রুহুল আমীন, ঢাকা: সংখ্যালঘুদের ওgoltebil_alochona_picপর নির্যাতন ও হামলা একটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং তা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এমনই মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সন্ত্রাস-সহিংসতা রুখে দাঁড়াও: রাষ্ট্রিক ও নাগরিক করণীয়’ শীর্ষক বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী,

চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল মান্নান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, কামাল লোহানী প্রমূখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই অনুপম রায় তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। দাবিগুলো হল:

১. অবিলম্বে এই হামলা বন্ধ ও দোষীদের সর্বোচ্চ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

২. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন রুখতে কঠোর আইন প্রণয়ন পূর্বক প্রয়োজনে বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক মানবতাবিরোধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে

৩. নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনায় ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘এই ধরণের সহিংসতা রোধ করতে সবচেয়ে প্রধান দায়িত্ব সরকারের। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’

তিনি এসময় নতুন সরকারের কাছে আবেদন করেন, দ্রুত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন বন্ধের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং যারা এধরণের কাজ করেছে, তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিধ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল মান্নান বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন প্রসঙ্গটাই আমাদের জন্য লজ্জার। সরকারের মূল দায়িত্ব, তার নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়া।’

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ পুরোটা এখনো গড়ে ওঠে নি। আমরা এখনো বাংলাদেশ পাই নাই। আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে, দেশের প্রতিটা মানুষ যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে তা নিশ্চিত করা। তরুণ প্রজন্মকে অনুরোধ করবো, তোমরা এটা নিশ্চিত করতে চিন্তা কর, কাজ কর। এখন আমাদের অত্যন্ত দুঃসময়।’

এসময় বক্তারা বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরতে পঞ্চদশ সংশোধনীর সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশ বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরতে পারেনি। সংবিধানে এখনো ধর্মীয় ব্যাপারটা সাংঘর্ষিক রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার তানিয়া আমির বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধান ধরলে হৃদয়ে ব্যথা লাগে। এখানে বাহাত্তরের সংবিধানের নামে আমাদেরকে কাটছাঁট করা হয়েছে। আমরা অসাম্প্রদায়িক হতে পারিনি।’

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ তাঁর বক্তব্যে অবিলম্বে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে সংবিধান সংশোধনসহ তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এক, অবিলম্বে সংবিধান সংশোধন করতে হবে; দুই, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িক নীতিমালা তৈরি করতে হবে এবং তিন, ধর্মীয় অপরাধ আইন প্রণয়ন করে ধর্মীয় অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে এই মুহূর্তে।’

কামাল লোহানি বলেন, ‘একাত্তরে আমরা সবগুলো পশু হত্যা করতে পারিনি বলেই দেশে এখন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন চলছে।’

অ্যারোমা দত্ত এ বিষয়ে বলেন, ‘কোটা পদ্ধতিতে সরকারের সকল ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সংখ্যালঘুদের নিয়োগ দিতে হবে, তাহলেই হয়তো একটা সুস্থিত পরিবেশের দিকে এগিয়ে যাবো আমরা। আমরা হিন্দু না, আমরা মুসলিম না, আমরা বাঙালি হতে চাই। এবং আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে একারণেই।

অনুষ্ঠানে বক্তারা সম্পূর্ণভাবে বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরত যাওয়া এবং কঠোর আইন করে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের জন্য নিজ নিজ বক্তব্যে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। এসময় তাঁরা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের খবর সাহসিকতার সাথে জনতার সামনে আনার জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান।

উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশে সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের উপর দমন-পীড়ন চরম আকার ধারণ করে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা, যশোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনের দিন থেকেই সাম্প্রদায়িক হামলায় সংখ্যালঘুরা আতঙ্ক ও আশঙ্কার মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকে নিজ এলাকা থেকে প্রাণ ভয়ে সরে গেছে।