pm-lagoপ্রশান্ত কুন্ডু, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আগামী বছরই দেশে ফোর-জি ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে ‘দেশের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল মেলা ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬’র আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা জানান।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, মোবাইল ফোন কলের একচেটিয়া ব্যবসা ভেঙ্গে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা সরকার গঠন করে মানুষকে উন্নত জীবনদানের প্রতিজ্ঞা করি। তারই অংশ হিসেবে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির প্রবাহ আরও বাড়িয়ে দিতে আগামী বছরই দেশে ফোর-জি ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ফোন করলেও ১০ টাকা, ধরলেও ১০ টাকা; মোবাইল কলের সেই একচেটিয়া ব্যবসা আমরা ভেঙ্গে দেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা পেশ করি। জনগণের বিপুল ম্যানডেট নিয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর বিএনপি-জামায়াতের রেখে যাওয়া সর্বোচ্চ লুটপাটের চিত্র মুছে ফেলে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করি।

এ সময় তিনি সাইবার নিরাপত্তার জন্য সবাইকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের ৭৮ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে এই সুবিধা পৌঁছে দিতে সচেষ্ট সরকার।

‘বাড়ি বসে বড়লোক’ কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছেন নারীরা। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি উপার্জনের পথ সুগম করতে ‘বাড়ি বসে বড়লোক’ কর্মসূচির আওতায় ১৪ হাজার ৭৫০ জনকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, তরুণরা যেনো আউটসোর্সিংয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৫৫ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ২০ হাজার জনকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নারীদের জন্য আরও সহজ করতে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পের আওতায় আইসিটি ডিভিশন, রবি ও হুয়াওয়ে’র যৌথভাবে মোবাইল বাসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেবে। ডিজিটাল ওর্য়াল্ড ২০১৬’এ প্রধানমন্ত্রী ৫টি মোবাইল বাসের উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে আগামী তিন বছরে আড়াই লাখ গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত নারীরা প্রশিক্ষণ পাবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিসহ সারাদেশে ২০টির মতো হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ভিলেজ গড়ে তোলা হয়েছে। যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে এ বছর থেকেই পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে। কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারে শুরু হয়েছে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের অপারেশন। ছেলে-মেয়েদের হাতে-কলমে কারিগরি শিক্ষা দিতে গড়ে তোলা হয়েছে আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার।

দুর্নীতি মোকাবেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে তিনি বলেন, সরকারি সেবা পেতে এখন আর মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয় না। লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম জমা দিতে হয় না। এক সময় হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে ঘুষ বাণিজ্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছিলো- তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বচ্ছতা এনে আমরা তা বন্ধ করেছি। অনলাইন টেন্ডারের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আর্থিক খাত ও গোপনীয় বিষয়ের নিরাপত্তা যাতে কোনোভাবেই বিঘিœত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে যাতে কেউ অপরাধ কার্যক্রম চালাতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৬ প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর আওতায় বাংলাদেশে বিশ্বমানের ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব, সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি গঠন, সাইবার এভিডেন্স রেসপন্স টিম প্রতিষ্ঠা ও উচ্চ পর্যায়ের ডিজিটাল সিকিউরিটি কাউন্সিল গঠনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

উদ্ভাবকদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইসিটি খাতে গবেষণার জন্য ফেলোশিপ ও বৃত্তি প্রদান এবং উদ্ভাবনীমূলক কাজের জন্য অনুদান নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ এই শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছি।
উদ্ভাবনী কর্মকা-কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এবং আইটি স্টার্ট আপ উদ্যোগকে সম্প্রসারণ করতে ইনোভেশন ডিজাইন এন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আউটসোর্সিংয়ে দক্ষতা বাড়াতে ‘লানিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পের আওতায় আরও ৫৫ হাজার তরুণ-তরুণীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে ২০ হাজার জনকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এ সময় উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সারা বিশ্বের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ই-গভর্নেন্স এখন মডেলে রুপান্তরিত হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সময় ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭১টি ফাইলে সই করার কথাও স্মরণ করেন তিনি।

তিনি বলেন, দেশে প্রতি বছর ৫০ হাজার তরুণ-তরুণী আইসিটি প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। ৫ হাজার শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। আইটি রফতানির জন্য সরকার ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ দিয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, দেশেই আজ বিশ্বমানের আইসিটি এক্সপার্ট কাজ করছেন। ২০২১ সালের মধ্যে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী আইসিটি খাতে কাজ করবেন। তাদের হাত দিয়েই আসবে ৫ বিলিয়ন ডলার আইসিটি রফতানি আয়। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই, এগিয়ে চলেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইসিটি হবে হাতিয়ার- এ প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি।

বেসিসের সভাপতি মোস্তফা জব্বার বললেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়ন আমরা দেশের সন্তানরাই করতে পারবে। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে সব শিশুর হাতেই কম্পিউটার তুলে দেওয়ার, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাতেই কম্পিউটার ও আইসিটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর।

ডিজিটাল বিষয়ক নতুনত্ব ও অভিনত্ব বিষয়ে ধারণা ও জ্ঞান বিনিময়ের জন্য ৩ দিনের এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এবং এটুআই কর্মসূচি যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করছে।

সরকারি আইসিটি সেক্টরের নীতিনির্ধারকরাসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন মেলায়। এতে আইসিটি-সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্মেলনে সাতটি দেশের ৭ জন মন্ত্রী যোগ দেবেন। ৪৩টি বিশ্ব বিখ্যাত আইসিটি কোম্পানি, ২০০ আইটি বিষয়ক বক্তা মেলায় অংশগ্রহণ করবেন।

বিশ্বের নামকরা আইসিটি কোম্পানির মধ্যে মাইক্রোসফট, ফেসবুক, বিশ্বব্যাংক, জেডটিই, হুয়াই কোম্পানি মেলায় অংশগ্রহণ করবে। ভিশন-২০২১ কে সামনে রখে মেলায় ১২ সেমিনার, আলোচনা সভা ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আইটি ক্যারিয়ার মেলা, সফটএক্সপো, মোবাইল এক্সপো, ই-কমার্স ও বিজনেস প্রসেস আউটসোসিং কর্মসূচি থাকবে।