mehendigonj mpদেশ প্রতিক্ষণ, বরিশাল ব্যুরো: দিন যত যাচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের টেনশন। প্রাথমিক অবস্থায় মনোনয়ন যুদ্ধে নেমে ঘাম ঝড়াচ্ছেন নেতারা। ইতিমধ্যে দলের নির্দেশনা না মেনেও অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। শুধু মনোনয়ন সংগ্রহ নয় যথারীতি এলাকায় গনসংযোগ করছেন তারা।

বরিশাল জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে যে কয়টি আসন আলোচিত এবং ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগের জন্য ‘টার্নিং’ পয়েন্ট হয়ে প্রত্যেক নির্বাচনে দাড়ায় তার মধ্যে একটি হচ্ছে বরিশাল ৪ আসন। বিগত নির্বাচনের মত তাই আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা আর বিশ্লেষণের কমতি নেই এই আসনটি ঘিরে। হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ, কাজিরহাট এ তিনটি থানা নিয়ে গঠিত এই আসনে ইতিমধ্যে জমে উঠেছে মনোনয়ন যুদ্ধ।

এমনকি বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ গণসংযোগ করে অপরাপর প্রার্থীদের চেয়ে কেন তিনি যোগ্য তাও প্রচারণা চালাচ্ছেন নিয়মিত। তবে পঙ্কজ দেবনাথকে ঠেকাতে স্থানীয় আ.লীগের আরও কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা একট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন। সেসব নেতারা গণসংযোগ না করলেও কেন্দ্রে লবিং-তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন। কারন পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।

সম্প্রতি জাতীয় প্রেস কাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল-৪ আসনভুক্ত এলাকার ‘নির্যাতন-সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মাদক প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে এসব অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য পঙ্কজ দেবনাথ এলাকায় হত্যা, চোরাচালান, দলীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারি ও নৈরাজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

ponkajমেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সাগর বলেন, ‘পঙ্কজ দেবনাথের খবরদারি, জুলুম, অন্যায় ও অত্যাচারের কারণে এলাকায় দলের জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। দলীয় কোনো নেতাকর্মী তার বিরুদ্ধে গেলেই প্রশাসনের দ্বারা মিথ্যা মামলা দায়ের এবং সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালায়।’

তিনি বলেন, ‘পঙ্কজ দেবনাথের নির্যাতন, সন্ত্রাসী হামলা ও মামলার ভয়ে অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আজ এলাকা ছাড়া। এলাকার যুব সমাজের হাতে তিনি মাদক ও অবৈধ অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে মাদক ও চোরাচালানিদের সুসম্পর্কের কারণে মেহেন্দিগঞ্জের ইলিশা নদী দিয়ে কালীগঞ্জ রুটে মাদক দণিাঞ্চলে ঢোকে।’

সাগর আরা বলেন, ‘পঙ্কজ দেবনাথ এক-এগারোর সময় শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে গ্রেফতার হন। বর্তমানে তার নির্বাচনী এলাকা বরিশাল-৪ আসনসহ রাজধানীর উত্তরা ও ধানমন্ডিতে বিলাসবহুল বাড়ি, অভিজাত এলাকায় নামে-বেনামে একাধিক প্লট, ফ্যাট ও গার্মেন্ট রয়েছে। ভারতেও তার একাধিক বাড়ি ও মার্কেট রয়েছে। তিনি হুন্ডি, মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দেশের বাইরে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন।

হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ ইকবাল মাতুব্বর বলেন, ‘আমাদের দাবি পঙ্কজ দেবনাথের এসব অপকর্ম ও দুর্নীতির যাতে সুষ্ঠু তদন্ত করা হয়। এ ছাড়াও এমন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে যাতে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমরা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।

জানা গেছে, বরিশাল-৪ আসন থেকে আ.লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন ৬ জন। যাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক লায়ন মজিবর রহমান হাওলাদার, মেজর (অব.) মহসিন সিকদার, বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিক-বিন-ইসলাম।

পঙ্কজ দেবনাথের পাশাপাশি মনোনয়ন দৌঁড়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন সাবেক সাংসদ ও জাতীয় নেতা মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদের কন্যা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ। তবে ক্লিন ইমেজের নেত্রী হিসেবে তৃর্নমুল নেতাকর্মীরা শাম্মী আহম্মেদের নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন। আর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক লায়ন মজিবর রহমান হাওলাদার ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিমের নামও আলোচিত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)-এর প্রার্থী আঞ্জুমান সালেহউদ্দিন থেকে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৮৪ ভোট বেশি পেয়ে জয়লাভ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ।

ওদিকে বিএনপিতেও চলছে বাঘে মহিষে লড়াই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকার বিরোধী প্রচারণার চেয়ে নিজ দলের নেতাদের সমালোচনায় মুখোর রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সভা-সমাবেশ করতে না পারলেও গণমাধ্যমের সাথে স্পষ্টতই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন নেতারা।

এই আসনে বিএনপির ১১ জন প্রত্যাশী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছেন, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজীব আহসান,

হিজলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবদুল গাফফার তালুকদার, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম লাবু, হিজলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি দেওয়ার শহিদুল ইসলাম, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল খালেক হাওলাদার, নুরুর রহমান জাহাঙ্গির, কবির উদ্দিন আনছারি।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারের ভাই মিজানুর রহমান অহিদ ও সাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার (অব:) শাখাওয়াত হোসেনর আত্মীয় সোহরাব হোসেন।

এদের মধ্যে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজীব আহসান আলোচনায় রয়েছেন।

আলোচনায় থাকলেও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের পক্ষে স্থানীয় বিএনপি কাজ করায় ধারণা করা হচ্ছে ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানকে পিছনে ফেলে মনোনয়ন পেতে পারেন মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ নুরুল করিম ও গণফোরাম থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন সৈয়দ আব্দুল মান্নান।