adhikarস্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান মিথ্যা ও বিকৃত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচারের অভিযোগের মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিচারক একে এম শামসুল আলম এ জার্চ গঠন করেন।

৪ সেপ্টেম্বর তথ্য বিকৃতির অভিযোগে সাধারণ ডায়েরির তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭(১) ও ৫৭(২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ৫০৫(সি)(ডি) ও ৫০৫(এ) ধারায় এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আদালতে দাখিল করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, আসামিরা তাদের পরিচালনাধীন ‘অধিকার’ এর নামে গত ৫ মে শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে মর্মে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে। এর ফলে দেশ-বিদেশে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হয়।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, ৫ মে দিবাগত রাত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেফাজতকর্মীদের শাপলা চত্বর ত্যাগ করতে অনুরোধ করে। কিন্তু তারা শাপলা চত্বর ত্যাগ না করে পুলিশের উপর হামলা করে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা ও কয়েকজনকে আহত করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অধিকারের ৬১ জনের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর ক্রমিক সংখ্যা ১০ নেই। অর্থাৎ ৯ এর পর ১১ দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই ব্যক্তিকে দু’বার করে দেখানো হয়েছে ৫টি ক্ষেত্রে। যেমন ক্রমিক ৭ ও ৯, ১৬ ও ৫৮, ১৮ ও ২০, ৬ ও ২১ এবং ২৩ ও ৪২।

এছাড়া তালিকার ৩০ নম্বরে আল আমীন, ৩৬ নম্বরে জাহিদুল ইসলাম সৌরভ, ৫৬ নম্বরে জসিম ও ৫৮ নম্বরে সোহেল জীবিত আছেন। ক্রমিক নম্বর ৫৭ কামাল উদ্দিন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ক্রমিক নম্বর ১২ মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, ক্রমিক নম্বর ১৩ লুৎফর রহমান, ক্রমিক নম্বর ২৬ মাওলানা মোহাম্মদ হাসান, ক্রমিক নম্বর ২৯ হাফেজ লোকমান, ক্রমিক নম্বর ৩১ মাওলানা জুবায়ের, ক্রমিক নম্বর ৩৫ বাবু গাজী, ক্রমিক নম্বর ৬০ জালাল আহম্মেদ এই ৭ জন সম্পর্কে প্রদত্ত তথ্য সঠিক নয়।

এছাড়াও ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৬ জন এবং ১১ জন জীবিত কিংবা মৃত এ সম্পর্কে কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। কাল্পনিকভাবে এদের নাম তালিকার সন্নিবেশিত করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ক্রমিক নম্বর ১ এ বর্ণিত সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন পুলিশের রিকুইজিশান করা বাসের ড্রাইভার, তাকে গত ৫ মে হেফাজতকর্মীরা আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করে। তারা বাসটি ভাঙচুর ও ক্ষতি সাধন করে। এ ব্যাপারে জনৈক সাইবুদ্দিন বাদী হয়ে পল্টন থানায় একটি মামলা রুজু করেন।

ওই রাত্রে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথাও প্রতিবেদনে অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে সিটি করপোরেশন ওই এলাকায় বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি। বরং হেফাজতকর্মীদের তাণ্ডবে রাস্তার বৈদ্যুতিক পোস্ট ও তার ধ্বংসের কারণে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

অধিকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ছবি সমন্ধে বলা হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মৃত দেহের ছবি সংগ্রহ করে প্রযুক্তির মাধ্যমে তা একত্রিত করে প্রকাশ করেছে অধিকার।

উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম টিম তথ্যপ্রযুক্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আদিলুর রহমান খানকে তার গুলশানের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।