স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,ঢাকা: ভোটগ্রহণ চলছেগোলযোগের কারণে স্থগিত থাকা ছয় জেলার সাতটি সংসদীয়  প্রায় চারশ’ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে।

শীত আর কুয়াশায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয় বলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানান।

যে সব আসনে পুনঃভোট হচ্ছে, সেগুলো হলো- দিনাজপুর-৪, বগুড়া-৭, গাইবান্ধা ১, ৩, ৪, যশোর-৫ ও লক্ষ্মীপুর-১।

গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের দিন সংঘাত, ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ, ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের কারণে এই কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ আটকে গিয়েছিল।

সেদিন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ফল স্থগিত হলেও আদালতের এক আদেশের কারণে বৃহস্পতিবার ওই আসনের স্থগিত কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না।

পুনঃভোটে গোলযোগ এড়াতে যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, যদিও এরই মধ্যে ভোটের দিন বগুড়া-৪ আসনে (গাবতলী) হরতাল ডেকেছে দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটকারী বিএনপি।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ইতোমধ্যে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। সংসদের প্রথম অধিবেশনও আগামী ২৯ জানুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে।হামলা, নাশকতায় আটটি আসনের ৩৯২ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করেছিল ইসি।

এর মধ্যে কুড়িগ্রামের স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্র বাদে বাকি কেন্দ্রগুলোতে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলছে।নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা প্রতিটি উপজেলা, ৫/১০টি কেন্দ্রকে ঘিরে টহলে থাকছে।

সিইসি কাজী রকিব ভোটের আগের দিন সাংবাদিকদের বলেন, “স্থগিত ৭ আসনে পুনঃভোট শান্তিপূর্ণ হওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বাত্মক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।“আশা করি, ভোটে ৫ জানুয়ারির সহিংসতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। আমরা চাই, ভোটাররাও চায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।”

যে সব আসনে ভোট

দিনাজপুর-৪: এই আসনের ১২০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৭টিতে ভোট স্থগিত হয়। এসব কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯১৯। বাকি কেন্দ্রগুলোয় ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৬৮ লাখ ৮৮, ওয়ার্কার্স পার্টির এনামুল হক সরকার ১ হাজার ৩৮০ ভোট পেয়েছেন।

গাইবান্ধা-১: এই আসনের ১০৯টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত হয়েছে ৫৪টির ভোট। এসব কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২০৯টি। বাকি কেন্দ্রগুলোর ফলাফলে আওয়ামী লীগের মনজুরুল ইসলাম লিটন ৬৮ হাজার ৯৯৩ ভোট এবং জাতীয় পার্টির আব্দুল কাদের খান ৮ হাজার ৩৮৬ ভোট পেয়েছেন।

গাইবান্ধা-৩: এই আসনে ৮০টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত রয়েছে, যাতে ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৬২৭ জন। ঘোষিত ৫০ কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের ইউনুস আলী সরকার ৭০ হাজার ৬৬৪ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম খাদেমুল ইসলাম খুদি ১২ হাজার ৭৮১ ভোট পেয়েছেন।

গাইবান্ধা-৪: এই আসনের ১৩০টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত রয়েছে ৭২টির ভোট। এতে ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৭৭ জন। ঘোষিত কেন্দ্রগুলোর ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ৫৯ হাজার ৮৬২ এবং আওয়ামী লীগের মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ১৮ হাজার ৮০৬ ভোট পেয়েছেন।

বগুড়া-৭: এই আসনের ১৬১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৬টি কেন্দ্রে পুনঃভোট হচ্ছে। এতে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৬৫ ভোটার রয়েছেন।জাতীয় পার্টির মুহম্মদ আলতাফ আলী ৭ হাজার ৪৩ ভোট এবং জেপির এটিএম আমিনুল ইসলাম ৩ হাজার ১৭৫ ভোট নিয়ে লড়বেন।

যশোর-৫: এই আসনের ১২২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬০টি কেন্দ্রে পুনঃভোট হচ্ছে। ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৬ জন। ঘোষিত ফলাফলে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান ৩০ হাজার ৫৩১ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন ভট্টচার্য্য ১৮ হাজার ৩৩১ ভোট পেয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর-১: এই আসনের ৮১টি কেন্দ্রের মধ্যে পুনঃভোট হবে ২১টিতে।  এগুলোতে ভোট রয়েছে ৫০ হাজার ২৭৯টি। ঘোষিত ফলাফলে নৌকা প্রতীকে তরীকত ফেডারেশনের এম এ আউয়াল পেয়েছেন ৩২ হাজার ৫৭ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ২০ হাজার ৯১১ ভোট।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ১০৬ কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত দুটি কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ৭ হাজার ২৫৭টি। দুই কেন্দ্র বাদে জেপির রুহুল আমিন ৩০ হাজার ৫৪৪ এবং আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন ২৩ হাজার ৯৪৬ ভোট পেয়েছেন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরো কয়েকটি কেন্দ্রে পুনঃভোট চেয়ে আদালতে গেছেন।

সিইসি বলেন, “কুড়িগ্রামের নির্বাচন আদালতের আদেশেই বন্ধ থাকবে। আবার যথাসময়ে ভোটগ্রহণ করা হবে।”

এই পর্যন্ত ঘোষিত চূড়ান্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগ ২২৯, জাতীয় পার্টি ৩৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, জেপি ১, তরীকত ১, বিএনএফ ১ ও স্বতন্ত্র ১৪টি আসন পেয়েছে।