কামরুজ্জামান সেলিম, চুয়াডাঙ্গা:চুয়াডাঙ্গায় খুন চুয়াডাঙ্গায় গত এক বছরে হত্যার শিকার হয়েছে ২৪ জন। নিহতদের মধ্যে ছয়জন মারা গেছে পারিবারিক নির্যাতনের কারণে, গণপিটুনিতে মারা গেছে পাঁচজন। এছাড়া, বাকিরা প্রতিবেশীর সাথে দ্বন্দ্ব, দলীয় কোন্দল, সন্ত্রাসী হামলাসহ বিভিন্ন কারণে হত্যার শিকার হয়েছে।

২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালের পুরো বছরে চুয়াডাঙ্গায় খুনের সংখ্যা ছিল কিছুটা কম।জানা গেছে, ২২ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ভাণ্ডারদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেফটি ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে একটি গলিত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পুলিশ লাশটি হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

লাশটি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ির আশকার আলীর লাশ ছিল।৩ ফেব্রুয়ারি আলমডাঙ্গার পল্লী রায়সার রেজাউল গাইন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাজলীর ডাকে তার বাড়িতে যান এবং সেই রাতেই তার লাশ গাছে ঝুলানো অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ।
১৬ ফেব্র“য়ারি চুয়াডাঙ্গার কাথুলী-বলেশ্বরপুর সড়কের মধ্যবর্তী স্থান থেকে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় আলমডাঙ্গার তিয়ারবিলার আমিরুল ও হাকিমপুরের তরিকুলের লাশ উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে ওই দু’জন মারা গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।

২০ ফেব্র“য়ারি চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ার হাসান আলীকে হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে জুতোর ফিতে ও বেল্ট দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সাতগাড়ি-কুলচারার মধ্যবর্তী মাঠের নবগঙ্গা খালের ধারের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

১ মার্চ দামুড়হুদার উজিরপুরে ওয়াজ মাহফিল চলার সময় ভোজালির উপর্যুপরি আঘাতে খুন হয় কলেজছাত্র ইব্রাহিম। উজিরপুর মোল্লাপাড়ার সাইদার রহমানের ছেলে ইব্রাহিম গ্রামেই কাসেমুল উলুম কওমিয়া মাদ্রাসায় ওয়াজ শুনতে যাওয়ার পরে তাকে খুন করা হয়। এই ঘটনায় তার সাথে থাকা প্রতিবেশী শহিদুল ইসলামের ছেলে স্কুলছাত্র সোহেলকেও গুরুতর জখম করা হয়।

৮ মার্চ ঝিনাইদহর হরিণাকুণ্ডু উপজেলার নারায়ণকান্দি গ্রামের কৃষক কলম আলীকে সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করে। ধাপগাড়ি মাঠের গমক্ষেতে তার রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে মাঠের কৃষকেরা হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।

১৮ মার্চ চুয়াডাঙ্গা ছাত্রলীগের কনক আহমদ টুটুলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও লাঠিপেটা করে হত্যা করা হয়। চুয়াডাঙ্গা মহিলা কলেজের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। টুটুল চুয়াডাঙ্গা পোস্ট অফিস পাড়ার আমজাদ হোসেনের ছেলে এবং টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিলো।

২৫ মার্চ আলমডাঙ্গার ডাউকি উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের এক দিনমজুরের স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে আর্জিনা খাতুন শিল্পীকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। গ্রাম সংলগ্ন জি কে সেচখালের অদূরবর্তী ভিটের মাঠের ভাঙা পানবরজের খুঁটিতে বেঁধে রাখা তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে গ্রামবাসী পুলিশে খবর দেয়।

৯ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার মর্তুজাপুর মাঠে চাচাতো ভাই হিল্লালের কোদালের আঘাতে বিল্লাল প্রাণ হারায়। মর্তুজাপুর গ্রামসংলগ্ন গনের গুড়ের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

২৯ মে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরু চুরি করে ট্রাকযোগে পালানোর সময় গণপিটুনিতে গরুচোর বাবু নিহত হয়। জনতার ধাওয়ার মুখে কার্পাসডাঙ্গা-দামুড়হুদা সড়কের নাপিতখালী নামকস্থানে ট্রাকটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ সময় হাতেনাতে চারজন ধরা পড়লে তিনজন পালিয়ে যায় তাদের এবং গণপিটুনিতে নিহত হয় বাবু। বাবু চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের চিহ্নিত গরুচোর।

৫ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গার ঝোড়াঘাটা গ্রামে গরু চুরি করে পালানোর সময় দুই চোর গণপিটুনিতে নিহত হয়। নিহতরা হলেন দামুড়হুদা এলাকার খাঁ পাড়ার হানু এবং মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়ার মিরা।

৮ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা শহরের আরামপাড়ায় মিলন নামের এক যুবককে জবাই করে খুন করে দুর্বৃত্তরা। নিহত মিলন চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজপাড়ার শরীফ মণ্ডলের ছেলে।একই দিনে জীবননগর উপজেলার মেদিনীপুর গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে চাচাতো ভাইয়ের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন আব্দুল আজিজ। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। আজিজ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ঘুগরী গ্রামের মৃত উজ্জ্বত আলীর ছেলে।

১৩ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুতুবপুর মাঠে পাশ্ববর্তী হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ফতেপুর গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে সাহেব আলী রাসেলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সদর থানা পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। রাসেল ছিল চরমপন্থী দলের সদস্য।

১৫ সেপ্টেম্বর দামুড়হুদা উপজেলার কলাবাড়ির বিল্লাল হোসেনের ছেলে শাহাবুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করে দুর্বৃত্তরা। রামনগর-কলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অদূরবর্তী গোপালপুর গ্রামসংলগ্ন আটলাচর মাঠের রাস্তার পাশ থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

২৬ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উপজেলার আকন্দবাড়িয়ায় শরিকি জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে চাচার লাঠির আঘাতে ভাতিজা লিপু মারা যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

৪ নভেম্বর দামুড়হুদার উজিরপুরে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশীদের লাঠির আঘাতে পঁচা বিশ্বাস মারা যান। ১৬ নভেম্বর দামুড়হুদার পীরপুরকুল্লা গ্রামের বৃদ্ধ সার্থক মণ্ডলকে থাপ্পড় মেরে হত্যা করে প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম। জমির ধান কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শহিদুল সার্থককে থাপ্পড় মারলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

১৭ নভেম্বর জীবননগর উপজেলার কয়া গ্রামে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে শরীফ উদ্দিন খুন হন। কয়া গ্রামের স্কুলমাঠে এ ঘটনা ঘটে। শরীফ উদ্দিন একই গ্রামের লতিফের ছেলে।

১ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গা বণ্ডবিলের একটি আমবাগাম থেকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের নান্টুর স্ত্রী রোজিনা খাতুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণ শেষে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

৮ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গার পারলক্ষ্মীপুর গ্রামে নেশাখোর পিতা নেশার টাকা না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে তার শিশু সন্তান নয়নকে চৌকির সাথে আছড়ে হত্যা করে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য।

৯ ডিসেম্বর দামুড়হুদার দলকা-বিলপাড় থেকে পোতারপাড়া গ্রামের শামসুল মালিতার ছেলে মিনারুল ইসলাম মালিতা ও আলমডাঙ্গার শিবপুর গ্রামের শাকের আলীর ছেলে হাবিবুর রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা দুজনই চরমপন্থী দলের সদস্য ছিল।

পুলিশের ধারণা দলীয় কোন্দলের কারণে প্রতিপক্ষ তাদের খুন করে থাকতে পারে।  সর্বশেষ, ১৪ ডিসেম্বর দামুড়হুদার দর্শনার মদনায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাই-ভাতিজার হাতে খুন হন শামসুদ্দিনের ছেলে আবুল কাশেম।