দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার ভালো হবে, বিনিয়োগকারীদের এই প্রত্যাশার ছিটেফোঁটাও পূরণ হচ্ছে না। রবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাসের পর থেকে আবারও নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার পরিবর্তে কোম্পানিগুলো আগামীতে ‘নো ডিভিডেন্ট’ ঘোষণা করবে এমন গুজব এবং ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুরাবস্থার খবরে হতাশা বিরাজ করছে পুঁজিবাজারে। পাশাপাশি সুশাসনের অভাবে বাজারে পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের।

এছাড়াও গ্রামীণফোনের দেনা-পাওনা নিয়ে বিটিআরসি’র সঙ্গে দ্ব›দ্ব এবং পিপলস লিজিং কোম্পানির অবসায়ন ঘোষণায় নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। পুঁজি ফিরে পাওয়ার পরিবর্তে নতুন করে পৌনে ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীদের সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফলে নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। নতুন করে সৃষ্ট দরপতনের ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারও বাড়ছে হাহাকার বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বাজেটে বলা হয়, নগদের পরিবর্তে বোনাস শেয়ার বিতরণের প্রবণতা কোম্পানিসমূহের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ জন্য বাজেটে বোনাস লভ্যাংশের ওপর কোম্পানিগুলোর জন্য ১০ শতাংশ কর ধার্য করা হয়েছে। এতে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ প্রদানে নিরুৎসাহিত হবে। বাজেট পাশের পর ৬ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ৫ কার্যদিবস দরপতন হয়েছে। আর মাত্র একদিন সূচক সামান্য বেড়েছে। এই সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ১৪১ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। আর তাতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৯৪৯ কোটি ৪৫ লাখ ১ হাজার টাকা।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক কমেছে ৪৩৩ পয়েন্ট। ডিএসইর মত একইভাবে লেনদেন ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। আর তাতে বাজার মূলধন ৮ হাজার ৬৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা কমেছে।

লঙ্কা বাংলা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিলে ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এমন নিয়ম করায় নগদ লভ্যাংশ দেবে না বরং ‘নো ডিভিডেন্ট’ লভ্যাংশ ঘোষণা করবে আশঙ্কা করছেন। আর তাতে বিদ্যমান দরপতনকে আরো বেশি ত্বরান্বিত করছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার এখন চোরের বাজারে পরিণত হয়েছে। এখাতে কোন সুশাসন নেই।

কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের অডিট রিপোর্টের তথ্য তুলে ধরে ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, একটি কোম্পানি ভুয়া প্রসপেক্টাস তৈরি করে বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করলো। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠান ও অডিটরের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য চাপ দিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে কোন সুশাসন নেই। এটা আসলে চোরের বাজার। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য গঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, পুঁজিবাজারের উত্থান পতনে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো অবদান ৪০ শতাংশ। স¤প্রতি খেলাপি ও মন্দ ঋণের পাহাড়ে এই খাত শেয়ারের উত্থানের বিপরীতের দরপতনের ভূমিকা রাখছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট বেড়েছে। আর তাতে তারল্য সংকটও বাড়ছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট ও তারল্য সংকটের কারণে বাজারে দরপতন হচ্ছে। বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনা দেওয়া হলেও তারল্য বাড়েনি। বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট কেটে শেয়ারবাজার ভালো হতে সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, বাজেটে রিজার্ভের কর সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা যুগান্তকারী।

তবে শেয়ারবাজারের জন্য যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এগুলো বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে বাজার অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে।