আ’লীগস্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: চাপ নেই৷ জোরগলায় এ কথা বললেও, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের উপর ঘরে-বাইরে চাপ কিন্তু উত্তরোত্তর বাড়ছে৷ মঙ্গলবার রাজনৈতিক হিংসায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত পাঁচ জন মারা গিয়েছেন৷ তার উপর আমেরিকা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে, যে ভাবে বাংলাদেশে ভোট হয়েছে, তাতে তারা মোটেই সন্ত্তষ্ট নয়৷ এই অবস্থায় বিরোধীদলের একের পর এক শীর্ষ নেতাকে পুলিশ আটক করায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে৷

ভোটে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার সকাল থেকেই বাংলাদেশের বিরোধী নেতাদের ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ৷ এদিন ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকের পর আটক করা হয় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তথা বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার মাহবুব হোসেনকে৷

আটক হয়েছেন বিএনপি-র চিফ হুইপ জয়নাল আবেদিন ফারুখ৷ আটক করা হয় বিএনপি-র প্রাক্তন সাংসদ নাজিমউদ্দিন আহমেদ এবং দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা ফজলুল হক মিলনকেও৷ সন্ধেয় আটক করা হয়েছে দলের সহ-সভাপতি সেলিমা রহমানকে৷ এ ছাড়াও আটকের তালিকায় ছোট-মেজো নেতারা তো রয়েইছেন৷

সকাল থেকেই অশান্তির আবহ ছিল৷ দলীয় নেতাদের আটকের খবর ছড়াতে রীতিমতো মারমুখী হয়ে ওঠেন বিএনপি কর্মী-সমর্থকরা৷ পুলিশ এবং আওয়ামি লিগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় বিরোধীরা৷ এমনই একটি সংঘর্ষে তিন জন মারা যান৷ আহত হন কমপক্ষে ১০ জন৷ সোমবারের সংঘর্ষে আহত এক জামাত-কর্মী এবং আওয়ামি লিগের যুব সংগঠনের এক কর্মী এদিন মারা গিয়েছেন৷

হাসিনার উপর চাপ বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহল৷ সোমবারই নির্বাচন নিয়ে সরব হয়েছিল ব্রিটেন৷ মঙ্গলবার মুখ খুলল আমেরিকা৷ মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেছেন, ‘অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে শাসকদল৷ বাকি আসনে নামমাত্র বিরোধী প্রার্থী ছিলেন৷ এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনমত সঠিক ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি না৷’

তাঁর সংযোজন, ‘এবার দেখার, এই সরকার কী করে৷ আমরা চাই, সব দলকে আলোচনার টেবিলে এনে সরকার আর একটি যথাযথ, শান্তিপূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের দিকে যাক৷’ রাষ্ট্রপঞ্জের মহাসচিব বান কি-মুন বলেছেন, ‘নির্বাচন ঘিরে প্রাণহানিতে আমি মর্মাহত৷ আমি দু’দলকেই বলব, সদর্থক আলোচনায় বসুন৷ সুসংহত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে সাধারণ মানুষের যা আশা, তা পূরণ করুন৷’

হাসিনার উপর চাপ বাড়ছে ঘরেও৷ এদিনই প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করেছেন হাসিনা৷ সরকার গঠন ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে৷ জানা গিয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট৷ তাঁর প্রেস সচিব এহসানুল করিম জানিয়েছেন, ভোট-পরবর্তী হিংসা রুখতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন হাসিনা৷ নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করার পর সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে করিম জানিয়েছেন৷

এর মধ্যেই দলীয় নেতাদের ধরপাকড়ের প্রতিবাদে আজ, বুধবার সন্ধে ৬টা পর্যন্ত হরতালের মেয়াদ বাড়িয়েছে বিএনপি৷ বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমি আবার আহ্বান জানাচ্ছি, এই সরকার সরে দাঁড়াক৷ এ ভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করবেন না৷ বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতায় এসে নতুন করে ভোট হোক৷ দেশের মানুষ এই নির্বাচন খারিজ করেছেন৷’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশও (টিআইবি) হাসিনার অস্বস্তি বাড়িয়েছে৷ এদিন এক বিবৃতিতে টিআইবি-র ডিরেক্টর ইফতেকারউজ্জামান বলেছেন, ‘নির্বাচনে হিংসার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে৷ যা হচ্ছে, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিকৃষ্টতম উদাহরণ৷ সেনা-সহ অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতিতে এমন ঘটনায় আমরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ৷’ সুত্র: ইন্ডিয়া টাইমস