ঢাকা: নতুন মন্ত্রীদের শপথ পাঠএই প্রথমবারের মতো এমন সরকার গঠিত হলো, যেখানে সংসদে নির্বাচিত সব দলের নেতা সরকারের অংশ হচ্ছেন। দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে যে দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে, সেই দলের কয়েক নেতা একই সঙ্গে সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন।

নতুন মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির তিন নেতা আজ রোববার মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এর আগের দিন সংসদ সচিবালয়ের যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ১৪ দলের মহাজোটের শরীক এই দলকে বিরোধী দল আর দলটির জৌষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থনেই সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সেই সরকারে দলটির এক নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এতে ওই নেতাকে দলটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু একই সঙ্গে দলীয় সিদ্ধান্তেই বিরোধী দলে থেকে আবার সরকারের অংশ হিসেবে ভূমিকা পালনের মতো দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে এবারই প্রথম।

সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আসন ভাগাভাগির ভিত্তিতেই এবারের নির্বাচনটি হয়েছে। তাই জাতীয় পার্টিকে মন্ত্রিসভায় স্থান না দিয়ে সরকারের উপায় ছিল না। প্রকৃত নির্বাচন হলে নিশ্চয়ই জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচিত হতো না। নির্বাচটি হয়েছে বিচ্যুত প্রক্রিয়ায়। প্রকৃত অর্থে এখানে কোনো বিরোধী দল নেই।’

আকবর আলি খানের মতে, ‘দেশের বেশিরভাগ আসনেই নির্বাচন হয়নি। যেসব আসনে নির্বাচন হয়েছে, সেখানেও সব দলের অংশ ছাড়া নির্বাচন হয়েছে। ফলে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আর এর ফলেই জাতীয় পার্টির একই সঙ্গে সরকারি আর বিরোধী দলে থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য এইচ টি ইমাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবেই ভূমিকা রাখতে চেয়েছে। তাদের আগ্রহের কারণেই দলটির কয়েক নেতাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতিবেশি অনেক দেশে এ রকম দৃষ্টান্ত আছে। বাংলাদেশে এ ধরণের সরকার প্রথম হলেও এটি একেবারে নতুন ধরণের পদ্ধতি, তা বলা যাবে না।’

সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদিন মালিক বলেন, ‘এরকম দৃষ্টান্ত আর কোথাও আছে বলে জানা নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে অন্য কোনো দেশে এরকম উদ্ভট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে তো মনে পড়ছে না। সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধিতে বিরোধী দলের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে যে, সংসদে সরকারের বাইরে যে বড় দল সরকারের বিরোধিতা করবে, সেটিই বিরোধী দল। এখন সরকারে থেকে কীভাবে সরকারের বিরোধিতা করা যাবে, সেটি তো বুঝতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় যে সিদ্ধান্ত হবে, জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরাও তো সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হবেন। তাদেরই একটি অংশ যদি আবার সংসদে এসে এর বিরোধিতা করেন, তাহলে তো একই সঙ্গে পক্ষে থাকা, বিপক্ষে থাকার মতো উদ্ভট একটা ব্যাপার হবে।’

এর আগে জাতীয় পার্টির জৌষ্ঠ নেতা কাজি ফিরোজ রশিদ বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেন, ‘সরকারে থেকেই তারা বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবেন। যা তার ভাষায়, গঠনমূলক বিরোধিতা করবে। দেশে যখন কোনো সংকট তৈরি হয়, তখন সবাইকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করা ভালো।’