BBDস্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: গুরুতর ও পদ্ধতিগতভাবে মানবাধিকার নীতিসমূহ লঙ্ঘন  করছে বাংলাদেশ, ইউরোপীয় কমিশনের এমন একটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পোশাক খাতকে সঙ্কটে ফেলে দিতে পারে। ইউরোপীয় বাজারে দেশের পোশাক খাতের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) প্রত্যাহার করে নেয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য নিউ এইজ এ ডেভিড বার্গম্যানের লেখা ‘ইইউ ডিসিশন মে ট্রিগার জিএসপি উয়িদড্রয়াল’ লেখাতে বিষয়টি উঠে এসেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য বিষয়ক মুখপাত্র জন ক্ল্যান্সি ইংরেজি এ দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রক্রিয়া শুরু“ করা হলেও, কোন সাময়িক  স্থগিতাদেশ কার্যকর হতে কমপক্ষে ১ বছর সময় লাগবে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রসমূহে ৯২০ কোটি ইউরো বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ২ লাখ ৩৯ হাজার ১০ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করেছিল। বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা যদি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়, ভবিষ্যতে রপ্তানিকারকদের এসব পণ্যের জন্য প্রায় ১৪ শতাংশ অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশের ‘পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলছিলেন, যদি কোন একটি অর্থনৈতিক হাতিয়ার বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, সেটা পোশাক খাত। এটা হারালে, বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

ইইউ’র বাণিজ্য বিষয়ক এ মুখপাত্র বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের পরই জিএসপি সুবিধা সাময়িকভাবে ¯’গিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। ইইউ একটি নোটিশ জারির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি  শুরু  করবে। নোটিশ দেয়ার তারিখটি থেকে কমিশন পরবর্তী ৬ মাস সেই জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশটির অবস্থান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে। এ সময়ের মধ্যে কমিশন দেশটির অবস্থান পর্যালোচনা করবে, যার অর্থ তদন্তের সময় কোন  স্থগিতাদেশ জারি করা হবে না।

অনুসন্ধানের পর যদি ইউরোপীয় কমিশন মনে করে, বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত যথাযথ হবে, তখনই তারা এ ব্যাপারে নির্দেশ দেবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও ইইউ কাউন্সিল সাময়িক নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। যদি এ প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে বিপক্ষে অবস্থান না নেয় এবং এ অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে, সেক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের পদক্ষেপটি ৬ মাসের মধ্যে কার্যকর হবে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের বেঁধে দেয়া শর্ত অনুসরণে ব্যর্থ হয়েছে ও হিউম্যান রাইটস কমিটির কাছে কোন রিপোর্ট পাঠায়নি।

বার্গম্যান আরও লিখেছেন, বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের ৪ দিন পর গত ৯ই জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ক্যাথেরিন অ্যাশটন একটি বিবৃতি প্রদান করেছিলেন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন’ আয়োজনের পরিস্তিতি না থাকার বিষয়টি ইঙ্গিত করে যে, ‘বাংলাদেশের জনগণকে তাদের গণতান্ত্রিক ইচ্ছা তথা পছন্দ পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশের সুযোগ দেয়া হয়নি।

তিনি সরকারকে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। নতুন করে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ইইউ’র কিভাবে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত, সে ব্যাপারে কর্মকর্তারা বলছেন সবকিছুই বিবেচনার আওতায় রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। তবে, কর্মকর্তারা সতর্ক করে এটাও বলেছেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ব্রাসেলসের ইইউ সদরদপ্তরে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এতো তাড়াহুড়ো করা উচিত হবে না।

ইইউ’র জিএসপি নীতি অনুযায়ী, গুরুতর ও পদ্ধতিগত নীতি লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটলে আমদানিশুল্কের ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ সুবিধা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হতে পারে। ‘ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’ কনভেনশনের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোন প্রকার অযৌক্তিক বাধানিষেধ ছাড়া প্রত্যেক নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার ও সুযোগ থাকতে হবে। এতে ভোটারদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিতের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস কমিটির প্রকাশিত একটি ‘জেনারেল কমেন্ট’এ বলা হয়েছে, ভোটের অধিকার জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে নির্বাচতি গণতান্ত্রিক সরকারের মধ্যে নিহিত।

পার্লামেন্ট বা সংসদ সদস্যদের জন্য স্বচ্ছ জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই নির্বাচন আয়োজন অপরিহার্য বলে তাতে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে সরকারের কর্তৃত্বও জনগণের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলনের ওপর নির্ভর করে। গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের তথ্যসমূহ এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

ওই কনভেনশনের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কাউকে আইন-বহির্ভূতভাবে গ্রেপ্তার করা যাবে না বা নিরাপত্তা হেফাজতে আটকে রাখা যাবে না। বিরোধী দলের ২৫ জন নেতা এখনও জেলে রয়েছেন। গত ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই এক মাসেই বিরোধী দলের ১০০০ সমর্থককে আটকে রাখা হয়েছিল।