বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।’

এতোদিন রাজপথে সহিংস আন্দোলন আর সে আন্দোলন প্রতিহত করতে সরকারের ভালো মন্দ দুই কৌশলই দেখেছে দেশের জনগণ। এবার আদালতে বিচারকের এজলাসে আইনি লড়াইটা কতোটা আইনি কাঠামো ও বিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তা দেখার পালা। যদি বিএনপি বিষয়টি নিয়ে আদালতে যায়ই তাহলে এও দেখা যাবে: সেখানে রাজনীতি কতোটা রাজপথের প্রতিনিধিত্ব করে!