বিশেষ প্রতিবেদক, তারেক রহমানঢাকা: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিজয়ের পর এবার নতুন সরকার গঠনের চিন্তা ভাবনা করছে। নতুন সরকার গঠনের পরই সরকার প্রথম উদ্যোগ লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ।

এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনগত দিক খতিয়ে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে দশম  জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত নতুন সরকারের সাথে কোনো আলোচনা করতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজি নয় বলে  এমন মন্তব্যের পর থেকে সরকার তারেক রহমানের উপর টার্গেট নিয়েছেন।

এছাড়া নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার হার্ড লাইনে যাচ্ছে৷ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভিডিও বার্তা নিয়ে সরকার হার্ড লাইনে অবস্থা নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতেই তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের এই উদ্যোগ। তবে এ মামলায় তারেক রহমান ফোঁসে যেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট  সুত্রে জানা গেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সূত্র ধরেই তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। সরকারের শীর্ষ মহল বলছে, তারেক রহমান বিদেশে পলাতক থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বিচারাধীন মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য তাকে দেশে ফিরিয়ে আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে নির্বাচন প্রতিহত করা এবং সরকারের বিরুদ্ধে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিয়ে লন্ডন থেকে সম্প্রতি তারেক রহমান ভিডিও বার্তা পাঠানোর পর সরকার তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিতে যাচ্ছে।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর আগে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার হন তিনি।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু  আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘একাধিক মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে তাকে’। বিদেশে অবস্থান করে তারেক রহমান দেশের সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দিচ্ছেন এবং মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়েরের ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।’

আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বিচারাধীন মামলার বিষয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। ‘

অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, ‘তারেক রহমান ফেরারি আসামি হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। তার বিরুদ্ধে দেশে অনেকগুলো মামলা চলছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তার নিজেরই দেশে এসে আইনের মুখোমুখি হওয়া উচিত।’

যদিও বিদেশে অর্থ পাচারের মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ মে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোজাম্মেল হক। এর পর তারেক রহমানকে গ্রেফতারের বিষয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু গত ১৭ নভেম্বর তারেককে নির্দোষ ঘোষণা করে এ মামলার রায়ে ওই পরোয়ানা প্রত্যাহারেরও আদেশ দেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে সরকার এ গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।  এ অবস্থায়ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সুযোগ রয়েছে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।