wp_20161220_13_52_58_proবিশেষ প্রতিবেদক : বেহাল দশা রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে মুক্তি মেটার্নিটি ক্লিনিকের। এই ক্লিনিকের মালিক মোশারফ একজন যাদু শিল্পী, বেশ কয়েক বছর ধরেই নানা অনিয়মের মধ্য দিয়েই চলছে মুক্তি মেটার্নিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, আয়া দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এই ক্লিনিক।
সম্প্রতি এক অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায়, মুক্তি মেটার্নিটি ক্লিনিকের অভ্যন্তরীন নানা অনিয়মের চিত্র। মুক্তি মেটার্নিটি ক্লিনিকে কোন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স নেই। নার্সের কাজ পরিচালনা করে বয়স্ক এক আয়া এবং সুরাইয়া নামের এক তরুণী। যাদের না আছে প্রশিক্ষণ না আছে শিক্ষাগত যোগ্যতা। সুরাইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেন, দেখে দেখেই শিখেছেন, এম, আর, ডি এন্ড সি, ইনজেকশন, চেকআপ, অ্যার্ভোর্শন এবং স্যালাইনের কাজ। আর এর শিকার হচ্ছেন অসহায় রোগীরা য়ারা কিনা স্পেশালের তুলনায় তিন গুণ টাকা নিচ্ছে মুক্তি মেটার্নিটি ক্লিনিক। প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা কিন্তু রোগীদের কোন মানি রিসিট দিচ্ছে না। আল্ট্রাসনোগ্রাম করে কোন রিপোর্ট না দিয়েই রিপোর্টের জন্য নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

সরকারী অনুমোদনের কথা জানতে চাইলে মুক্তি মেটার্নিটি ক্লিনিকের এক কর্মী বলেন, অ্যার্ভোর্শন এর জন্য ৬ সপ্তাহ অনুমোদন থাকলেও কতৃপক্ষ ৮,১২,১৪ সপ্তাহ পর্যন্ত অন্তস্বত্ত্বাদের অ্যার্ভোর্শন করে যাচ্ছে নির্বেঘ্নে। এবং হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। চিকিৎসার নামে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে।

এমনি এক ঘটনার স্বীকার নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক রোগী জানান, দু’জন মহিলা ডাক্তার আছেন, একজন ডা: ফেরদৌস আরা অন্যজন ডা: জিনিয়া চৌধুরী। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ঐ ব্যাক্তি বলেন, তিনি সাড়ে তিন সপ্তাহের অন্তস্বত্ত্বা হয়ে মুক্তি মেটার্নিটি ক্লিনিকে জান। গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চাইলে সাথে সাথে ডা: ফেরদৌস আরার কাছে নিয়ে যান। রোগী জানতে চান ক্লিনিকে কিভাবে এম,আর করা হয়। ডা: বলেন, এনেসথিসিয়ার মাধ্যমে করলে কোনো ব্যথা অনুভব হয় না, সাথে সাথে হেটে আপনি বাসায় যেতে পারবেন। তারপর একটি চার্ট দেখান যেখানে বিভিন্ন রেট লেখা আছে। ৬ সপ্তাহের কম হলে এম, আর করা যায় না। রোগী সেটা জানা সত্ত্বেও সুরাইয়া ইউরিন পরীক্ষা করেই বলেন যে, আপনার ৬ সপ্তাহ হয়েছে। রোগী প্রশ্ন করলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাম ছাড়া কিভাবে বললেন ৬ সপ্তাহ হয়েছে? তখন সুরাইয়া বলে যে আমরা বুঝতে পারি আপনার কোন সমস্যা হবেনা। এই বলে ভুল বুঝিয়ে ঐ দিন এম, আর করেন।

এম,আর করার চারদিন পর রোগীর পেটে ও জরায়ুতে অসম্ভব ব্যাথা অনুভব হয়। তখন ক্লিনিকে ফোন করে যোগাযোগ করা হলে ডাক্তার নাই বলে জানান কর্তৃপক্ষ। ডাক্তারের নাম্বার চাইলে কর্তৃপক্ষ নাম্বার না দিয়ে পরদিন ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরদিন ২১শে ডিসেম্বর বিকালে ক্লিনিকে গেলে ডা: জিনিয়া আল্ট্রাসনোগ্রাম করে বলেন জিবানু আছে আবার এম, আর করতে হবে এবং কর্তৃপক্ষ এম,আর করার জন্য পুনরায় চার্জ দাবী করেন। পরে এ নিয়ে ক্লিনিকের মালিকের সঙ্গে রোগী কথা কাটাকাটি হয়। অন্যদিকে রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ তাই বাধ্য হয়ে আবার এম, আর করতে হয়। এই ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা পুরাতন রোগীর মাধ্যমে এ রোগী জানতে পারেন যে, মুক্তি মেটার্নিটি ক্লিনিকে ইচ্ছে করে পুনরায় অর্থ আদায় করার জন্য রোগীদের সাথে এরকম আচারণ করে থাকে।

জানা গেছে, নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ঐ রোগী এখন ঢাকা মিটফোর্ড মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। অদক্ষ ডাক্তার কোন নার্স না থাকায় আয়া দিয়ে সব কার্যসিদ্ধি করছে ৭৩ সিদ্ধেশ্বরী রোডের মুক্তি মেটার্নিটি ক্লিনিক। এখানে কোনো অত্যাধুনিক কোন মেশিন নেই আর বেশির ভাগ রোগীকেই এম, আর, ডি,এন্ড সি, ডেলিভারী ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ঝুঁকিমুক্ত নয়। ফলে এখানে সেবা নিতে আসা রোগীরা নানা রকম ঝুঁকির স্বীকার হচ্ছে। তাই সকলকে সচেতন থাকতে হবে এসব আগাছার মতো বেড়ে ওঠা ক্লিনিক থেকে।