দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৩ কোম্পানি চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফায় বড় চমক দেখিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কো্ম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারে এসব শেয়ার দর অবমূল্যায়িত থাকলেও হঠাৎ করে গত সপ্তাহ থেকে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

ফলে দিন দিন বাড়ছে এসব কোম্পানিগুলোর গড় লেনদেন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো ও মৌল ভিত্তি শেয়ারের দিকে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। হঠাৎ করে বিনিয়োগকারীরা ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে ঝুঁকছেন।

দীর্ঘ সময় পর বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক আচরন করায় বিনিয়োগকারীরা বুঝে-শুনে এখন ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার বিনিয়োগ করছেন। তাছাড়া রাষ্টায়ত্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর অনেক নিচে দামের পড়ে থাকায় এসব শেয়ারের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এদিকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ২২৭টি কোম্পানি জুন ক্লোজিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ১৭০টি প্রতিষ্ঠান। সমাপ্ত প্রান্তিকে মুনাফার উল্লম্ফনের চমক দেখিয়েছে ১৩ টি কোম্পানি। দেশ প্রতিক্ষণের বিশ্লেষণে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বশেষ প্রান্তিকে ১৭০ শতাংশের বেশি মুনাফা বেড়েছে তালিকাভুক্ত ১৩টি কোম্পানির। এসময় সর্বোচ্চ ১২০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা বেড়েছে একটি কোম্পানির। তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফার চমক দেখানোর তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলো হলো-বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি, জিবিবি পাওয়ার, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, এসকে ট্রিমস ইন্ডাস্ট্রিজ, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়াটা কেমিক্যাল, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, আলনিমা ইয়ার্ন, এপেক্স ফুটওয়্যার, ন্যাশনাল ফিড মিলস, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ও ফাইন ফুডস লিমিটেড।

তৃতীয় প্রান্তিকে সর্বোচ্চ ১২০০ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানির। তথ্য-প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিটির মুনাফার উল্লম্ফনের সাথে শেয়ার দরও রয়েছে ইতিবাচক অবস্থানে। মুনাফার উল্লম্ফনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জিবিবি পাওয়ার। গত বছরের একই প্রান্তিকে কোম্পানিটি লোকসানে থাকলেও এবার মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৮২৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস: তৃতীয় প্রান্তিকের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ’১৯) শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.০৪ টাকা। আগের বছর একই সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল ০.০৮ টাকা। অর্থাৎ এসময় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে বা ০.৯৬ টাকা বা ১২০০ শতাংশ।

এদিকে, ৯ মাসে (জুলাই’১৮-মার্চ’১৯) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২.৪৭ টাকা। যা আগের বছরের একই সময় ছিল ০.১৪ টাকা। এসময় শেয়ার প্রতি নগদ কার্যকরী অর্থ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ৫.০২ টাকা ও শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৩৭.৬৬ টাকা।

জিবিবি পাওয়ার: তৃতীয় প্রান্তিকের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ’১৯) শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.২৯ টাকা। আগের বছর একই সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ০.০৪ টাকা। অর্থাৎ এসময় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে বা ০.৩৩ টাকা বা ৮২৫ শতাংশ।

এদিকে, ৯ মাসে (জুলাই’১৮-মার্চ’১৯) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৭৬ টাকা। যা আগের বছরের একই সময় ছিল ০.৫৮ টাকা। এসময় শেয়ার প্রতি নগদ কার্যকরী অর্থ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ০.৪৩ টাকা ও শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ১৯.৮২ টাকা।

সোনারগাঁ টেক্সটাইল: তৃতীয় প্রান্তিকের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ’১৯) শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৫৯ টাকা। আগের বছর একই সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ০.২৭ টাকা। অর্থাৎ এসময় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ৩১৮.২৫ শতাংশ।

এদিকে, ৯ মাসে (জুলাই’১৮-মার্চ’১৯) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৮৮ টাকা। যা আগের বছরের একই সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ১.০২ টাকা। এসময় শেয়ার প্রতি নগদ কার্যকরী অর্থ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ০.০১ টাকা ও শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ২৯.৩৯ টাকা।

নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং: তৃতীয় প্রান্তিকের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ’১৯) শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭.০৩ টাকা। আগের বছর একই সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ৩.৯৩ টাকা। অর্থাৎ এসময় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ৪৩১.৫৫ শতাংশ।

এদিকে, ৯ মাসে (জুলাই’১৮-মার্চ’১৯) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৮.১২ টাকা। আগের বছরের একই সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১০.৩৮ টাকা। এসময় শেয়ার প্রতি নগদ কার্যকরী অর্থ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ৭.২৯ টাকা ও শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৭৫.১৬ টাকা।

এসকে ট্রিমস ইন্ডাস্ট্রিজ: তৃতীয় প্রান্তিকের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ’১৯) শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৭৪ টাকা। আগের বছর একই সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল ০.২১ টাকা। অর্থাৎ এসময় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ০.৫৩ টাকা বা ২৫২.৩৮ শতাংশ।

এদিকে, ৯ মাসে (জুলাই’১৮-মার্চ’১৯) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২.০৫ টাকা। যা আগের বছরের একই সময় ছিল ০.৫৬ টাকা। এসময় শেয়ার প্রতি নগদ কার্যকরী অর্থ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ০.৯৬ টাকা ও শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ১৩.৫৮ টাকা।

এদিকে, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফা বেড়েছে ২৪০ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে লোকসানে ছিল কোম্পানিটি। কিন্তু চলতি অর্থবছরে তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’১৯) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.১৪ টাকা।

এছাড়া সমতা লেদারের মুনাফা বেড়েছে ২৩৫.১৯ শতাংশ, ওয়াটা কেমিক্যালের মুনাফা বেড়েছে ২৩৪.৮৮ শতাংশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের মুনাফা বেড়েছে ২৩৩.৩৩ শতাংশ, আলনিমা ইয়ার্নের মুনাফা বেড়েছে ২১২.৫০ শতাংশ, এপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা বেড়েছে ১৮৯.৪৯ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিড মিলসের মুনাফা বেড়েছে ১৮৮.৮৯ শতাংশ, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে ১৭৫ শতাংশ ও ফাইন ফুডসের মুনাফা বেড়েছে ১৭৩.৬৮ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, চলতি বছরে বেশকিছু লোকসানি কোম্পানি মুনাফায় ফিরেছে। যা পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এতে করে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা ক্যাপিটাল ও ডিভিডেন্ড গেইন উভয় করতে পারবে। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিগুলো অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করে। তাই বিনিয়োগকারীদের সর্তক থেকে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তিনি।