বেনাপোল:দেশের বৃহৎ স্থলবন্দবেনাপোল_স্থলবন্দরর বেনাপোল দিয়ে রফতানি বানিজ্য মুখ থুবরে পড়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে রফতানি বানিজ্য অর্ধেকে নেমে এসেছে।

২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এই বন্দর দিয়ে রফতানি হয়েছিল এক হাজার ৪৫৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৩৪ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন পন্য।

আর চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে রফতানি হয়েছে ৮৪৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকার এক লাখ ২৭ হাজার ৭৩২ দশমিক ৮৯ টন পন্য।

এ সময় কম রফতানি হয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার ১০১ দশমিক ৭৯ টন পন্য। আমদানিকারক ও কাস্টম কর্মকর্তারা বলছেন দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় পন্য নিয়ে বন্দর এলাকায় প্রবেশ করা যচ্ছেনা।

এছাড়া ডলার ও রুপির দরপতন ঘটায় ভারতীয় আমদানিকারকরা পন্য নেয়া কমিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে ব্যহত হয়েছে রফতানি কার্যক্রম।
বেনাপোল কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই মাসে বেনাপোল দিয়ে রফতানি হয়েছিল ১৭৪ কোটি ২৪ লাখ টাকার ২৬ হাজার ১৬৩ মেট্রিক টন পন্য, আগের বছর এই সময়ে রফতানি হয়েছিল ২৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকার ৫০ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৬ মেট্রিক টন, আগষ্টে রফতানি করা হয় ১০১ কোটি ১১ লাখ টাকার ১৩ হাজার ২১১ দশমিক ১৬ মেট্রিক টন পন্য, আগের বছর একই সময়ে হয়েছিল ১৮৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকার  ৩৪ হাজার ১৫৯ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন পণ্য, সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি করা হয় ১৬৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকার ২৩ হাজার ৩১৫ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন পণ্য,

আগের বছর হয়েছিল ২৭১ কোটি ৫ লাখ টাকার ৫০ হাজার ১৮৪ দশমিক ৭৭ মেট্রিক টন পণ্য, অক্টোবরে রফতানি করা হয় ১২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার ১৯ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন পণ্য, আগের বছর এসময় হয়েছিল ২২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ৩৭ হাজার ৩৭১ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন পণ্য, নভেম্বর মাসে রফতানি হয় ১৩৪ কোটি টাকার ২১ হাজার ৮৫৫ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন,

আগের বছর একই সময় হয়েছিল ২৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকার ৫৫ হাজার ৬৫৭ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন এবং ডিসেম্বর মাসে রফতানি করা হয় ১৪৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার ২৩ হাজার ৫৯০ দশমিক ৮৯ মেট্রিক টন পণ্য, আগের অর্থবছরের একই মাসে রফতানি হয়েছিল ২৬৯ কোটি ৮ লাখ টাকার ৪৭ হাজার ৭৮১ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন পণ্য।বেনাপোল কাস্টমের যুগ্ম কমিশনার আতিকুর রহমান জানান,

মূলত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেনাপোল দিয়ে রফতানি কমে গেছে। কেননা রফতানিকারকরা হরতাল, অবরোধ হলে গাড়ি সংকটে পড়েন। তারা পন্য নিয়ে বন্দরে বেশিরভাগ সময় পৌঁছাতে পারেন না। আর হরতাল , অবরোধে গাড়ি পেলেও তার ভাড়া শুনেছি দ্বিগুণ দেয়া লাগে।

যেকারণে রফতানি বর্তমানে কম হচ্ছে। এছাড়া ভারতে রুপির দরপতনও রফতানি কমার আরেকটি কারণ বলে তিনি জানান।বেনাপোল আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মহাসিন মিলন বলেন, মূলত দেশে রাজনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় রফতানি আশংকাজনকহারে কমে গেছে।

রফতানিকারকরা পন্য ভারতে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত থাকলেও ট্রাক সংকটে তারা রফতানি করতে পারছেনা। এঅবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে বেনাপোল রফতানি শূন্য হয়ে পড়বে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিশেনের সিনিয়র সহসভাপতি নূরুজ্জামান জানান, বেনাপোল দিয়ে পাটজাত পন্য ও গামেন্টস পন্য বেশি রফতানি হয়ে থাকে। কিন্তু টানা হরতাল আর অবরোধ চলার কারণে রফতানিকারকরা পন্য সময়মত রফতানি করতে পারছেনা।
এব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, ডলার ও রুপির দরপতন রফতানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। কেননা রুপির দরপতন হলে ভারতীয় আমদানিকারকরা এদেশ থেকে পন্য কমিয়ে দিয়ে থাকেন। রুপির দরপতন হলে তাদের লোকসান হবার ভয়ে তারা বাংলাদেশ থেকে পন্য নেয়া কমিয়ে দেন।

এছাড়া দেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণেও রফতানিতে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় ট্রাক সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে রফতানিকারকরা পন্য নিয়ে বেনাপোলে আসতে পারছেনা।