jongieeদেশ প্রতিক্ষণ, ডেক্স: ইসলামের দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে ইসলামী বিদ্যাপীঠগুলো থেকে জঙ্গিবাদ প্রজননের কোনো নজির নেই। ইসলাম মানুষকে উগ্রতা নয়, বিনয় শেখায়। প্রাণহানি নয় প্রাণরক্ষার তাগিদ দেয়। এরশাদ হচ্ছে, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সঙ্গে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।’ (সূরা ফোরকান : ৬৩)।

ইসলামী শিক্ষায় যে যত বেশি সমৃদ্ধ সে তত বেশি উন্নত মানবীয় বৈশিষ্ট্যে ম-িত, অপরের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন ও যতœবান এবং মানবদরদি ও মানবহৈতষী।

অথচ ইসলামবিরোধীরা ইসলামকে কলঙ্কিত করতে, ইসলাম প্রচারক ও সত্যিকার ইসলামপন্থীদের বিতর্কিত করতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করছে। তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কিছু বিপথগামী মুসলিম তরুণকে বেছে নিয়েছে। তাদের দিয়ে জঙ্গিবাদের বিভিন্ন কর্মকা- ঘটাচ্ছে, এসব মুসলিম তরুণ না বুঝেই তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে।

ইসলামের নামে যারা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের জানা উচিত, মুসলমানের পরিচয় কী? মুসলমানের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’ (বোখারি : ১০)।

ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পথ অনুসরণ করে যারা দেশে ফেতনা-ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করছে, তারা স্পষ্টই ভ্রান্ত পথের অনুসারী। বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এসব লোক সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি অনুগ্রহ করো, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অুনগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা ক্বাসাস : ৭৭)। ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর এতে বিপর্যয় ঘটাবে না।’ (সূরা আরাফ : ৫৬)।

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে কোনো রকম ফেতনা-ফ্যাসাদ তথা অরাজকতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অশান্তি সৃষ্টি, নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও বোমাবাজি করে আতঙ্ক সৃষ্টি ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

ইসলামের আবির্ভাব ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য নয়; আবির্ভাব হয়েছে মানবতার কল্যাণের জন্য। এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বাছাই করা হয়েছে, মানবতার কল্যাণের জন্য।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)।

জনমনে আতঙ্ক বা ভীতি সৃষ্টি হতে পারে, ইসলাম এ ধরনের কোনো কর্ম বা আচরণ করতেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর না জুলুম করতে পারে, না তাকে অসহায় অবস্থায় পরিত্যাগ করতে পারে আর না তাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে পারে।তিনি নিজের বুকের দিকে ইশারা করে বলেন, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে। কেউ নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছজ্ঞান করবে। প্রত্যেক মুসলমানের জীবন, ধনসম্পদ ও মানসম্মান প্রত্যেকের সম্মানের বস্তু। এর ওপর হস্তক্ষেপ করা হারাম।’ (মুসলিম : ৬৭০৬)।

মানবজীবনের নিরাপত্তার প্রতি ইসলাম যতটা গুরুত্ব দিয়েছে অন্য কোনো ধর্মে বা মতাদর্শে এর নজির নেই। ইসলাম হত্যাকা-কে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। নিরপরাধ জনগণকে গুলি করে, বোমা মেরে, জবাই করে, অগ্নিসংযোগ করে হত্যা করা ইসলামের আদর্শ নয়। পবিত্র কোরআনে তাই একজন মানুষের হত্যাকে পুরো মানবজাতির হত্যা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ‘নরহত্যা বা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করা হেতু ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণরক্ষা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষের প্রাণরক্ষা করল।’ (সূরা মায়েদা : ৩২)। ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সূরা নিসা : ৯৩)।

ইসলামে শুধু মানুষের নিরাপত্তা নয়, রয়েছে সব প্রাণীর পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন নারীকে বিড়ালের কারণে দোজখের শাস্তি প্রদান করা হয়। কারণ সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। এমনকি শেষ পর্যন্ত বিড়ালটি না খেয়ে মারা যায়।’ (বোখারি : ৩২৫৯)।

আবার একটি কুকুরের প্রাণ বাঁচানোর জন্য ব্যভিচারী নারী হয়েও জান্নাতে যাবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একদা একটি কুকুর চারিদিকে ঘুরছিল। কুকুরটি পিপাসায় মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এমন সময় বনি ইসরাঈলের এক ব্যভিচারী নারী তাকে দেখতে পেল। সে নিজের মোজা খুলে কুয়া থেকে পানি তুলে কুকুরটিকে পান করাল এবং এ জন্য তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো।’ (বোখারি : ৩২৮০)।

ইসলামের শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার এরই মধ্যে খুতবার মাধ্যমে সঠিক ইসলাম প্রচারের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জঙ্গিবাদের করাল গ্রাস থেকে সমাজকে বাঁচাতে চাইলে সমাজের তরুণদের ইসলামের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা এখন সময়ের দাবি।
অন্যথায় তাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নিয়োজিত করতে পারে। এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা দুনিয়াবাসীর ওপর দয়া করো, আসমানের বাসিন্দা তোমাদের ওপর দয়া করবেন।’ (তিরমিজি : ১৯২৪)। ‘পরস্পরের প্রতি ক্রোধ পোষণ করো না, হিংসা পোষণ করো না, শত্রুতা পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না, বরং আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকো।’ (বোখারি : ৫৭১৮)।