জাপাআহসান আমীন, ঢাকা: জাতীয় পার্টির নাটকীয়তা শেষ হচ্ছে না। এরশাদ একের পর এক নানা নাটক দেখিয়েছেন জাতিকে। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর প্রথম শপথ না নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করলেও এখন তিনি শুক্রবার শপথ নিচ্ছেন। এরশাদের এই নাটকীয়তা নিয়ে খোদ ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়ছেন জাপার তৃর্নমুল নেতাকর্মীরা।

তেমনি নির্বাচনের শুরু থেকেই নানারকম স্ববিরোধী আচরণ ও নাটকীয়তা দেখিয়ে যাচ্ছে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও তার জাতীয় পার্টি। নির্বাচন শেষে শুরু হতে যাচ্ছে জাপা নাটকের নতুন পর্ব। মন্ত্রিসভায় থাকবে, আবার বিরোধীদলের ভূমিকাও পালন করবে এমন ঘোষণা দিয়ে এ নাটকের সূত্রপাত করেছেন দলটির নেতারা।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার এসএটিভিতে নঈম নিজামের উপস্থাপনায় কাজী ফিরোজ রশীদের বক্তব্য শুনে হতাশ হয়ে পড়ছেন জাপার তর্নমুল নেতাকর্মীরা। ফলে শীর্ষ নেতাদের কর্মকান্ডে জাপার মধ্যে ক্ষোভের আগুন তৃর্নমুলে ছড়িয়ে পড়ছে।

অন্যদিকে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া না নেওয়া ইস্যুতে নতুন মাত্রা যোগ করছেন নাটুকেপনার শিরোমনি এরশাদ। বর্জন করার ঘোষণার পরও স্ত্রী রওশনের নেতৃত্বে তার দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আবার মনোনয়নপত্র  প্রত্যাহারের আবেদন আইনসম্মত নয় দেখিয়ে তাকে নির্বাচনে রেখে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন  এক সংবাদ সম্মেলন দাবি করেন, দলের চেয়ারম্যান এরশাদ এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। অথচ এরশাদ সেই নির্বাচনে জয়ের সুবাদে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন বলে দাবি করছেন দলটির মহাসচিবসহ একাধিক নেতা।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রধান বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা আবার একইসঙ্গে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটি হচ্ছে সোনার পাথর বাটি। সংবিধান অনুসারে এমন দ্বিমুখী ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে কিনা তা আমার জানা নেই।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপিদের শপথের পর দলের তিন প্রভাবশালী নেতা সংসদ ও সরকারে তাদের ভূমিকা বিষয়ে তিন রকম বক্তব্য দিয়েছেন।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এরশাদের নির্দেশেই আমরা নির্বাচনে গিয়েছি এবং জাতীয় সংসদের সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে থাকবো। তবে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

তবে এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমাত্রা যোগ করলেন জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, আমরা মডেল বিরোধীদল হিসেবে থাকতে চাই।

আপনারা বিরোধী দলের ভুমিকায় থেকে কি করে আবার মন্ত্রিসভায় যোগ দেবেন এ কথা জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফিরোজ রশীদ জানান, সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টি থাকবে। কারণ এ সরকার জাতীয় ঐক্যমতের সরকার। তাই আমাদের দলের অনেকেই সরকারের সঙ্গে মন্ত্রীসভাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন এবং রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আমরা বিরোধীদলেও থাকবো। এ ছাড়া পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এ এরশাদের শপত গ্রহণের সময় সম্পর্কেও বিভিন্ন নেতা বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন,পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আগামীকাল শুক্রবার শপথ নিতে পারেন। আবার আরেক প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) বিকালে এরশাদ শপথ নিতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত এদিন তিনি শপথ নেননি।

অন্যদিকে এরশাদ শপথ নেবেন কখন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার দিনক্ষণ উল্লেখ না করে বলেন, তিনি(এরশাদ)খুব শিগগিরই শপথ গ্রহণ করবেন। তিন শীর্ষ নেতার তিন ধরনের বক্তব্য বেশ ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছে।