sekh_hasena_pm_picঢাকা: সারাদেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে।

শুক্রবার সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন। এ সময় প্রতিকৃতির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।

এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দলীয় সভাপতি হিসেবে ফুল দেন শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় বঙ্গন্ধুর প্রতিকৃতিতে।

এর আগে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

দিবসটিতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, সমাবেশ, র‌্যালি, রক্তদান।

বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এতে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

উল্লেখ্য, ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দেশে যখন চলছিল মুক্তিযুদ্ধ তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। দীর্ঘ ১০ মাস পাকিস্তানে নির্জন কারাবাস শেষে ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন জন্মভূমির মাটিতে পা রাখেন বিজয়ীর বেশে। সদ্য বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত গোটা বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে উল্লাসে ফেটে পড়ে। লাখ লাখ বীর বাঙালির শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জাতির চির আকাঙক্ষার স্বাধীনতা আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য গভীর রাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি নিধনে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে। ওই রাতেই বর্বর পাকবাহিনী হাজার হাজার নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বর হামলা চালায়, শুরু করে গণহত্যা। শুধু সেদিন রাতেই ঢাকাসহ সারাদেশে ইয়াহিয়া খানের জংলিবাহিনী কয়েক হাজার মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর ওপর নেমে আসে মৃত্যুর হুমকি।

গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। এর ঠিক আগ মুহূর্তে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। তাকে স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে আসতে বলা হয়। তা নাহলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু বাঙালির অধিকার ছাড়া তিনি কোনো কিছু মানবেন না বলে জানিয়ে দেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেন। পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। এ সরকারের নেতৃত্বেই চলে মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানের নির্জন-অন্ধকার কারাগারে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর বিচার। এতে তার ফাঁসির আদেশ হয়। এমনকি দেয়া হয়নি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও।

কারাগারের যে সেলে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল, সেই সেলের পাশে কবরও খোঁড়া হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি ও প্রহসনের বিচার বন্ধ করতে প্রবল বিশ্বজনমতের চাপের মুখে স্বৈরাচার পাকিস্তানি সরকার ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে সাহস পায়নি।

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, বহু ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনতার প্রকৃত বিজয় অর্জন করে। স্বাধীনতা লাভের পর বিশ্বমানচিত্রে নতুন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি বিজয়ীর বেশে বিশেষ বিমানে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।

স্বয়ং বঙ্গবন্ধু তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে। দিবসটিতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোকেট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।