দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে আসতে উচ্চ প্রিমিয়াম নেয়া রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) মুনাফায় ধস নেমেছে। যার প্রভাবে চলতি হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই’২০১৮ থেকে মার্চ’২০১৯) কোম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে।

লেনদেন শুরুর আগে সোমবার ডিএসইকে কোম্পানিটি জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ব্যবসা করে কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে এই মুনাফার পরিমাণ ৭৭ পয়সা।

আগের বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি কর পরবর্তী মুনাফা করে ১১ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ১ টাকা ১৮ পয়সা। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির মোট মুনাফা কমেছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং শেয়ারপ্রতি মুনাফা কমেছে ৪১ পয়সা।

চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের মতো ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের হিসাবেও কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যবসা করে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩ টাকা ৫৮ পয়সা।

অপরদিকে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি মোট মুনাফা করেছিল ৩৪ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ৩ টাকা ৭১ পয়সা। এ হিসাবে আগের বছরের তুলনায় রানার অটোমোবাইলসের মোট মুনাফা কমেছে ১ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে মুনাফা কমেছে ১৩ পয়সা।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করা রানার অটোমোবাইলসের লেনদেন মঙ্গলবার (২১ মে) থেকে শুরু হবে। পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর আগেই কোম্পানিটি আর্থিক অবস্থার এ অবনতির তথ্য প্রকাশ পেল।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের পর লেনদেন শুরুর আগেই একটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থার অবনতি হওয়ার তথ্য প্রকাশ পাওয়া ভালো লক্ষণ নয়। এটি কোম্পানির দুর্বল দিক প্রকাশ করে। আর যে কোম্পানিটি আইপিও অনুমোদনের আগে মোটা অঙ্কের মুনাফা দেখিয়ে উচ্চ প্রিমিয়াম নিল, লেনদেন শুরুর আগে তাদের মুনাফায় ধস সন্দেহজনক।

তারা আরও বলেন, কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির আগে আর্থিক প্রতিবেদন ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখিয়েছে কি না তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) খতিয়ে দেখা উচিত। একই সঙ্গে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটি থেকে কেউ অনৈতিক উপায়ে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখা উচিত।

গবেষণা ও উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ মেটাতে গত বছরের ১০ জুলাই রানার অটোমোবাইলসকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বিএসইসি।

এরমধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনের জন্য রাখা হয় ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার।

কোম্পানিটির শেয়ার পেতে বিডিংয়ে ৫৯২ জন যোগ্য বিনিয়োগকারী অংশ নেন। তারা সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ২৫ টাকার মধ্যে দর প্রস্তাব করেন। এরমধ্যে ৫০ টাকা দরে সবচেয়ে বেশি ১২৩ জন যোগ্য বিনিয়োগকারী দর প্রস্তাব করেন। এই ১২৩ জন বিনিয়োগকারী ২ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার শেয়ার ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকায় কেনার প্রস্তাব দেন।

এরপর ৫৫ টাকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর প্রস্তাব করেন ৭৮ জন এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ জন ৬০ টাকা করে প্রস্তাব দেন। তবে ৭২ ঘণ্টার বিডিংয়ে সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা থেকে ৭৫ টাকার প্রস্তাবিত দরের মধ্যে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ারের প্রস্তাব চলে আসে। যে কারণে বিডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারিত হয় ৭৫ টাকা।

কাট-অফ প্রাইস থেকে ১০ শতাংশ কমে আইপিওর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে আইপিও বিজয়ীদের শেয়ার বুঝিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি এবং পুঁজিবাজারে লেনদেনের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদন নিয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের দেয়া অনুমোদন বলেই মঙ্গলবার থেকে ‘এন’ গ্রুপের আওতায় রানার অটোমোবাইলসের শেয়ার লেনদেন শুরু হবে।