রংপুররংপুর প্রতিনিধি: তীব্র শীত আর হিমেল হাওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কোন মানুষ। এ অঞ্চলে তীব্র শীতে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুও কাবু হয়ে পড়েছে। যে কারণে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছ।
শীত আর হিমেল হাওয়ায় রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৫ দিনে শিশু ও বৃদ্ধসহ রংপুরে মারা গেছে ২২ জন। গত চারদিন থেকে সূর্যের দেখা নেই। শীতবস্ত্রের অভাবে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতের কারণে ঘর থেকে বের হতে না পারায় খেটে খাওয়া মানুষ তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪০ হাজার কম্বল চেয়ে ফ্যাক্স বার্তা পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রংপুরে এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রংপুরের তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সকালে ও রাতে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। বিকালের পর থেকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়তে থাকে। শীতের সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া।

তিস্তা নদী তীরবর্তী নীলফামারীর ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা ও গাইবান্ধা জেলার নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের মানুষজন নিদারুণ কষ্টে শীত পাড় করছে।

বুধবার রংপুরে সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। প্রচ- ঠান্ডায় ঘরের বাইরে যেতে না পারায় রাস্তা-ঘাট ও হাট-বাজার ছিল অনেকটাই ফাঁকা। মাঠেও কাজ করার সাহস পায়নি কৃষি শ্রমিকরা। শীতের কারণে স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শীতজনিত রোগে গত এক সপ্তাহে মারা গেছে শিশু ও বৃদ্ধসহ ২২ জন। এদের মধ্যে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দুদিন বয়সি শিশু বাবু, কুড়িগ্রামের দেড় বছরের শিশু তাহের, কাউনিয়ার ৭ মাস বয়সি ময়না, নগরীর বাহার কাছনার ১৩দিনের শিশু বাবু। ভুরুঙ্গামারী বাসুরকুটি’র বাবু (১দিন), ফুলবাড়ীর হাসি (১দিন), বড়ভিটার বেবি (১দিন) ও খড়িবাড়ীর বেবী (১দিন), সদরের ভোগডাঙ্গার বাবুল (৪দিন) ও টাপুর চরের সানিয়া (২দিন) এবং চিলমারীর শাহজামাল (১৩দিন), নিয়ামত (৫২)। পীরগাছা উপজেলার শিবদেব চর গ্রামের আব্দুল কাইযুম (৬৫), চর তাম্বুলপুর গ্রামের আয়নাল হক (৫৮) ও কান্দি ইউনিয়নের দাদন গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন (৮৫)। এছাড়াও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ।

এ বছর শীতের কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন আয়ের পরিবারের লোকজন তা কিনতে পাড়ছে না। তারা শীত নিবারণের জন্য চট গায়ে দিয়ে খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, প্রতিদিন এ হাসপাতালে গড়ে ৮-১০ জন রোগী মারা যায়। আগে থেকেই সতর্ক থাকার কারণে এবার শীতজনিত রোগে মৃত্যুর হার অনেক কম। তবে শীতজনিত রোগ শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগ নিয়ে শিশু ও বৃদ্ধরা ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আতিকুর রহমান জানায়, বুধবার রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে তিনি জানান।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, শৈত্যপ্রবাহসহ এ পর্যন্ত জেলায় শীতার্তদের মাঝে ৬ হাজার ৭০০ পিচ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। ৪০ হাজার শীতবস্ত্রের জন্য ঢাকায় আবেদন করা হয়েছে দুইবার। কিন্তু এখনও শীতবস্ত্র মেলেনি। –