hasinaদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আগামী পাঁচ বছর দেশ পরিচালনায় উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আরও পাঁচটি বছর ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন আওয়ামী লীগের।

কারণ, চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ করতে আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়া প্রয়োজন।‘ সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে। ২০২১ সালের ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে। ২০২০-২০২১ এই এক বছর মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। বছরব্যাপী মুজিব বর্ষ পালন করা হবে।

এরপর আমরা উদযাপন করবো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সুবর্ণজয়ন্তী যখন পালন করবো তখন বাংলাদেশ হবে দারিদ্রমুক্ত। তখন বাংলাদেশে কোনও মানুষ গ্রহহারা থাকবে না, ক্ষুধার্ত থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কা জনগণের মার্কা। নৌকা মার্কা দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। নৌকা মার্কা দিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জিত হয়েছে। নৌকা মার্কা আছে বলেই বাংলাদেশে স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এ মার্কার জন্যই বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।’

গত ১০ বছরে সরকারের উন্নয়নের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মহাকাশ জয় করেছে। বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করেছে। ল্যান্ড বাউন্ডারি জয় করেছে। বাংলাদেশের দারিদ্রের হার ২১ ভাগে নেমে এসেছে।

নির্বাচনে জয়ী হলে এই দারিদ্রের হার আগামী পাঁচ বছরে আরও ৫ থেকে ৬ ভাগ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। এই পাঁচ বছরে প্রত্যেক মানুষের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো। বাংলাদেশে হতদরিদ্র বলে কিছু থাকবে না। সেজন্য আমাদের আরও পাঁচটি বছর ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আমি বাঙালির কাছে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই- এই কারণে যাতে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ কেড়ে নিতে না পারে।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের স্বজনদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে হত্যার রাজনীতিবিদদের ভোট চাওয়ার কোনও অধিকার নাই। কীভাবে তারা মনোনয়ন পায় যারা বাংলাদেশই চায়নি। আর তাদের দোসর কারা- যারা তত্ত্ব দিয়ে আনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। আমার তাদের নাম নিতে করুণা হয় কারণ তারা নীতিভ্রস্ট, আদর্শচ্যুত। এরা বাংলাদেশের আদর্শে বিশ্বাস করে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ শিক্ষাকে বহুমুখী করেছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। দেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় এক হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের জন্য আগে হাহাকার ছিল। এখন ঘরে-ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯৩ ভাগ এলাকায় বিদ্যুত দিয়েছি। ১৬ শ মেগাওয়াট থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। গরিব মানুষের সক্ষমতা বেড়েছে। রেলখাতে উন্নতি করা হয়েছে। আগে রেল মন্ত্রণালয় ছিল না। আমরা রেল মন্ত্রণালয় করেছি। নদী পথগুলো খনন করা হয়েছে। রাস্তা-ঘাট,ব্রিজের ব্যাপক উন্নতি করেছি। গৃহহারাদের ঘর দিয়েছি। ভবিষ্যতে এগুলোর আরও উন্নয়নের পরিকল্পনা আমাদের আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বেকার সমস্যা দূর করতে একদিকে যেমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিনা জামানতে যেমন ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি তেমনি বহুমুখী কর্মের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি। কেউ একটু উদ্যোগী হলেই নিজ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে নিজে যেমন উপার্জন করতে পারে তেমনি অন্যকেও চাকরি দিতে পারে সেই ব্যস্থা আমরা গ্রহণ করছি।

তিনি বলেন, দুস্থ মায়েদের জন্য আমরা ভাতার ব্যবস্থা করেছি। স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ডিজিটাল সেন্টার থেকে দুইশ রকমের সেবা পাচ্ছেন জনগণ। অথচ এই ১০ বছরে যে পরিবর্তন আমরা এনেছি তা অনেকের চোখে পড়ে না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনি ইশতেহারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তারা ইশতেহারে ‘ দেশের পরিবর্তন’ আনার কথা উল্লেখ করেছেন। দেশ স্বাধীনতার ৪৭ বছরে ৩৯ বছর তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় ছিল। কি পেয়েছে দেশের মানুষ। মানুষ কিছু না পেলেও বিএনপি-জামায়াত জোটের ভাগ্যের উন্নতি হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের দিকে ঈঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নাকি সরকার গঠন করবে- তো সেই সরকারের প্রধান কে হবেন? সেটা কিন্তু আজ পর্যন্ত জাতির সামনে দেখাতে পারে নাই। প্রশ্ন রেখে যাই, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী? না ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি নাকি যুদ্ধাপরাধে সাজাপ্রাপ্তকে হবেন সরকারপ্রধান সেটা তো স্পষ্ট করে জাতির সামনে জানায়নি। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের জনগণকে।

জনগণের সিদ্ধান্তের ওপর এ সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিলাম। কারণ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমার বিশ্বাস তারা সঠিক জায়গায় ভোট দিতে ভুল করবেন না।