fari-gatদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ঈদে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা ও কোরবানির পশু পরিবহনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। কিন্তু এ রুটের চারটি ফেরিঘাটের মধ্যে দুটি বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দৌলতদিয়ার ৩নং ফেরিঘাটটি পদ্মায় বিলীন হয়। চালু হয় রাত পৌনে ৮টার দিকে। ঘাটটি সারারাত চলার পর শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে আবারো ভেঙে যায়।

বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারে দৌলতদিয়ার সবকটি ঘাট সচল হয়েছে। এতে একযোগে হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস ও কোরবানির গরুবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন নদীর পাড়ের আশায় দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে আসতে শুরু করে।

এতে দৌলতদিয়া ঘাটে অন্তত ১০ কিলোমিটার জুড়ে যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে শুক্রবার বিকালে যানজট কমে প্রায় ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত ২/৩ সারিতে বিস্তৃত ছিল।

বেশ কিছুদিন ধরে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে দৌলতদিয়ার ফেরি ঘাটগুলো একের পর এক নদীতে বিলীন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ ফেরি ঘাটগুলো মেরামত করা হলেও তা খুব বেশি সময় স্থায়ী হচ্ছে না।

ফেরি পারাপার যাত্রীবাহী বাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে আটকে থাকায় অনেকেই লঞ্চ পারাপার বাসে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু তারা পড়েছেন আরও বেশি ভোগান্তিতে। এ সমস্ত পরিবহনের যাত্রীদের ঘাট থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে মহাসড়কে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে এ দীর্ঘপথ বোঝা-ব্যাগ নিয়ে পায়ে হেঁটে ঘাটে পৌঁছাতে হচ্ছে।

ফরিদপুর থেকে লঞ্চ পারাপার বাসে আসা যাত্রী খালেদা বেগম (৩০) বলেন, ঘাট পর্যন্ত বাস আসার কথা থাকলেও দীর্ঘ যানজটের কারণে তাদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ব্যাগ, বোঝা ও বাচ্চাদেরকে বয়ে যেতে হচ্ছে ঘাটে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চ পারাপার সাউদিয়া পরিবহনের যাত্রী সরাফত আলী বলেন, ফেরিতে দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে লঞ্চ পারাপার বাসে রওনা দিয়েছি। কিন্তু লঞ্চে পার হয়ে এসে দুই ঘণ্টা হলো দাঁড়িয়ে আছি। বাসের কোনো খবর নেই।

সাউদিয়া পরিবহনের সুপারভাইজার জিয়াউর রহমান বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে যথাসময়ে আমাদের বাস তৈরি থাকার কথা ছিল। কিন্তু মহাসড়কে দীর্ঘ সিরিয়ালের কারণে বাসটি যথা সময়ে পৌঁছাতে পারেনি।

ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সূর্যমুখী পরিবহনের চালক মনির হোসেন জানান, ভোর ৬টায় ছেড়ে এসে সাড়ে ৬টার দিকে তিনি গোয়ালন্দ জমিদার ব্রিজ এলাকায় সিরিয়ালে আটকা পড়েন। দুপুর গড়িয়ে গেলেও তিনি ফেরি ঘাটে পৌঁছাতে পারেননি।

বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ১৭টি গরু বোঝাই ট্রাকচালক আজিম মণ্ডল বলেন, সকাল ৬টায় ঘাটে এসেছি। দুপুর ৩টা বাজলেও এখনো ঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রয়েছি। কখন ফেরিতে উঠতে পারবো কেউ বলতে পারছে না।

গরুর সঙ্গে থাকা রাখাল নজরুল ইসলাম বলেন, সারাদিন রোদে থেকে কয়েকটি গরু অসুস্থ হয়ে গেছে। তারা কয়েকজন হাত পাখা দিয়ে গরুগুলোকে অনবরত বাতাস দিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত কয়েক দিন লঞ্চ পারাপার বাসগুলো টার্মিনাল পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি দিলেও আজ দেয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, সিরিয়াল ফোর লেন সড়ক ছাড়িয়ে চলে গেছে। ওখান থেকে লঞ্চ পারাপার বাস প্রবেশের অনুমতি দিলে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়ে ফেরি থেকে আনলোড হওয়া যানবাহনগুলো স্বাভাবিকভাবে বের হতে পারবে না।

স্থানীয় বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া অফিস সূত্র জানায়, সবকটি ঘাট অনেকটা নামমাত্র চালু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ২নং ফেরিঘাটটি চালুর পর তীব্র স্রোতের কারণে সেখানে ফেরি ভেড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ৩ নং ফেরি ঘাটটি ফের শুক্রবার দুপুর ১২টায় নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। ৪ নং ফেরি ঘাটেরও দুটি পকেট দিয়ে যানবাহন উঠা-নামা করতে পারছে। ফলে কার্যত মাত্র দু’টি ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

বিআইডব্লিটিএ’র আরিচা অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ দৌলতদিয়ার সবকটি ঘাট চালু রাখতে তাদের কর্মীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রকৃতির কাছে তারা অসহায় হয়ে পড়ছেন। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেও ঘাট স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। ঘাট ক্রমান্বয়ে ভাঙ্গছে এবং পন্টুন পিছানো হচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ এ সময় ঘাট পরিস্থিতি সরেজমিন তদারকি করছেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক জিনাত আরা, পুলিশ সুপার জিহাদুল কবিরসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।  তারা জানান, প্রাকৃতিক সমস্যার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে কারো কোনো হাত নেই।

দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিসি’র ম্যানেজার সফিকুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রুটে ১৬টি ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে গরুবাহী ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। এতে যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য যানবাহন সিরিয়ালে আটকা পড়ছে।