ফখরুল-ইসলাম-আলমগীরমান্না আতোয়ার, ঢাকা: নানা জল্পনা কল্পনার অতঃপর মাইনাস ফর্মূলায় পড়তে যাচ্ছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মির্জা ফখরুলের কর্মকান্ডে স্বয় তারেক রহমান সহ বিএনপি’র তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অখুশি বলে দলীয় বিশেষ সুত্রে জানা যায়। আর এ কারনে খুব শিগ্ররিই মাইনাস হতে যাচ্ছেন ফখরুল।

তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেনে আন্দালনে সর্বসময় মাঠে থাকা বিএনপি’র তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। শুধু তৃর্ণমূলের নেতাকর্মীরাই নয়, বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান স্বয়ং তারেক রহমানও তার চলমান কর্মকান্ডের উপর ক্ষুদ্ধ হয়েছেন।

মির্জা ফখরুল যে মাইনাস ফর্মূলায় পড়ে গেছেন এ নিয়ে হিসেব নিকাশ ইতিমধ্যে নেতা কর্মীরা কষে ফেলেছেন। নেতাকর্মীরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন বুধবার বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আত্মগোপনে থাকা বিএনপি’র প্রায় সকল নেতারা।

তবে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সেখানে দেখা যায়নি। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি অসুস্থ নাকি পদ থেকে মাইনাস হচ্ছেন, এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মধ্যে।

মির্জা ফখরুলের কর্মকান্ডে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বেশ ক্ষুব্ধ। নির্বাচনের কয়েক দিন পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্কাইপেতে এক ভিডিও কনফারেন্সে তারেক রহমান মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভের কথা জানান।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিরের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে খালেদার প্রতি অনুরোধ জানান তার বড় ছেলে তারেক। হয়তবা তারেকের কথায় গুরুত্ব দিয়ে খালেদা জিয়া বুধবারে হোটেল ওয়েষ্টিনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে ডাকেনি। এতেই নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন অচিরেই মহাসচিব পদ থেকে ফখরুল ছিটকে পড়ছেন।

গুরুত্বপূর্ণ এ সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল কেন উপস্থিত ছিলেন না, তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। দলের অনেকেই বলেছেন, দলের ভেতরের চাপে থাকার কারণে তিনি সামনে আসছেন না। আবার অনেকে বলেছেন, শিগগিরই তাকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই তিনি নেতাকর্মীদের সামনে আসছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলামকে নিয়ে দলের মধ্যে এক ধরণের অস্বস্তি রয়েছে। বিশেষ করে তারেক রহমান এবং শমসের মবিন চৌধুরীর ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর অনেকেই তার ওপর আস্থা হারিয়েছেন। তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সদস্য সংবাদ সম্মেলনের পর আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়নি। উনি কি শারীরিকভাবে সুস্থ না অসুস্থ ঠিক বলতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘সুস্থ থেকেও তিনি যদি অনুষ্ঠানে না আসেন তবে কর্মীরা তা ভালোভাবে নেবে না।’ বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন না। তিনি কেন আসেননি বা কোথায় আছেন তাও জানি না।’

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুলের উপস্থিত না থাকায় কর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতান আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ম্যাডামের নির্দেশে মহাসচিব তার দায়িত্ব পালন করছেন। ম্যাডাম যাদের দাওয়াত দিয়েছেন তারাই ওখানে গিয়েছেন। এটা ম্যাডামের অনুষ্ঠান। গতকাল রাতে ৪ ঘণ্টা ধরে তিনি (ফখরুল) ম্যাডামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।’

কর্মীদের হতাশা প্রসঙ্গে শিরিন সুলতানা বলেন, ‘ম্যাডাম ওয়েস্টিন হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় কর্মীরা ম্যাডামকে বলেছেন, যারা বেঈমানী করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। ম্যাডাম তাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকর, বেগম সারোয়ারি রহমান, নজরুল ইসলাম খান, উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে রিয়াজ রহমান, ড. এম ওসমান ফারুক, অধ্যাপক এম এ মান্নান, আব্দুল মান্নান,

সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, এম আব্দুল কাইয়ুম, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শমসের মবিন চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন, আব্দুল লতিফ জনি, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জোট নেতাদের মধ্যে এলডিপির সভাপতি ড. অলি আহমেদ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি, বিজেপির সভাপতি আন্দালিভ রহমান পার্থ, বাংলাদেশ পিপলস লীগের মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব হোসেন, জামায়াতের ডা. রোদোয়ান উল্লাহ শাহেদি, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তজা, ইসলামিক পার্টির আবদুল মবিন, ন্যাপ ভাসানীর শেখ আনোয়ারুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তবে জনাকীর্ণ এই সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে দেখা না গেলেও তাদের সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে শোনা যায়নি। অন্যদিকে বার্ধক্যজনিত কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি এম শামসুল ইসলাম।

জোট নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির সভাপতি আব্দুল মবিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নিলু উপস্থিত না থাকলেও এদের নিয়ে কারো মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি।