দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দুর্দান্ত এক সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। যার পরতে পরতে ছিল উত্তেজনার ছড়াছড়ি। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে জমজমাট এই ম্যাচে ভারতকে ১৮ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে গেল নিউজিল্যান্ড। এদিন বোলিং সহায়ক উইকেটে ২৩৯ রান সংগ্রহ করে কিউইরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে কিউই বোলারদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় ভারতের টপ ও মিডল অর্ডার। জাদেজা ও ধোনি ছাড়া কোনো ব্যাটসম্যানই এদিন সুবিধা করতে পারেন নি।

৪৯ ওভারে ধোনি রানআউট হয়ে গেলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ভারত। এরপর আর কোনো ব্যাটসম্যানই ভারতীয়দের স্বপ্ন দেখাতে পারেন নি। ভিরাট কোহলির কণ্ঠেও একই সুর। ম্যাচের পর তিনি বলেন, ৪৫ মিনিটের বাজে খেলা টুর্ণামেন্ট থেকে ছিটকে দিয়েছে আমাদের। এদিকে অন্য সব কিছুতে পরস্পরের সহযোগী ও শুভাকাঙ্ক্ষী হলেও দুই দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরেছে, এটা এখন দৃশ্যমান।

বাংলাদেশের হারে ভারতের সমর্থকরা যেভাবে খুশি হয় তেমনি ভারতের হারেও অনেকটাই খুশি হয় বাংলাদেশি সমর্থকরা। বিষয়টির শুরুটা ভারতীয় সমর্থকদের কারণেই হয়েছিল। বিভিন্ন সময় তারা বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক বিজ্ঞাপন ও নানা প্রচারণা চালায়। এরপরই বিষয়টি স্নায়ুযুদ্ধের দিকে গড়ায়।

যে কারণে আজ ভারতের হারে ফেসবুকে বিরাট কোহলিদের নিয়েও ট্রলে মেতেছে বাংলাদেশি সমর্থকরা। হাস্যরসে ভরপুর স্ট্যাটাস, মিমে ভরে গেছে অনেকের ফেসবুক টাইমলাইন।

তার মধ্যে কিছু স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো – সাঈদ আল হাসান লিখেছেন, একি! ইন্ডিয়ার ব্যাটসম্যানরা কোথায় চলে যাচ্ছে? পদ্মাসেতুর জন্য মাথা দিতে নয়তো! গীতিকার ও লেখক ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন, বিদায় ইন্ডিয়া, ধোনির জন্য ভালোবাসা। সে একা ইন্ডিয়াকে যা দিয়েছে, কংগ্রেস, বিজেপি মিলেও তা দিতে পারেনি…

তিনি আরও লিখেছেন, হারের পর ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি, হয়তো এমনটাই ভাবছেন, ওয়ান ডেতে আমরা ভালো ছিলাম, টু ডে ক্রিকেটে এখনো সেই পর্যায়ে যেতে পারিনি… মুজাহিদ শুভ লিখেছেন, সেই ৫৩ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের দুধের ভক্ত আমরা! সেই স্বাদ আজও অবিকল।

আজিম নামের ধূমকেতু লিখেছেন, একজনরে জিগাইলাম “ভাই লাফান কেন বাংলাদেশ জিতছে?” কইলো “ভারত হারছে”

ভারতের হারার কারণ জানিয়ে আরাফাত বিপ্লবের স্যাটায়ার ধর্মী পোস্ট, নিউজিল্যান্ড গরুর দুধের জন্য বিখ্যাত। ভারত গরুর মুত্রের জন্য বিখ্যাত! সেই হিসেবে দুধপানকারীদের কাছে মুত্রপানকারীরা হেরে যাওয়া স্বাভাবিক…

জুয়েল মাহমুদ লিখেছেন , ঈদ মোবারক।ভারতের আকাশে চাঁদ দেখা গেছে।-

সেমিফাইনাল থেকে ভারতের বিদায়ে তার বন্ধুদের খুশি হতে দেখে আলাউদ্দিন আদর লিখেছেন, আচ্ছা, ভারত হারলে জিতে যায় বাংলাদেশ! কিন্তু কেন…? – তাহের টুটন মজা করে লিখেছেন, দাদাদের বিদায়ে কষ্ট পেলাম…

ভারতের হারে সোশ্যাল মিডিয়ায় এতো ট্রল দেখে ক্রিকেটের সঙ্গে ফুটবলকে মিলিয়েছেন মুশফিক, প্রতিবেশী দেশ ভারতকে নিয়ে যারা ট্রল করতে পারে, আর্জেন্টিনা/ব্রাজিল তো তাদের কাছে কিছুইনা!- তারেক আজিজ লিখেছেন, আজকের ক্রিকেট ম্যাচ আর রাত ১২ টায় ঈদের খবর পাওয়া: সমানুপাতিক!

রিফাত লিখেছেন, ধোনি গরীব হয়ে গেছে। আরিফ হোসেন লিখেছেন, বলেছিলাম, ভারত ১ টায় হারবে আর তাতেই বাড়ি, ওদিকে নিউজিল্যান্ড ৩ টায় হেরে ফাইনালে।

এমদাদ হোসেন শরীফ লিখেছেন, ইন্ডিয়ার হারে যতোটা না মন খারাপ ভারতবাসীর তারচেয়ে বেশি মন খারাপ মোড়ল আইসিসির… ভারতের হারে এমন সব ট্রল দেখে ভিন্ন মত দিয়েছেন কাওসার মাহমুদ।

তিনি লিখেছেন, নিজেরা আট নাম্বার হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়ে সেমিফাইনালে কারো ম্যাচ হারা নিয়ে ট্রল করে ফেসবুক ভাসানো জাতি মনে হয় একমাত্র আমরাই! ভারতের হার নিজেদের খুশি প্রকাশ করে এমন সব অগণিত স্ট্যাটাস এখন যে প্রশ্ন তুলেছে, দেশে নিউজিল্যান্ডের এতো সমর্থক হলো কবে !

জবাবটা সবারই জানা, আজ ভারতকে হারানোয় নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশি সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছে দেশে নিউজিল্যান্ডের ভক্ত বেশি। এমনটা ভারতীয়রাও করেছিল। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড খেলায় গ্যালারিতে কিউইদের পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে দেখা গিয়েছিল ভারতীয়দের।